ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ বাইডেনের অভিষেক

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২০ জানুয়ারি ২০২১

প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ বাইডেনের অভিষেক

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের সময় বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে শুরু হবে বাইডেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। অর্থাৎ, বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শপথ নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশের প্রেসিডেন্টের শপথে জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজন হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে এ বছর প্রথমত করোনা সংক্রমণ, তার ওপর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের আগ্রাসী মনোভাবে বাধ্য হয়েই একেবারে ছোট পরিসরে আয়োজন হচ্ছে অভিষেক অনুষ্ঠান। খবর সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, ইউএসএ টুডে, লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ফক্স নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমসের। নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে বুধবার দিনভর থাকছে বিভিন্ন আয়োজন। এর কিছু হয়ত আইনী প্রয়োজনে, বাকিগুলো ঐতিহ্য রক্ষার খাতিরেই আয়োজিত হবে। সাধারণত অভিষেকের দিন সকালেই নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে পৌঁছে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকে তারা একসঙ্গে অভিষেক অনুষ্ঠানে যান। এবার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে যাবেন না। এ কারণে সেদিন সকালে বাইডেনের হোয়াইট হাউসে যাওয়া হবে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। হোয়াইট হাউস পরিদর্শন শেষে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাপিটল ভবনে পৌঁছালেই শুরু হয় অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা। প্রথমে শপথবাক্য পাঠ করেন নতুন প্রেসিডেন্ট। এরপর রীতি মেনে অভিষেকের বক্তব্য রাখেন। ১৯৩৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে প্রার্থনার নিয়ম চলছে। অনেক সময় নতুন প্রেসিডেন্টের পরিচিত যাজকরাই এটি করে থাকেন। এরপর কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খান প্রেসিডেন্ট। পরে মিছিল নিয়ে হোয়াইট হাউসে পৌঁছান তিনি। সেখানে অভিষেক উপলক্ষে জাঁকজমক পার্টিতে যোগ দেন নতুন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্টলেডি। এ বছর অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন একেবারে সীমিত করে ফেলা হয়েছে। ইতোমধ্যে জানা গেছে, হোয়াইট হাউসে যাওয়ার মিছিলটি হবে ভার্চুয়াল। হচ্ছে না কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ। বাদ অভিষেক পার্টিও। যুক্তরাষ্ট্রের ছোটখাটো অনুষ্ঠানেও যেখানে তারকা উপস্থিতি দেখা যায়, সেখানে প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে থাকবেন না, তা কী করে হয়! বাইডেনের অভিষেকে ক্যাপিটল ভবনের অনুষ্ঠানে মঞ্চ আলোকিত করতে উপস্থিত থাকবেন একঝাঁক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ইউএস ক্যাপিটলের পশ্চিমভাগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত গাইবেন পপ তারকা লেডি গাগা। এরপর একটি মিউজিক্যাল পারফরমেন্সে অংশ নেবেন গায়িকা-অভিনেত্রী জেনিফার লোপেজ। এতে আরও অংশ নেবেন সঙ্গীতশিল্পী জাস্টিন টিম্বারলেক, জন বন জোভি, ডেমি লোভাটো এবং এ্যান্ট ক্লেমনস। বাইডেনের শপথ গ্রহণ উপলক্ষে ৯০ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন দুইবার অস্কারজয়ী অভিনেতা টম হ্যাংকস। সহিংসতার শঙ্কায় ওয়াশিংটন ডিসিতে বর্তমানে হাই-এ্যালার্ট চলছে। শহরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে ২০ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড সদস্য। বাইডেনের অভিষেক উপলক্ষে ক্যাপিটল ভবনের চারপাশে সামরিক ‘গ্রীন জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে, যে ন্যাশনাল পার্কে অন্য সময় লাখো মানুষের ভিড় থাকে, এবার সেটি খালিই দেখা যাবে। অন্যবার মানুষজনকে অভিষেক অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার হচ্ছে উল্টোটা। তাদের ওই এলাকায় যেতে নিরুৎসাহিত করছে কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, এবার প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে মাত্র এক হাজার টিকিট ছাড়া হয়েছে। সেগুলোও পাওয়া যাচ্ছে শুধু সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের মাধ্যমে। বদলেছে ক্যাপিটলের দৃশ্যও। আগে উন্মুক্ত থাকলেও বর্তমানে ভবনটির চারপাশে বসানো হয়েছে সাত ফুট উঁচু কাঁটাতারের বেড়া। নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শপথ নিচ্ছেন বাইডেন। এদিন সম্ভাব্য অভ্যন্তরীণ হামলা এড়াতে ওয়াশিংটনে মোতায়েন ন্যাশনাল গার্ডের ২৫ হাজার সদস্যের নিরাপত্তাবিষয়ক তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। আর্মি সেক্রেটারি রায়ান ম্যাকার্থি বলেছেন, তিনি এবং অন্য নেতৃবৃন্দ গার্ড সদস্যদের মধ্য থেকে কোন হুমকির প্রমাণ দেখেননি। রাজধানী ওয়াশিংটনের বেশিরভাগ রাস্তা এবং মেট্রো স্টেশনগুলোর পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ জাতীয় উদ্যান হিসেবে পরিচিত ন্যাশনাল মলও বন্ধ করে দিয়েছে। ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে শহরে প্রবেশের সেতুগুলোও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আরও সহিংসতার হাত থেকে রক্ষার জন্য হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা এলাকাজুড়ে অবস্থান করছেন। তীব্র নিরাপত্তা উদ্বেগ সত্ত্বেও বাইডেন অনুষ্ঠানটি ঐতিহ্যবাহী স্থানেই করার পরিকল্পনা করছেন। আসন্ন বাইডেন প্রশাসনের সম্ভাব্য যোগাযোগ পরিচালক কেইট বেডিংফিল্ড এবিসির ‘দিস উইক শোতে বলেছেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম পাশে বাইরের দিকে পরিবারের সঙ্গে বাইবেলে হাত রেখে শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘বাইডেন এবং তার দলের যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে। তারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অভিষেক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিরাপদ কিনা, তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছেন।’
×