ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কয়লা চুরির অভিযোগ ॥ বড়পুকুরিয়ার ২২ কর্মকর্তার জামিন

প্রকাশিত: ১৪:০০, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

কয়লা চুরির অভিযোগ ॥ বড়পুকুরিয়ার ২২ কর্মকর্তার জামিন

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ একদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেলেন ২শ’ ৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার কয়লা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ২২ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে খনির সাবেক ছয় ব্যবস্থাপনা পরিচালকও (এমডি) রয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাদের জামিনের আদেশ হাতে পাওয়ার পর, ২২ কর্মকর্তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর জেলা কারাগারের সুপার মোকাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় তাদের জামিনের জন্য আদেশ পেয়েছিলাম। জেল কোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী, সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণে, বৃহস্পতিবার সকালে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুরে চার্জ গঠনের শুনানিতে হাজিরা দিতে ওই আসামিরা উপস্থিত হন দিনাজপুর স্পেশাল জজ আদালতে। তাদের জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। পরে তাদের জামিন সংক্রান্ত একটি রিট উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকার কথা উল্লেখ করে, আসামি পক্ষের আইনজীবী নুরুজ্জামান জাহানী সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র আদালতে উপস্থাপন করেন। এরপর বিকালে এক আদেশে তাদের জামিন দেন একই আদালত। সেই জামিন আদেশের কপি জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের পরে সেই আদেশের কপি কারাগারে পৌঁছানোয়, বুধবার তাদের জামিনে মুক্তি দেয়নি কারাগার কর্তৃপক্ষ। আসামিপক্ষের আইনজীবী নুরুজ্জামান জাহানী জানান, ২২ কর্মকর্তার জামিনের নিষেধাজ্ঞা এনে সম্প্রতি রাষ্ট্রপক্ষ উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছে। সেই রিটের বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সেই অবস্থায় বুধবার ২২ জনের জামিন না মঞ্জুর করেন দিনাজপুর স্পেশাল জজ আদালত। পরে উচ্চ আদালতের বিচারাধীন রিটের কাগজপত্র স্পেশাল জজ আদালতে উপস্থাপন করা হলে, তাদের জামিন মঞ্জুর করেন একই আদালত। মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত এক লাখ ৪৩ হাজার ৭শ’ ২৭ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন কয়লা চুরি হয় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে। যার আনুমানিক মূল্য ২শ’ ৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫শ’ ১ টাকা ৮৪ পয়সা। এই ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয় এবং কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা গায়েবের ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দুদকের তফশিলভুক্ত হওয়ায়, তা দুদক কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি দুদকের উপ-পরিচালক সামসুল আলম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই সাবেক সাত ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলাটির চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়। চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ঘাটতিকৃত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭শ’ ২৭ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টন কয়লা আত্মসাতে জড়িত ছিলেন। আসামিরা দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এই অভিযোগপত্রে এজাহার নামীয় ছাড়াও আরও ৯ জনকে যুক্ত করা হয়। আর তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায়, পাঁচ জনকে আসামি তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়। আদালতে ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করার পর, মামলায় অভিযুক্ত বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুবুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। জামিনে যাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল আজিজ খান, প্রকৌশলী খুরশীদুল হাসান, প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, আমিনুজ্জামান, প্রকৌশলী এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব ও সাবেক এমডি প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম, প্রশাসন) শরিফুল আলম, আবুল কাসেম প্রধানীয়া, আবু তাহের মোঃ নুর-উজ-জামান চৌধুরী (মাইন অপারেশন বিভাগ), আরিফুর রহমান মেনটেইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের ব্যবস্থাপক, নিরাপত্তা বিভাগের ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান হাওলাদার, নিরাপত্তা বিভাগের ব্যবস্থাপক সৈয়দ ইমাম হাসান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, মেনটেইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মোর্শেদুজ্জামান, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) হাবিবুর রহমান, মাইন ডেভেলপমেন্ট বিভাগের উপ-মহা-ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জাহেদুর রহমান, ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সত্যেন্দ্র নাথ বর্মণ ও মনিরুজ্জামান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপক শোয়েবুর রহমান, স্টোর ডিপার্টমেন্টের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) একেএম খালেদুল ইসলাম, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপক অশোক কুমার হালদার ও মাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জোবায়ের আলী।
×