ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ৫ ডিসেম্বর ২০২০

সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরনো ঢাকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতায় নেমেছে উগ্র-সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী সামাজিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত হেফাজতে ইসলাম। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বেশ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন। সমাবেশ করে হুঙ্কার ছেড়ে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হলে তা টেনে হিঁচড়ে নদীতে ফেলে দেয়া হবে। তাদের ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে প্রতিবাদ প্রতিরোধের মুখেও শনিবার কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলেছে সাম্প্রদায়িক গোষ্টী। যে এলাকা থেকে মূলত নতুন করে ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতা তৈরী হয়েছে শনিবার সেই এলাকায় হাজার-হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে মানবশৃঙ্খল কর্মসূচী থেকে হেফাজতকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছেন, যে কোন মূল্যে ভাস্কর্য নির্মাণে সবাই পাশে থাকবেন। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হুঙ্কারে বাংলাদেশ কোন অবস্থাতেই পথ হারাতে পারে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। তবে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরকারের আরো কঠোর অবস্থান দেখানোর দাবি তুলেছেন সর্বস্তরের মানুষ। স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা এই মানবশৃঙ্খল কর্মসূচীর আয়োজন করেন। কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে জাপার এই কো-চেয়ারম্যান বাবলা এমপি বলেছেন, বীর বাঙালী যখন একাত্তরের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে, ঠিক সেই মুহুর্তে দেশের শিল্প সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিরোধী গোষ্ঠী আবারো পবিত্র ধর্মকে অপব্যবহার করে একাত্তরের মতো ফনা তুলে বাঙালীর উন্নয়ন অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করার অপচেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি হুঙ্কারে পথ হারাবে না ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ। দোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মিতব্য ভাষ্কর্সের সামনে দ্রুত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন ও ভাষ্কর্স শিল্প বিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণজাগরণ গে েেতালার লক্ষ্যে মানবশৃঙ্খল কর্মসূচীতে সভাপতির বক্তব্য তিনি আরো বলেন, সমৃদ্ধও বিশ্বদরবারে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি বিরজমান তা বিনষ্ট করার অপচেষ্ঠা চলছে। কিন্তু একাত্তরের পুরো বাঙালী জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকহানাদার বাহিনীর পাশাপাশি তাদের দোসরদের পরাজিত করেছিল। ঠিক তেমনি এবারও বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতুত্বে ফনা তোলা সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিরোধ করার জন্য দেশের সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন, ধমপ্রাণ ও প্রগতিশীল জনতা ঐক্যবদ্ব রয়েছে। ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বাবলার উদ্যোগে আয়োজিত এই মানবশৃঙ্খল কর্মসুচীতে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু এমপি, ৪৮ নং ওর্য়াড কাউন্সিলর আবুল কালাম, সংরক্ষিত কাউন্সিলর নাজমা খোকন, জাপা কেন্দ্রীয় সুজন দে, শেখ মাসুক রহমান, ইব্রাহীম মোল্লা, ডিকে সমীর প্রমুখ। কর্মসূচীতে এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মানব শৃঙ্খল কর্মসুচীতে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, তুরষ্ক, ইরাক, মালেশিয়া, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর প্রায় সকল মুসলিম প্রধান দেশে স্ব স্ব দেশের ঐতিহ্য ও জাতির পিতার প্রতিকৃতি আকারে শতশত ভাষ্কর্স শিল্প স্থাপিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। কেউ যেন ভুলে না যায়, বাংলাদেশে ইসলামের ধারক বাহক হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর হমান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু, ওআইসিতে বাংলাদেশকে অর্ন্তভুক্ত করেছিলেনবঙ্গবন্ধু। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছিলেন এরশাদ। শুক্রবারে সরকারি ছুটি ঘোষনাও তিনি করেছিলে। ঢাকাকে যে মসজিদের নগরী বলা হয়, তার রুপকারও এরশাদ । আর আাজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যে ইসলাম ও মুসলমানের জন্য নিবেদিত প্রাণ তা সর্বজন স্বীকৃত । বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিডের মতো মরণঘাতি বৈশ্বিক মহামারী সফলভাবে মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে উন্নত-সমৃদ্বশালী ও আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলছে। ঠিক তখনই একাত্তরের পরাজিত গোষ্ঠী বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতাকে উস্কে দেয়ার অপচেষ্ঠার মধ্য দিয়ে ভাষ্কর্স শিল্পের বিরোধিতার নামে দেশের শান্তিময় স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিনষ্ট করার অপচেষ্ঠা করছে। সমাবেশে তুরষ্কের রাজধানী আঙ্কারায় বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্স স্থাপনের ঘোষণা দেয়ায় তুরষ্ক সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বাবলা বলেন, যখন আমাদের দেশে একটি সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ গোষ্ঠী পবিত্র ইসলামধর্মের অপব্যাখ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্সসহ দেশের শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে এমন ভাষ্কর্স শিল্প ভাঙ্গার হুমতি দেয়, তখন তুরষ্কের মতো একটি মুসলিম দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্স স্থাপনের ঘোষণা নিঃসন্দেহে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর মুখে চপেটাঘাতের সামিল। সেইদিন বেশি দুরে নয়, যেদিন গোটা দুনিয়ার স্বাধীনতাকামী মানুষর নেতা হিসেবে পুরো বিশ্বময় বাঙালী জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপিত হবে।
×