ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অঙ্গরাজ্যের আইনসভাগুলোকে প্রভাবিত করতে লবি করছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট

পেনসিলভানিয়ার ভোট নিয়ে আপীলেও হারলেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৯ নভেম্বর ২০২০

পেনসিলভানিয়ার ভোট নিয়ে আপীলেও হারলেন ট্রাম্প

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যাটল গ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়াতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করা আটকাতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প শিবিরের চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার খারিজ করে দিয়েছে দেশটির একটি ফেডারেল আপীল আদালত। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, ইউএসও টুডে ও লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমসের। আদালতের তিন বিচারকের প্যানেল জানিয়েছে, ট্রাম্প শিবিরের করা মামলার কোন ‘মেরিট’ই নেই। রিপাবলিকানরা ভোটে কারচুপি নিয়ে সুস্পষ্ট কোন অভিযোগ বা এ সংক্রান্ত কোন প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। যদিও আপীল আদালতের এ রায়কে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ৭৪ বছর বয়সী এ রিপাবলিকান নবেম্বরের ৩ তারিখের ভোটের ফল বদলে দেয়ার চেষ্টা করছেন। দেশটির স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তিনি ‘বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা করা হলে হোয়াইট হাউস ছেড়ে দেবেন’ বলে ইঙ্গিত দিলেও পরদিনই আবার ‘ভোটে ব্যাপক জালিয়াতি’ হয়েছে মন্তব্য করে প্রমাণ ছাড়াই করে যাওয়া আগের অভিযোগের পথে ফিরে যান। টুইটারে করা এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, তার প্রাপ্ত ৮ কোটি ভোট যে জালিয়াতি করে বা অবৈধভাবে পাওয়া নয়, তা প্রমাণ করতে পারলেই কেবল বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে ঢুকতে পারবেন। রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্টের শিবির গত সপ্তাহেই পেনসিলভানিয়াতে ভোটের মামলায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছিল। অঙ্গরাজ্যটিতে ডাকযোগে আসা লাখ লাখ ভোট বাতিলের দাবিতে মামলা করেছিল তারা। ফেডারেল আদালত ওই মামলা খারিজ করে দেয়ার পর ট্রাম্প শিবির থার্ড সার্কিট কোর্ট অব আপীলসের দ্বারস্থ হয়। এবার সেখানেও হারল তারা। আপীল আদালতের বিচারক স্টেফানোস বিবাস বলেছেন, মামলার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও এরপর প্রমাণ লাগে। এখানে কিছুই নেই। বিচারক হিসেবে বিবাসকে ট্রাম্পই মনোনয়ন দিয়েছিলেন। নবেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে রিপাবলিকান শিবির বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ভোট জালিয়াতি সংক্রান্ত একাধিক মামলা করলেও এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন সফলতা পায়নি। করোনার টিকা আগামী সপ্তাহে - ট্রাম্প ॥ যুক্তরাষ্ট্রে আগামী সপ্তাহ থেকেই করোনার ভ্যাকসিন সরবরাহের কাজ শুরু হবে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ৩ নবেম্বর নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বাইরে ভিন্ন বিষয়ে এই প্রথম কথা বললেন ট্রাম্প। থ্যাংকসগিভিং ডে উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় শনিবার ট্রাম্প জানান, প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রবীণ ব্যক্তিদের এই ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে। আগে থেকে প্রস্তুতি থাকায়, অনুমোদনের পর ভ্যাকসিন সরবরাহ ও প্রথম ধাপে মানুষের মধ্যে টিকা প্রয়োগে খুব একটা দেরি হবে না। ২০ জানুয়ারি বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের আগেই এই টিকা দেয়ার তোড়জোড় চলছে। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পই এই টিকা সরবরাহের উদ্বোধনের সুযোগ পাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণ চলতি মাসে ব্যাপকভাবে বাড়লেও বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না ট্রাম্প। তবে তার প্রশাসনের কাছ থেকে এর আগে জানানো হয়েছিল, আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই ফাইজার আবিষ্কৃত করোনা ভ্যাকসিনের অনুমোদন হয়ে যাবে। করোনা ভ্যাকসিনের সুখবর দেয়া দুই মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও মডার্নার মধ্যে ফাইজার এরই মধ্যে ভ্যাকসিনটি অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে মার্কিন ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচার এ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফডিএ)। এর আগে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে চারটি ধাপে করোনা ভ্যাকসিন বিতরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ সম্মুখ সারির যোদ্ধারা ভ্যাকসিনটি পাবেন। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার হিসেবে এই পর্যায়ে মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশের কাছে ভ্যাকসিনটি পৌঁছে যাবে। লবিং করছেন ট্রাম্প ॥ ভোট গণনা নয়, এবার অঙ্গরাজ্য আইন সভাগুলোকে প্রভাবিত করতে লবিং করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে যা কখনও হয়নি, ঠিক তেমনটাই করছেন তিনি। ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জুলিয়ানিও এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। সুপ্রীমকোর্টে যাওয়ার পাশাপাশি তারা বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের আইন প্রণেতাদের সঙ্গে লবিং করছেন। ট্রাম্প শিবিরের আশা, অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা ভোটের ফলকে পাশ কাটিয়ে ইলেকটোরাল কলেজ নিয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এ কাজে ট্রাম্প সফল না হলেও শেষ মুহূর্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন, যা গণতন্ত্রের জন্য খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২৭ নবেম্বর নিউজম্যাক্স টিভিতে ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি সাক্ষাতকার দিয়েছেন। সেখানে জুলিয়ানি বলেছেন, তারা এখন দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করছেন। একদিকে সুপ্রীমকোর্টে যাওয়া, অন্যদিকে সুইং স্টেটগুলোর অঙ্গরাজ্য আইনসভাকে ভোটের ফল পাল্টে দিতে সম্মত করার কাজ করা। জুলিয়ানি বলেন, তাদের কাছে ভোট কারচুপির যথেষ্ট প্রমাণ আছে, কিন্তু তাদের হাতে সে পরিমাণ সময় নেই। যে কোন একদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফল পাওয়া যাবে বলে তিনি মনে করছেন। রুডি জুলিয়ানি বলেন, জনগণের সামান্যই ধারণা আছে যে, তাদের কাছে কি পরিমাণ জালিয়াতির প্রমাণ রয়েছে। এদিকে ২৭ নবেম্বর পেনসিলভানিয়ার ফেডারেল আদালত ট্রাম্পের মামলা খারিজ করেছে। বিচারক বলেছেন, মামলায় কোন প্রমাণ নেই, সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। এ বিষয়ে জুলিয়ানি বলেন, এসব বিচারক রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে নিয়োগ পাওয়া বিচারক ভোট জালিয়াতি এবং কারচুপির বিষয়টা বেরিয়ে আসুক তা চান না। তিনি দাবি করেন, তার কাছে এফিডেভিটসহ প্রমাণ আছে। এফিডেভিটে লোকজন বলেছেন, ভোট গণনার সময় এক ব্যালট পাঁচবার গণনা করতে তারা দেখেছেন। ব্যালট পেপার পাওয়ার পর তা সংশোধন করা হয়েছে উল্লেখ করে জুলিয়ানি বলেন, তাদের এসব প্রমাণ নিয়ে আদালত শুনানি করতেই সম্মত হয়নি। মিশিগান অঙ্গরাজ্যে পেনসিলভানিয়া থেকে বেশি কারচুপি হয়েছে উল্লেখ করে জুলিয়ানি বলেন, এভাবে নেভাদা ও উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যেও ভোটে কারচুপি হয়েছে, তাদের কাছে প্রমাণ আছে। নির্বাচনের রাতে ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন। পরে জালিয়াতি করে বাইডেনকে জয়ী করানো হয়েছে বলে অভিযোগ তার। রুডি জুলিয়ানির এসব অভিযোগের বিষয়ে মার্কিন প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যম কোন পাত্তাই দিচ্ছে না। অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের আইন প্রণেতাদের মধ্যে নিজের সমর্থক খুঁজছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সুইং স্টেটগুলোর অঙ্গরাজ্য আইন সভা রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে ট্রাম্পের আইনজীবী চাচ্ছেন, যে কোন অবস্থায় এই বিরোধ অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য। এক্ষেত্রে তাদের একটা উদ্যোগ দেখা গেছে। পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্য আইনসভার রিপাবলিকান দলের লোকজন নাগরিক শুনানি গ্রহণ করেছেন। শুনানিতে নিজেদের কিছু সমর্থকদের নিয়ে ভোটে কারচুপির সাক্ষ্য দিয়েছেন। নির্বাচনী আইনে সরাসরি এমন শুনানির কোন নিয়ম নেই। পেনসিলভানিয়ার অঙ্গরাজ্য সিনেটর রিপাবলিকান ডাগ মাস্ট্রিয়ানো বলেছেন, তাদের অঙ্গরাজ্যের উভয় কক্ষের অধিকাংশ আইন প্রণেতা মনে করেন, ইলেকটোরাল ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার তাদের আছে। অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফলকে অগ্রাহ্য করে ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে অঙ্গরাজ্য আইনসভার সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন নজির নেই। ট্রাম্প আশা করছেন, সাংবিধানিক আইনের কোন ফাঁকে সুইং স্টেটের আইনসভায় নিজের দলের লোকজনকে দিয়ে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে। তবে চেষ্টার কোন ফল না পেলেও সমর্থকদের উদ্দীপ্ত রাখছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের বিভক্ত সমাজে তার প্রতি সহানুভূতিশীল লোকজনেরও অভাব নেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধিকাংশ সমর্থক বিশ্বাস করে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প সমর্থকদের এমন বিশ্বাস গণতন্ত্রের জন্য হুমকির কারণ। ডেমোক্র্যাট বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরও উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী ট্রাম্পের সঙ্গে সুর মেলাবে। আর ট্রাম্প তো বলেই রেখেছেন, তিনি ইলেকটোরাল ভোটে হেরে গেলেও, পরাজয় স্বীকার করবেন না। তিনি মনে করেন ভোটে কারচুপি ও জালিয়াতি হয়েছে। ভোট জালিয়াতি নিয়ে অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে রুষ্ট উত্তর দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ২৬ নবেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ক্ষুব্ধ ট্রাম্প সাংবাদিককে উদ্দেশ করে এমন প্রশ্ন না করার জন্য বলেন। ট্রাম্প বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। কখন কোন প্রেসিডেন্টকে এমন প্রশ্ন করবেন না।
×