ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হেফাজতের তিন নেতা জনতার রোষানলে

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ১৫ জানুয়ারি ২০২১

হেফাজতের তিন নেতা জনতার রোষানলে

শংকর কুমার দে ॥ হেফাজতের তিন নেতাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশ। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দিয়ে জনতার রোষানলে পড়েছে হেফাজতের তিন নেতা। দেশের যে কোন স্থানের ইসলামী জলসায় বক্তব্য রাখতে গেলেই অপ্রীতিকর, অবাঞ্ছিত ও অনাকক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে। এরইমধ্যে বরিশালে এক পীর ও সিলেটে এক মাওলানাকে নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় তাদের অনুষ্ঠানে যাওয়ার ওপর নিষেধ করেছে পুলিশ। ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেয়া হেফাজতে ইসলামীর তিন নেতা যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরাপত্তাসহ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সিলেটের গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর ইউনিয়নের শেখপুর শাহী ঈদগাহ ময়দানের এক ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথি করা হয় হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে। প্রধান অতিথি হিসেবে মামুনুল হক অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর তিনি মঞ্চে উঠার আগেই ওয়াজ মাহফিল থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয় প্রশাসন। ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্যদানকারী এই মাওলানা অনুষ্ঠানে বয়ান শুরু করলে মানুষজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কায় তাকে অনুষ্ঠান থেকে বিদায় করে দেয়া হয়। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষজনের কাছ থেকে তাদের রোষানলে পড়ার বিষয়টি জানানো হয় পুলিশকে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় তাকে ওই ওয়াজ মাহফিলে বয়ান দিতে দেয়া হয়নি। তাকে প্রধান অতিথি করে অনুষ্ঠান করার বিষয়ে প্রশাসনের অনুমতি নেয়নি আয়োজক কমিটি। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর বাজারের ওয়াজ মাহফিল চলার সময়ে একজন পীরের ওপর চড়াও হয়ে থাপ্পর মারতে উদ্যত হন এক যুবক। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলার হুমকি দেয়ার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই যুবক এই ধরনের কাণ্ড ঘটিয়েছে। পীরকে লাঞ্ছিত করতে উদ্যত ওই যুবক এই পীরেরও মুরিদ। ওই যুবক শুধু পীরের মুরিদই নয়, বঙ্গবন্ধুর ভক্তও বটে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেবে বলে হুমকি দেয়ার কারণে ওয়াজ মাহফিলের অনুষ্ঠানে শত শত মানুষজনের সামনেই পীরকে চড় থাপ্পর মারতে উদ্যত যুবক বলেছে, বেয়াদব পীর। এই ঘটনার পর পীরের নিরাপত্তা বাড়িয়েছে পুলিশ। হেফাজতে ইসলামের যে তিন নেতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছেন তারা হচ্ছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং যুগ্ম- মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ এবং তাদের উস্কানিতে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাটির তদন্ত করছে পিবিআই। হেফাজতে ইসলামের তিন নেতা ভাস্কর্যবিরোধী ফতোয়া দিয়ে সারাদেশে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি ও কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনার কঠোর হস্তে পরিস্থিতি মোকাবেলার উদ্যোগ নেয় সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যাপক তৎপরতা চালায়। ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে ধর্মের নামে বিভ্রান্ত সৃষ্টির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানবন্ধন করে স্বাধীনতার পক্ষের সংগঠন, ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষজন। সারাদেশে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষজন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন হেফাজতে ইসলামের ও তাদের পক্ষের আলেম ওলেমাগণ। এরপর থেকে ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্যদান থেকে আপাতত সরে আসলেও ফেসবুক, ইউটিউব, লাইভে এসে ইসলামী জলসার নামে বক্তব্য প্রদান করে যাচ্ছে তারা ও তাদের সহযোগীরা। সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য ছবি তোলা, ফেসবুকে ছবি শেয়ার করা, ভিডিও শেয়ার করে চলেছেন হেফাজতের তিন নেতাসহ অনেক ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী ফতোয়া দেয়ার পেছনে বিএনপি-জামায়াতের মদদে কাজ করেছে দেশী-বিদেশী অশুভ শক্তি। বিপুল অঙ্কের অর্থের যোগানদাতা হিসাবে কাজ করেছে ওই চক্র। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী ফতোয়া দিয়ে সারাদেশে উত্তেজনা সৃষ্টির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। ভাস্কর্যবিরোধী ফতোয়া দিয়ে সারাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষজনকে বিভ্রান্ত করে উত্তেজিত করার জন্য ব্যবহার করেছেন ফেসবুক, ইউটিউব। তিনি ফেসবুক লাইভে এসে ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য রেখেছে ভাস্কর্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের বক্তব্য শুনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুর করেছেন কুষ্টিয়ার মাদ্রাসার দুই ছাত্র মিঠুন ও নাহিদ।
×