এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশে আনা মোবাইলের ডিপো হচ্ছে রোহিঙ্গা শিবির। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হাত বাড়ালেই মিলছে উন্নতমানের ও দামী মোবাইল ফোন। এসব মোবাইল সেটে ইন্টারনেট ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা দেশের গোপনীয়তা ফাঁস করছে বহির্বিশ্বে।
জানা যায়, এক শ্রেণীর কর ফাঁকিবাজ দালাল রোহিঙ্গা শিবিরগুলোকে মোবাইল বিক্রির প্রধান ও নিরাপদ মার্কেট হিসেবে বেছে নিয়েছে। মোবাইল ফোনের বাজারের একটি বড় অংশই শুল্ক ফাঁকিতে আনা মোবাইলের দখলে চলে গেছে। বৈধভাবে আমদানিতে উচ্চ শুল্কের কারণে অসাধু মোবাইল ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে এ পথ বেছে নিয়েছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তা ঝুঁকিও। এ কাজে জড়িত রয়েছে পুরনো রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার সদরসহ রোহিঙ্গা শিবিরে আইফোনের তুলনায় অন্য ব্র্যান্ডের অবৈধ স্মার্টফোন বেশি। এ খাতে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হলেও এসব অবৈধ ফোনের দিকে গোয়েন্দাদের নজর নেই বললেই চলে। ফলে বাজারে অবৈধ স্মার্টফোনের ছড়াছড়ি। এছাড়া এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ঢাকা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার ও রোহিঙ্গা শিবিরভিত্তিক গঠিত সিন্ডিকেট অনলাইনের বিভিন্ন সাইটেও বিক্রি করছে এসব অবৈধ মোবাইল সেট। এতে বৈধপথে যেসব ব্যবসায়ীরা ফোন আমদানি করছে, তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
সূত্রে জানা যায়, সব থেকে বেশি স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন আমদানি করা হয়। আর স্যামসাংয়ের ৮০ শতাংশ ফোন আসে অবৈধভাবে। এই তালিকায় নাম রয়েছে এইচটিসি, ভিভো, শাওমি ও ওপোও। অনুসন্ধানে জানা যায়, রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ছাড়াও রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আনা মোবাইল বিক্রি হয়ে থাকে কক্সবাজার শহরের বিলকিস মার্কেট, এবি মার্কেট, কোরাল রীফ প্লাজা, জিলানী মার্কেট, আছাদ কমপ্লেক্সসহ ৮ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। এসব স্থানে ও রোহিঙ্গা শিবির অভ্যন্তরে অনেকেই শো-রুম খুলে বিক্রি করছে লাগেজ মোবাইল। শহরের সবচেয়ে বড় মোবাইল বিক্রির বাজার বিলকিস মার্কেট ও কোরাল রীফ প্লাজা। এখানে প্রতিমাসে বিক্রি হয় প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মোবাইল ফোন। তারমধ্যে অধিকাংশ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা লাগেজ ফোন। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ঢাকার অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে রোহিঙ্গা শিবির ও কক্সবাজারে এসব মোবাইল আনা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অবৈধ মোবাইল বিক্রির সিন্ডিকেটের মধ্যে লাগেজ মোবাইল বর্ডার ক্রস করে সরাসরি কক্সবাজার এনে দিয়ে যায় ইমরান ও ফয়সাল নামে দুই ব্যক্তি। শামসু নামে এক ব্যবসায়ী লাগেজ মোবাইল এনে সরাসরি কোরাল রীফের ব্যবসায়ী ইমরান ও ফয়সালের হাতে তুলে দেয়। তারপর ইমরান ও ফয়সালই জেলাজুড়ে অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে হাতবদল করে থাকে এসব অবৈধ মোবাইল সেট। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে লাগেজ মোবাইলগুলো আসে। শামসুর সঙ্গে ভারতের চোরাকারবারিদের গভীর সখ্য রয়েছে। তার হাত ধরেই বেশ জমজমাট কক্সবাজারে চোরাই মোবাইল মার্কেটগুলো। সম্প্রতি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ বিপুল পরিমাণ চোরাই মোবাইলসহ পেকুয়া থেকে দুই সহোদরকে আটক করেছে। এই অভিযানের পর বেশ সাবধানে পা ফেলছে অসাধু মোবাইল ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা যারা বৈধপথে স্মার্টফোন আনছি, তাদের এখন পথে বসতে হচ্ছে। কারণ বাজারে ৫০ শতাংশ স্মার্টফোন শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসছে। ফলে তারা আমাদের থেকে অনেক কম দামে স্মার্টফোন বিক্রি করছে। তাই ক্রেতাদের উপস্থিতি তাদের কাছেই বেশি।শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা স্মার্টফোনের এক বিক্রেতা বলেন, ভারত বাংলাদেশের সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে স্যামসাং, এইচটিসি, শাওমি ও ওপোর অবৈধ স্মার্টফোন আসে বেশি। এছাড়া চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজার ও লাগেজ পার্টির মাধ্যমেও অনেক ফোন আসছে কক্সবাজার ও রোহিঙ্গা শিবিরে। এই ফোন আনা চক্রের সঙ্গে অনেকেই জড়িত আছে।