ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পচা বাসি খাবার মিলছে অনেক হোটেলে

করোনায়ও থেমে নেই খাদ্যে ভেজাল, বিশুদ্ধ পানিও মেলা ভার

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৭ নভেম্বর ২০২০

করোনায়ও থেমে নেই খাদ্যে ভেজাল, বিশুদ্ধ পানিও মেলা ভার

শাহীন রহমান ॥ করোনাকালেও থেমে নেই খাদ্যে ভেজাল দেয়া কারবারিরা। বেকারি পণ্য থেকে হোটেল, রেস্টুরেন্ট এমনকি বিশুদ্ধ খাবার পানিও সম্পূর্ণ ভেজাল মুক্ত নয়। এসব প্রক্রিয়াজাত খাবার উৎপাদনে কোন নিয়মনীতির বালাই নেই। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে প্রস্তুতকৃত খাদ্য উৎপাদন, বিতরণ ও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রসেস করা খাবারে কোন লেবেলিং পাওয়া যাচ্ছে না। পচা ও বাসি খাবার মিলছে অনেক হোটেলে। কাঁচা এবং রান্না করা খাবার ফ্রিজে একসঙ্গে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বেকারি পণ্য চরম নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে। উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতসহ কর্মচারীদের কোন স্বাস্থ্য সনদ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের খাবার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কয়েক মাস ধরে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এই ভেজালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এ অভিযানে খাদ্য উৎপাদন, বিতরণ এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থায় এই করুণ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিষ্ঠান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বের আলম জনকণ্ঠকে বলেন, খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। হোটেলগুলোতে চরমভাবে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশের দেখা পাওয়া গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে বারবার নিয়ন মেনে খাদ্য প্রস্তুত, বিতরণ এবং সংরক্ষণের কথা বলা হলেও তারাতা মানছে না। এমনকি ফ্রিজের খাদ্য সংরক্ষণ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ। রান্না করা খাবার এবং কাঁচা খাবার একসঙ্গে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আবার খাদ্যের কোন লেবেরিং নেই। বিশেষ করে খাদ্যের উৎপাদন এবং মেয়াদসহ পণ্যের গায়ে লেবেল সেঁটে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু অভিযানে এসবের কিছু দেখা মেলেনি। এছাড়া বেকারি পণ্য উৎপাদনে যে রং ব্যবহার করা হচ্ছে তাও ফুড গ্রেড নয়। ভেজাল পণ্য দিয়ে খাদ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বেকারিতে। তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্র্তপক্ষ নিয়মিত এসবের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। জরিমানার পাশপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার নিয়ম নেমে চলার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তাদেরকে এ সংবলিত লিফলেট দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এদের অধিকাংশ তা মানছে না। তিনি বলেন, যারা ভেজাল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। গত মঙ্গলবার মেরুল বাড্ডায় অবস্থিত ‘বিসমিল্লাহ সুইটস এ্যান্ড বেকারি’তে অভিযান চালায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। অভিযানে বেকারিটিতে লেবেলবিহীন উপকরণ, রং, সংরক্ষিত খাদ্য পাওয়া যায়। এছাড়া বেকারিটিতে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতা ধরা পড়ে। খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি ছিল ব্যাপক। বেকারি কর্তৃপক্ষ বিএসটিআইর হালনাগাদ লাইসেন্স,কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সনদ, পেস্ট কন্ট্রোল প্রমাণকসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র দেখাতেও ব্যর্থ হয়। শুধু বিসমিল্লাহ সুইটস এ্যান্ড বেকারি নয়; এই চিত্র রাজধানীর অধিকাংশ বেকারির। গত ১২ নবেম্বর প্রতিষ্ঠানটি মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় আবুল হোটেলে অভিযান পরিচালনা করে। হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফ্রিজে খাদ্য সংরক্ষণে অব্যবস্থাপনা, ভেজাল ও লেবেলবিহীন খাদ্যদ্রব্য দিয়ে খাবার তৈরিসহ নানা অনিয়ম দেখতে পায়। অভিযানকালে রেস্টুরেন্টটির ফ্রিজ ও রান্নাঘরে মোড়কীকরণ, চিহ্নিতকরণ ও যথাযথ লেবেল সংযোজন ব্যতিরেকে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিক্রি করতে দেখা যায়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান এভাবে ফ্রিজে খাদ্য সংরক্ষণের কোনি নিয়ম নেই। এছাড়া এ ধরনের খাদ্য সংরক্ষণ মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই অপরাধে আবুল হোটেল এ্যান্ড রেস্টুরেন্টকে জরিমানা করা হয় এবং লেবেলবিহীন খাদ্যদ্রব্য ধ্বংস করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বের আলম বলেন, এ ধরনের অভিযানে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে জরিমানার পাশাপাশি ফ্রিজ ও রান্নাঘরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে ও আইনে নির্ধারিত পদ্ধতিতে লেবেল সংযোজন করে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বিক্রির প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কেউ সঠিকভাবে নিয়ম মানছে না। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলেন, রাজধানীর নামী-দামী হোটেল- রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে একই ধরনের সমস্যা পাওয়া যাচ্ছে। বাইরে বেশ পরিচ্ছন্ন। কিন্তু ভেতরে পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। যারা এসব প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন তাদের সচেতন না হওয়া এবং নিয়ম মানতে অনীহাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
×