ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সতর্ক হলে ৫০ ভাগ প্রতিরোধ সম্ভব

এলপিজি দুর্ঘটনা দিন দিন বাড়ছে

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ৯ ডিসেম্বর ২০২০

এলপিজি দুর্ঘটনা দিন দিন বাড়ছে

রশিদ মামুন ॥ তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহারে গ্রাহকদের সতর্কতায় মাঠে নেমেছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে ব্যাপক প্রচারসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সচেতন হলেই ৫০ ভাগ দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। দেশে এলপিজির গ্রাহক সংখ্যা ৪০ লাখের কাছাকাছি। দিন দিন এলপিজির সম্প্রসারণ ঘটছে। এর সঙ্গে ব্যবহার বিধি না মানাতে দুর্ঘটনার পরিমাণ যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে প্রাণহাণির ঘটনা। জ¦ালানি বিভাগ বলছে ব্যবহারের সাতটি নির্দেশনা মানলেই দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। আর এসব নির্দেশনাগুলো হচ্ছে রান্না শেষে চুলা বন্ধের সঙ্গে সিলিন্ডারের রেগুলেটরের সুইচ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। অনেকে রান্নার পর চুলা বন্ধ করলেও রেগুলেটরের সুইচ বন্ধ করেন না। এতে চুলা এবং সিলিন্ডারের মাঝের পাইপে কোন ছিদ্র থাকলে গ্যাস বের হয়ে ঘরে জমতে পারে। এলপিজি যেহেতু বাতাস থেকে ভারি তাই এটি উপরের দিকে উড়ে না গিয়ে ঘরের মেঝে জমা হয়। এরপর চুলা জ¦ালাবার জন্য দিয়াশলাই জ¦ালালেই ঘটতে পারে ভয়াবহ বিপদ। এছাড়া গ্যাস দিয়ে ঘর ভর্তি হয়ে থাকলে ইলেক্ট্রিক সুইচ থেকেও অনেক সময় স্পার্কের কারণে দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা থেকে যায়। মন্ত্রণালয় বলছে রান্না শুরুর আধাঘণ্টা আগেই ঘরের দরজা জানালা খুলে দিয়ে ফ্যান চালিয়ে দিতে হবে। এতে বাতাসে ঘর থেকে এলপিজি বের হয়ে যাবে। তৃতীয়ত চুলা থেকে অনেক দূরে বায়ু চলাচল করে এমন জায়গাতে এলপিজি সিলিন্ডার রাখতে হবে। অনেকে চুলার কাছে আবদ্ধ জায়গায় এলপিজির সিলিন্ডার রাখেন যা বিপজ্জনক। বলা হচ্ছে যদি কখনও গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায় তখন সব থেকে বেশি সতর্ক হতে হবে। এ সময় দ্রুত দরজা জানালা খুলে দিতে হবে। দিয়াশলাই জ¦ালানো যাবে না। ইলেক্ট্রিক সুইচ মোবাইল খোলা এবং বন্ধ করা যাবে না। এলপিজি সিলিন্ডার সব সময় খাড়াভাবে রাখতে হবে। কোন সময় উপুড় বা কাত করে রাখা যাবে না। সিলিন্ডার থেকে সব সময় চুলা উঁচুতে রাখতে হবে। কমপক্ষে এর পরিমাণ ছয় ইঞ্চি হতে হবে। অতিরিক্ত গ্যাস বের করার জন্য কখনও সিলিন্ডারে তাপ দেয়া যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে হোটেল বা চায়ের দোকানে শীতের সময় এলপিজি সিলিন্ডার রোদে রাখা হয় আবার কেউ কেউ তাপও দেয়। এর ফলে এলপিজি গ্যাসীয় অবস্থা থেকে আরও বেশি প্রসারিত হয়ে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। জ¦ালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা মনে করছি মানুষ ব্যবহারে সচেতন হলেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে প্রতিবছর কত দুর্ঘটনা ঘটে এর কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে। তবে বেসরকারী বিভিন্ন সূত্র বলছে বছরে অন্তত ২০০টি এলপিজি সিলিন্ডার দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। এতে অনেকে হতাহত হয়ে থাকেন। তবে যারা এলপিজি বিপণন করেন তারা এ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না। সরকারের তরফ থেকে দফায় দফায় বৈঠক করলেও কোন এলপিজি ব্যবসায়ী নিরাপত্তা ইস্যুতে উল্লেখযোগ্য কিছু করেনি। সরকারের তরফ থেকে এর আগে এলপিজি গ্রাহকদের বীমা করে দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের চাপ দেয়া হলেও কেউ সম্মত হয়নি। এখন সরকারের তরফ থেকে গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম ব্যবহার ছাড়াও সভা সেমিনার আয়োজন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে গত অর্থবছরে প্রায় সাড়ে আট লাখ টন এলপিজির চাহিদা ছিল। আর সরকারের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা বলছে ২০৪১ সালের মধ্যে চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে ৮০ লাখ মেট্রিক টন। দেশের উদ্যোক্তরা এলপিজি আমাদনি করে দেশের চাহিদা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা এবং আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এলপিজি আবার রফতানিও করছে।
×