ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কাশিমপুর কারাগারে নারী কেলেঙ্কারি তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে সাপ!

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২১

কাশিমপুর কারাগারে নারী কেলেঙ্কারি তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে সাপ!

শংকর কুমার দে ॥ গাজীপুর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ নারীকে সঙ্গ করে দেয়ার নারী কেলেঙ্কারির ঘটনার তদন্তে ‘কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ’ বেরিয়ে আসছে। কারাগারের ভেতর থেকেই বন্দী তুষার মোবাইল ফোনে ওই নারীর সঙ্গে কথা বলা, মোবাইল ফোনে পরিচয়, প্রেম-পরিণয়, এমনকি মোবাইল ফোনে বিয়ে করার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। এসব ঘটনার ধারাবাহিকতার মধ্যেই বছরের পর বছর ধরে বন্দী তুষার ওই নারীর সঙ্গ দানের ঘটনা এতদিন ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়। কিন্তু বিধি বাম! কথায় বলে না, চোরের দশ দিন, গৃহস্থের একদিন প্রবাদের মতোই সিসিটিভির ফুটেজে এই নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়েছে। তুষার কারা কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই কারাভ্যন্তরে যেই নারীর সঙ্গে সঙ্গ নিতেন সেই নারীর সঙ্গে কথা বলতে চাইছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও খুঁজছে ওই নারীকে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গা ঢাকা দিয়েছে ওই নারী। কিন্তু কে এই নারী, কী তার পরিচয়? ওই নারীর সঙ্গ গ্রহণকারী হলমার্ক কেলেঙ্কারির সাজাপ্রাপ্ত বন্দী তুষার আহমেদকে নারী কেলেঙ্কারির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নতুন জেলার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রীতেশ চাকমা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের ভেতরে হলমার্ক কেলেঙ্কারির সাজাপ্রাপ্ত বন্দী তুষার আহমেদ বলেছেন, তার সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে যাওয়া নারী এক পোশাক ব্যবসায়ী। কারাগারে সময় কাটানোর নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। মোবাইলেই তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। মোবাইলে তাদের বিয়ে হয়। কাশিমপুর কারাগারে বন্দী তুষারের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরেই নারী সঙ্গ দান করে আসছেন ওই নারী। এই নারীর নাম আসমা শেখ সুইটি। রাজধানীর সবুজবাগের তার বাসা। মা এবং ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন সুইটি। তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়ায়। সুইটির বাবা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মুঠোফোনে তুষারের সঙ্গে তার পরিচয়। পরবর্তীতে তারা গোপনে বিয়ে করেন। এক সময় অনলাইন ব্যবসা করতেন সুইটি। অনলাইন ব্যবসা শুরু করার আগে একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন সুইটি। বর্তমানে হাতিরঝিল সংলগ্ন পুলিশ প্লাজা কনকর্ড শপিং সেন্টারের ৪র্থ তলায় রয়েছে তার একটি ফ্যাশন হাউস। বিউটি বাজ নামের এই ফ্যাশন হাউসটি ২০১৯ সালে চালু করেন সুইটি। কাশিমপুর কারাগারের কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়মিত তার ফ্যাশন হাউসে কেনাকাটাও করেন। কাশিমপুর কারাগারের একজন ডেপুটি সস্ত্রীক ওই নারীর ফ্যাশন হাউসে গেলে সম্প্রতি তাদের অর্ধলক্ষাধিক টাকার পোশাক উপঢৌকন হিসেবে দেয়া হয়। এছাড়া কারাগারে মোবাইল ব্যবহারসহ ভিআইপি সুযোগ-সুবিধা পেতে কর্মকর্তাদের নিয়মিত বিপুল অঙ্কের টাকা দিতেন তুষার। মহামারীর মধ্যে কারাবন্দীদের সঙ্গে বাইরের কারও দেখা করার সুযোগ না থাকলেও গত ৬ জানুয়ারি দুপুরে কাশিমপুর কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন এক নারী। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কারা কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় কারাগরের ভেতরে তাদের চলাফেরার দৃশ্য সিটিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম বড় হলমার্ক গ্রুপের আড়াই হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির মামলার অন্যতম আসামি তুষার আহমেদ ২০১২ সালে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর কারাগারে আছেন। আর তুষার গ্রেফতার হওয়ার পর তার প্রথম স্ত্রী নাজনিন সুলতানা মিষ্টি দুই সন্তানকে নিয়ে বিদেশে চলে যান। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন। তবে তুষারের দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের কেউ কিছু জানেন না বলে জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে কারাগারের উর্ধতন একাধিক কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে কারাগারেই একান্তে বহুবার মিলিত হওয়ার সুযোগ পেতেন তারা। কারা কর্তৃপক্ষে কাছে সুইটিকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেছেন তুষার। তুষারের দাবি, বিয়ের আগে সুইটির সঙ্গে কারাগার থেকে মোবাইলে নিয়মিত কথা বলতেন দু’জনে। ফোনেই সুইটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তুষারের। পরবর্তীতে মুঠোফোনে তাদের বিয়ে হয়। তাদের বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হতে একাধিক কারাবন্দীর সাক্ষাতকার নিয়েছে তদন্ত কমিটি। করোনাভাইরাস শুরুর আগে তুষারের সঙ্গে আগে নিয়মিত কাশিমপুর কারাগারে সাক্ষাতে যেতেন সুইটি। করোনার কারণে সম্প্রতি তুলনামূলকভাবে কম যেতেন তিনি। কাশিমপুর কারাগারের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে ওই নারী আত্মগোপনে চলে গেছেন। তার ফ্যাশন হাউসেও আসছেন না। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করছেন না। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন ম্যানেজার মেহেদী। এছাড়া তার পরিবারের সদস্যরাও অপরিচিত কারও ফোন ধরছেন না। সুইটির পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠজনরা বলেছেন, ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছেন সুইটি। সুইটির ঘনিষ্ঠজনরাই ফোন দিয়ে ওইদিনের ঘটনাটির বিষয়ে বলেছে, তাকে টিভিতে দেখাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে স্বামী তুষারের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করছি। কিন্তু হঠাৎ করে কেন ওইদিনের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পেল। এত দিনেও ভিডিও ফুটেজ এবং নথি কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন উদ্দেশ্য বা ষড়যন্ত্র রয়েছে। কারাবন্দী তুষারের প্রথম পক্ষের স্ত্রী এবং দুই সন্তান রয়েছে। ২০১২ সালে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর তুষার আহমেদ কারাগারে থাকায় তার প্রথম স্ত্রী নাজনিন সুলতানা মিষ্টি দুই সন্তানকে নিয়ে মালয়েশিয়ায় চলে যান। প্রথম স্ত্রী এবং তার পরিবারের সদস্যরা তুষারের সঙ্গে সুইটির বিয়ের বিষয়টি জানেন না। সুইটি যে তার দ্বিতীয় স্ত্রী সেটাও জানেন না তুষারের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা। নতুন জেলারের দায়িত্বে ॥ নতুন জেলার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রীতেশ চাকমা। এর আগে তিনি মাগুরা জেলা কারাগারের জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ঘটনায় দু-দফায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-১ এর সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়সহ পাঁচজনকে প্রত্যাহার করা হয়।
×