ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

আবহাওয়ার হেয়ালি আচরণ, কখনও শীত কখনও গরম

প্রকাশিত: ২২:৫০, ২৯ নভেম্বর ২০২০

আবহাওয়ার হেয়ালি আচরণ, কখনও শীত কখনও গরম

শাহীন রহমান ॥ অস্থির আবহাওয়ার ঘোরাটেপে বন্দী হয়ে পড়ছে শীতের আগমনি বার্তা। সাগরে বারবার লঘুচাপ, নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বাড়ছে। দেশের আবহাওয়ার ওপর বিরূপ প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। ফলে শীতের এই আগমনি হাওয়ায় কখনো শীত শীত ভাব বাড়ছে। আবার তা কেটে গিয়ে গরমের অনুভূতিও পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই সাগরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়ছে। ফলে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যা এই শীতের আগমনি হাওয়ায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, যখন সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হচ্ছে তখন তাপমাত্রা একটু বেড়ে গরমের অনুভুতি সৃষ্টি হচ্ছে। লঘুচাপের প্রভাব কেটে যাওয়ার পরে তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রী নিচে নেমে শীতের অনুভূতি বাড়ছে। শীতের এই আগমনি হাওয়ায় এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে কয়েকবার। সর্বশেষ আবারো সাগরে আরও একটি লঘুচাপ জন্ম নিতে যাচ্ছে। যার স্পষ্ট প্রভাব পড়বে আবহাওয়ায়। ফলে কখনও তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের অনুভূতি বাড়াবে। আবার তাপমাত্রা বেড়ে শীতের অনুভূতি কমিয়ে দেবে। গত কয়েকদিন আগেই দক্ষিণ পশ্চিম সাগরে সৃষ্টি হয় একটি ঘূর্ণিঝড়। যা দক্ষিণ ভারতের তামিল নাড়ুর চেন্নাই উপকূলে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সেখানে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় নিভার সরাসরি দেশের উপকূলে আঘাত না হানলেও এর কিছু পরোক্ষ প্রভাব দেশে ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। শনিবার থেকে দেশের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রী কমে শীতের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিন দেশের উত্তরের জেলা তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। ফলে উত্তরের ওই জেলায় শীত জেঁকে বসেছে। কখনও কখনও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। রাতে শীতের মাত্রা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। অথচ শীত ঋতু আসতে এখনও অনেক বাকি। আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাগরে আরও একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এটি বেশ শক্তি সঞ্চয় করে উপকূলের দিকে আসছে। তিনি জানান এই লঘুচাপ থেকে আরও একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তিনি বলেন যদিও এই লঘুচাপ বা এর থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলে আসবে না ঠিকই। এটি তামিল নাড়ুর দিকে চলে যাবে। কিন্তু এর একটা প্রভাব আবহাওয়ায় পড়বে। তিনি ঘূর্ণিঝড় নিভারের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন এটি তামিল নাড়ুতে আঘাত করার পর ইতোমধ্যে নিভারের প্রভাবে দেশে আবহাওয়ায় একটি পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রী কমে গেছে। বাতাসে শীতের অনুভূতি বেড়ে গেছে। আগামী তিনদিন এই অবস্থা থাকবে। এরপর আবার তাপমাত্রা বাড়বে। এরই মধ্যে নতুন করে সৃষ্টি হতে যাচ্ছে লঘুচাপ। এর প্রভাবে হঠাৎই দেশে জাঁকিয়ে শীত নামতে পারে। তিনি বলেন, সাগরে বারবার লঘুচাপ সৃষ্টি হচ্ছে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে। ফলে আবহাওয়ায় চরম বিরূপ প্রভাব পড়ছে কয়েক মাস ধরেই। ঋতু বৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী দেশে পৌষ-মাঘ শীত পড়ে। তবে বাতাসে আগেই শীতের আগমনি হাওয়া বইতে থাকে। এবার শীতের এই আগমনি হাওয়ায় বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বারবার বাধা পাচ্ছে। মূলত সাগরের বিক্ষুব্ধ আচরণের কারণেই এমনটা ঘটছে। গত অক্টোবর মাসে সাগরে বেশ কয়েকবার লঘুচাপ এবং তা থেকে নিম্নচাপের জন্ম নেয়। তার প্রভাব দেশের ভেতরে স্পষ্টরূপে পড়ে। বিশেষ করে অক্টোরের শুরুতেই সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হলে এর প্রভাবে দেশে বেশ বৃষ্টি হয়। এরপর ২০ অক্টোবরের পরে আবারও একটি লঘুচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ফলে এবারে হিন্দু সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা বৃষ্টিস্নাত হয়ে পড়ে। কিন্তু অক্টোবর যেতে না যেতে আবারও লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। ওই লঘুচাপের প্রভাব কেটে যাওয়ায় নবেম্বরের শুরুতেই দেশের আবহাওয়ার হঠাৎই রূপ বদলে যায়। সারাদেশে একযোগে শীতের প্রভাব অনেকটা বেড়ে যায়। একদিন আগেও যেখানে বেশ গরমের অনুভূতি ছিল, সেই আবহাওয়া এখন শুরু হয় শীতের আমেজ। খোদ রাজধানীতেও শীত শীত ভাব শুরু হয়। গ্রাম বাংলায় এর প্রভাব পড়ে ব্যাপক। গরম কাপড় ব্যবহার শুরু হয়। কোথাও কোথাও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে। এরপর থেকে মূলত শীত একেবারেই উধাও হয়ে যায়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে পশ্চিমা লঘুচাপ এবং পুবালী হাওয়া সংমিশ্রণে হঠাৎ রাজধানীসহ সারাদেশে বেশ বৃষ্টিপাত হয়। ওই বৃষ্টির পরেই আবারও শীত শীত ভাব শুরু হলেও তা কেটে যায়। এর মধ্যে গত বুধবার দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় একটি লঘুচাপ। যা থেকে ঘূর্ণিঝড় নিভারের জন্ম নেয়। এটি ভারতের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানলেও ইতোমধ্যে এর প্রভাবে দেশের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রী পর্যন্ত কমে গেছে। ফলে আবারও শীতের অনুভূতি বাড়ছে রাতে ও সকালে। উত্তরের জেলায় এর প্রভাবে শীত জেঁকে বসেছে। আবহাওয়বিদ আব্দুল মান্নান জানান এই পরিস্থিতি তিনদিন পর্যন্ত থাকতে পারে। এরপর আবারও তাপমাত্রা বেড়ে শীতের অনুভূতি কমে যাবে। তিনি নতুন করে সাগরের লঘুচাপ সৃষ্টি সম্পর্কে বলেন এর প্রভাবে হঠাৎ করেই একযোগে শীতের মাত্রা অনেকটা বেড়ে যেতে পারে। মূলত আবহাওয়ায় একটি অস্থিরভাব বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করেন। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী শনিবার সকাল ছয়টায় দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে ইতোমধ্যে জেঁকে বসেছে শীত। গত দুইদিন ধরে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। শুক্রবার দিন শেষে শুরু হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। রাতভর ঘন কুয়াশায় ঢেকে ছিল গোটা আকাশ। সঙ্গে উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে তীব্র শীত অনুভূত হয়। আবহাওয়াবিদরা জানান, এই অবস্থা থাকবে না। আবারও তাপমাত্রা বেড়ে গরমের অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী শনিবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয় সেখানে। এ সময়ে তেঁতুলিয়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ থেকে ১৯ এর মধ্যে ওঠানামা করে। শুক্রবার এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দিনভর আকাশ মেঘলা ছিল। মূলত এই অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় নিভারের প্রভাবে। এটি ভারতে আঘাত হানলে বাংলাদেশের আকাশ গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই মেঘলা ছিল। শুক্রবার আকাশ অনেক বেশি মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে সূর্যের মুখ পর্যন্ত দেখা যায়নি। তবে শনিবার থেকে মেঘের ভার কেটে রোদেল আকাশের দেখা মিলেছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, মেঘাচ্ছন্নভাব কাটলেও তাপমাত্রা নেমে গেছে কয়েক ডিগ্রী পর্যন্ত। ফলে আগামী তিনদিন রাতে শীতের অনুভূতি বাড়বে।
×