ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩ ইসলামী দল বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা থেকে সরে এসেছে

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০

৩ ইসলামী দল বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা থেকে সরে এসেছে

শংকর কুমার দে ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধিতা থেকে সরে এসেছে তিনটি ইসলামী দল। তিন কারণে আর আন্দোলনে না যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলগুলো। হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে ভাস্কর্য ইস্যুতে আন্দোলন থেকে সরে এসে নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইসলামী দলগুলোর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ভাস্কর্য ইস্যুতে আলোচনা করেছেন ইসলামী দলগুলোর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। দলগুলোর বারো সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনায় বুঝে গেছে ভাস্কর্য ইস্যুতে কোন ধরনের ছাড় দেবে না সরকার। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছে মৌলবাদীরা। হুমকিধমকি দিয়ে এবার ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে আর কোন আন্দোলন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিনটি শীর্ষ মৌলবাদী সংগঠন। ইসলামী দলগুলোর পিছু হঠার নেপথ্যের তিন কারণ হচ্ছে : প্রথমত, সরকারের কঠোর অবস্থান : সরকারের মনোভাব মৌলবাদী সংগঠনগুলোর পিছু হটার অন্যতম কারণ। তারা বুঝতে পেরেছে, সরকার কোন অবস্থাতেই এই ইস্যুতে আপোস করবে না। অর্থাৎ ভাস্কর্য বিরোধিতা করা মানে, প্রকারান্তরে সরকারের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো। তাতে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়তে পারে সংগঠনগুলো। এই ধারণা থেকে তারা আপাতত এই ইস্যু নিয়ে চুপচাপ থাকতে চায় শীর্ষ নেতৃত্ব। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক চাপ : বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধী কঠোর মনোভাব নিয়ে মাঠে নামে ইসলামী দলগুলো। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য টেনেহিঁচড়ে ভাঙ্গা হবে, বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে ইত্যাদি ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন দলগুলোর শীর্ষ তিন নেতা। হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধী ইস্যুকে ধর্মের নামে মানুষজনকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেন তারা। এই ইস্যুতে আওয়ামী লীগ দ্রুত রাজপথে নামে। আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির নানা সংগঠন ও ব্যাক্তিত্ব দ্রুত মাঠে নেমে ধর্মের নামে মানুষজনকে বিভান্ত করার বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক, জবাব তুলে ধরেন। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি মাঠে মৌলবাদীদের মোকাবেলার করার জন্য যথেষ্ট শক্তি রাখে এবং তারা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করবে এটা ইসলামী দলগুলো বুঝতে পেরেছে। এটাও মৌলবাদী সংগঠনগুলোর পিছু হটার অন্যতম কারণ। তারা বুঝতে পারে যে, আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে তাদের চেয়ে শক্তিশালী। তাই, এ নিয়ে আন্দোলন করলে তাদের পরিণতিও জামায়াতে ইসলামের মতো হবে। তৃতীয়ত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মনোভাব : কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় দ্রুততার সঙ্গে দায়ী মাদ্রাসার দুই শিক্ষক ও দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, গ্রেফতার, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ, কারাগারে নিক্ষেপ করে কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কোনভাবেই ছাড় দেবে না, এটা কুষ্টিয়ার ঘটনার পর মৌলবাদী গোষ্ঠীর বোধোদয় ঘটে। তারা বুঝতে পারে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এই ভাস্কর্য ইস্যুতে মৌলবাদীদের মনগড়া ফতোয়ার ধোয়া তুলে মানুষজনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে সেই বিষয়ে দাঁড়াতে দেবে না। মূলত, এই তিন কারণেই শেষ পর্যন্ত তিন ইসলামী দলের নেতৃত্বে পিছু হটেছে মৌলবাদীরা। দলগুলোর নেতৃত্বে আছেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুর হওয়ার ঘটনার পর এই তিন ইসলামী দলের তিন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের হয়েছে, যা তদন্তাধীন।
×