ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বার্লিন কৃষিমন্ত্রীদের সম্মেলনে ড. আব্দুর রাজ্জাক

বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ২৩ জানুয়ারি ২০২১

বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। কৃষিমন্ত্রী শুক্রবার বিকেলে ‘১৩তম বার্লিন কৃষিমন্ত্রীদের সম্মেলনে’ এ আহ্বান জানান। জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি অব ফুড এ্যান্ড এ্যাগ্রিকালচার (বিএমইএল) এ সম্মেলনের আয়োজন করে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এবার ভার্চুয়ালি কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশের কৃষিমন্ত্রী ও ১৪টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে ছিলেন কৃষি সচিব মোঃ মেসবাহুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত সচিব মোঃ রুহুল আমিন তালুকদার। কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক করোনা মোকাবেলায় কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তার বক্তৃতায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে বিগত এক বছরে বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকার দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সফল হয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বিশ্বের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সেজন্য, উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের পাশে দাঁড়াতে হবে। উন্নয়নশীল দেশের কৃষির উন্নয়ন, এ্যাগ্রো-প্রসেসিং, কৃষিযান্ত্রিকীকরণ ও ফুড ভ্যালু চেন শক্তিশালী করতে উন্নত দেশগুলোকে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে এগিয়ে আসতে হবে। খাদ্য সঙ্কটের ব্যাপারে ‘আগাম কার্যকর সতর্ক ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কটের ব্যাপারে ‘আন্তর্জাতিক কার্যকর সতর্ক ব্যবস্থা’ গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে করে আগেভাগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়। এছাড়া, ফুড সিস্টেম তথা খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত ও মজুদে মনিটরিং ব্যবস্থাকে জোরদার করতেও উন্নত দেশের আরও সহযোগিতা দরকার। কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উন্নয়নশীল দেশের কৃষিতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সেজন্য, জলবায়ু অভিঘাত সহনশীল খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রেও উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জার্মান ফেডারেল মিনিস্টার অব ফুড এ্যান্ড এ্যাগ্রিকালচার জুলিয়া ক্লোকনার। এ ছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক কিউ দোংয়ু, কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিষয়ক ইইউ কমিশনার জানুস্জ উজসিচোস্কি বক্তব্য রাখেন। উল্লেখ্য, জার্মান সরকারের আয়োজনে পাঁচ দিনব্যাপী (১৮-২২ জানুয়ারি) ১৩তম ‘গ্লোবাল ফোরাম ফর ফুড এ্যান্ড এ্যাগ্রিকালচার’ (জিএফএফএ) অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘মহামারী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে কীভাবে বিশ্বকে খাওয়ানো যায়’ শিরোনামে কৃষি-খাদ্য বিষয়ক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এ সম্মেলনে ৯০টির বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা অংশগ্রহণ করেছে। গত পাঁচদিনে বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ একটি ‘যৌথ ইশতেহার’ (কমিউনিক) প্রস্তুত করেছে। ‘কৃষিমন্ত্রীদের কনফারেন্সে’ তিনটি বিষয়কে এবারের ‘যৌথ ঘোষণায়/ইশতেহারে’ গুরুত্ব দিয়ে এক সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। প্রথমটি হচ্ছে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জার্মান কৃষিমন্ত্রী জুলিয়া ক্লোকনার জানান, কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরুর আগেই বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৬৯ কোটি (৬৯০ মিলিয়ন)। শতকরা হিসাবে যা বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় নয়ভাগ। করোনাকালে খাদ্য সরবরাহ ও বাজার স্থিতিশীল থাকলেও অর্থনৈতিক স্থবিরতায় বেকারত্ব ও আয় হারিয়ে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। বিদ্যমান এই বিশাল ক্ষুধার্ত মানুষের সঙ্গে গত এক বছরে আরও ১৩ কোটি ক্ষুধার্ত মুখ নতুন করে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালে পাঁচ বছরের নিচে আরও ৭০ লাখ শিশু ‘চরম অপুষ্টির’ শিকার হয়েছে। দ্বিতীয়টি হলো ভবিষ্যতে মহামারী থেকে দূরে থাকতে ‘ওয়ান হেলথ এপ্রোচ’ গ্রহণ। জানানো হয়, বিগত ৩০ বছরে মানুষের নতুন সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্তের ৭০ শতাংশের উৎস প্রাণী। প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত এসব রোগের বিরুদ্ধে সবাইকে দূরে থাকতে হলে ‘ওয়ান হেলথ এপ্রোচ’ গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়াকে মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। সেজন্য, এবারের সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং প্রাণিস্বাস্থ্যের বিশ্ব সংস্থার মধ্যে সম্পর্ক জোরদার এবং প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বন্য প্রাণীর ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। শেষটি হলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এক সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা।
×