ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাস্তবায়ন কমিটি গঠন, এক মাসে প্রতিবেদন ॥ দুই মেয়রের প্রতিশ্রুতি

রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর করার দায়িত্ব পাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ২৭ নভেম্বর ২০২০

রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর করার দায়িত্ব পাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তরের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি আগামী একমাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক পরামর্শ সভা শেষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এ কথা জানান। এদিকে ঢাকার পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব পেয়ে ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দুই মেয়র। তারা বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা নিরসনে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। আমাদের নদীগুলো যেভাবে উদ্ধার হয়েছে সেভাবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দখলকৃত খাল উদ্ধার করতে পারব। আমরা মনে করি ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার করতে পারব। মন্ত্রী বলেন, আমি আগেও বলেছি, সিটি কর্পোরেশন ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পানি নিষ্কাশনের জন্য দায়বদ্ধ। কিন্তু রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ওয়াসার ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। দুই সিটির মেয়র চান তারা এটি করলে ভাল করতে পারবেন। ড্রেনেজ সিস্টেমটা সিটি কর্পোরেশনকে দিতে একটি নীতিগত সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছি। এ বিষয়ে একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য একটি কমিটি করেছি, পানি সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ইব্রাহীমকে প্রধান করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে দুই সিটি কর্পোরেশন থেকে ৪ জন করে মোট ৮ জন এবং ওয়াসা থেকে ৪ জন রয়েছেন। আমাদের এখানে সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করবেন উপসচিব সাইদুর রহমান। সিটি কর্পোরেশন কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে কমিটি। সে অনুযায়ী আইনানুগ প্রক্রিয়া সম্পাদন হবে। তখন থেকে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। মন্ত্রী বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য জনবল, যন্ত্রপাতিসহ সবই সিটি কর্পোরেশনের কাছে আছে, তাদের সক্ষমতা আছে। আমাদের অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা আছে। কিছু বক্স কালভার্ট করা হয়েছে, যা ২০/৩০ বছর সংস্কার করেনি। ফলে পুরোটাই অকার্যকর হয়ে গেছে। তার ভেতরে মিলিয়ন মিলিয়ন টন বর্জ্য জমা হয়ে এখন সেটা অকার্যকর হয়ে গেছে। সেটা কীভাবে করা যাবে সেটি নিয়ে কারিগরি টিম পর্যালোচনা করবে যাতে একটা সময়ের ব্যবধানে হস্তান্তর করতে পারি। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সারা পৃথিবীতে যে আধুনিক শহর গড়ে উঠছে সেগুলো করার সময় ইউটিলিটিক্যাল সাপোর্ট দেয়ার জন্য যেসব পাইপলাইন স্থাপন করতে হয় এবং সময় সময় ক্যাপাসিটির জন্য পরিবর্তনও করতে হয়। এ কাজটা করার জন্য তারা ডাকটিং করেছে। কিন্তু ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে ডাকটিং করা হয়নি। এটার সত্যিকার ম্যাপ খুঁজে পাওয়া খুব কষ্টকর। পানির লাইন কোন্ জায়গা দিয়ে গেছে কেউ জানে না। যে কারণে এই সমস্যায় আমাদের পড়তে হচ্ছে। এ বিষয়ে মেয়রসহ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, কীভাবে আগাতে পারি এ বিষয়ে। নতুন যে শহরগুলো গড়ে উঠছে সেগুলোতে ডাকটিং ফ্যাসিলিটি থাকবে। তবে যেগুলো হয়ে গেছে সেগুলো নিয়ে তো কিছু করার নেই। ফলে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। তাজুল ইসলাম আরও বলেন, আগেও সিটি কর্পোরেশনের কাছে জলাবদ্ধতা নিরসনে নিষ্কাশনের দায়িত্ব নিতে চিঠি লিখেছে ওয়াসা, কিন্তু তখন তারা আগ্রহ দেখায়নি। নতুন মেয়ররা এসে এই দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে আমাদের দেরি হচ্ছে করোনার কারণে। কিন্তু ৩০ দিন সময় দেয়া হয়েছে ঝুলে থাকার জন্য না, তাড়াতাড়ি করার জন্য। নইলে তো ৩ মাস দেয়া হতো। অনেক যন্ত্রপাতি হস্তান্তরের বিষয় আছে, অনেক কালভার্ট নির্মাণ হয়েছে যা সিটি কর্পোরেশন জানেই না। সিটি কর্পোরেশনকে সেগুলো জানতে হবে। এটি করতে আমাদের আইনগত বিষয়গুলো দেখতে হবে। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান এবং স্থানীয় সরকারের সিনিয়র সচিব হেলালউদ্দিন আহমদ। ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার আশ্বাস দুই মেয়রের ॥ রাজধানী ঢাকার খালগুলো সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তরের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। খালের দায়িত্ব পেয়ে ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দুই মেয়র। তারা বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা নিরসনে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। আমাদের নদীগুলো যেভাবে উদ্ধার হয়েছে সেভাবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দখলকৃত খাল উদ্ধার করতে পারব। আমরা মনে করি ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে পারব। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো সিটি কর্পোরেশনের কাছে ন্যস্তকরণ সংক্রান্ত পরামর্শক সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই প্রতিশ্রুতি দেন ঢাকার দুই মেয়র। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আজকের দিনটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দুই সিটির মেয়র চেয়ে আসছিলাম ঢাকা শহরের খালগুলো আমাদের আওতায় দিয়ে দিক। সে বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখানে অনেক টেকনিক্যাল ব্যাপার রয়েছে। যেমন আমাদের সক্ষমতার বিষয়সহ আইনগত বিভিন্ন দিক রয়েছে। আমরা নগরবাসীকে বলতে পারি এটি একটি অনেক পুরনো সমস্যা। এখানে খাল, সুয়ারেজ থেকে শুরু করে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। জলাবদ্ধতা নিয়ে যে দুর্ভোগ; আমরা চেষ্টা করব জনগণকে এটা থেকে রক্ষার জন্য। তিনি বলেন, খালের দুই পাশ অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে। আমরা খালগুলো উদ্ধার করব। খালগুলো আরও গভীর করাসহ দুই পারে সাইকেল লেন, ওয়াকওয়ে ও গাছ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন পার্ক করব। এটি অবশ্যই একটি কঠিন কাজ। যদি সদিচ্ছা থাকে আমাদের নদীগুলো যেভাবে উদ্ধার হয়েছে সেভাবে খালগুলো প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উদ্ধার করতে পারব। সরকারী জমি অন্য কেউ দখল করে নিয়ে যাবে, আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব, সেদিন শেষ। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আজকে আমরা দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা নিরসনে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। ১৯৮৮ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনকে দেয়ার কথা থাকলেও সেটা না দিয়ে ওয়াসাকে দেয়া হয়। ফলে এ সকল জলাশয়, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ নর্দমার দায়িত্ব ওয়াসা পায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ঢাকাবাসী দুর্ভোগে নির্মজ্জিত। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমরা একটি নব সূচনা করতে পারছি। আমি আশাবাদী সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের কাজের মাধ্যমে অচিরেই ঢাকাবাসীকে এর সুফল দিতে পারব। দায়িত্বটাকে কতটা চ্যালেঞ্জ মনে করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, ঢাকাবাসী নির্বাচনের মাধ্যমে দুজন নেতা নির্বাচিত করেছে। সেই ম্যান্ডেটের কারণে আমরা সাহস করেছি ঢাকাবাসীকে আমরা এই সমস্যা থেকে সমাধান দেব। সব প্রতিকূলতা নিয়েই আমরা এই বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছি। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতির একটি সিদ্ধান্ত ছিল ওয়াসাকে দিয়ে দেয়া। আমরা ২০০৯-১০ সালে দায়িত্বে আসার পর ২০১২ সাল থেকে অনেকবার বলেছি এটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করা হোক।
×