ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

মাদকাসক্তির প্রমাণ

ডিএমপির ১০ সদস্য চাকরিচ্যুত, ১৮ জন সাসপেন্ড

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ২৩ নভেম্বর ২০২০

ডিএমপির ১০ সদস্য চাকরিচ্যুত, ১৮ জন সাসপেন্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাদকাসক্তির প্রমাণ পাওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের ১০ সদস্যকে চাকরিচ্যুত এবং ১৮ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর ৪৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনারের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা (ইন্টেলিজেন্স এ্যানালাইসিস ডিভিশন-এনআইডি) পুলিশের মাদক সেবন ও মাদক কারবারে সম্পৃক্ততার বিষয় তদন্ত শুরু করছে। রবিবার পর্যন্ত ডোপ টেস্টে পজিটিভের সংখ্যা ৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় তাদের সবার বিরুদ্ধেই একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জনকণ্ঠকে জানান, বর্তমান পুলিশ কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম গত বছর সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নেয়ার পর পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করার ঘোষণা দেন। তাতে এ পর্যন্ত ৬৮ জনের মাদক নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৭ এসআই, এক সার্জেন্ট, ৫ এএসআই, ৫ নায়েক এবং ৫০ কনস্টেবল। তাদের মধ্যে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের বিভাগীয় মামলা করা হয়। ১৮ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মামলা নিষ্পত্তি শেষে ওই ১৮ জনের মধ্যে ১০ জনকেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এই পুলিশ সদস্যদের কারও কারও বিরুদ্ধে কেবল মাদক সেবন নয়, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকা, মাদক দিয়ে কাউকে ফাঁসানো, উদ্ধার করা মাদক জব্দ তালিকায় কম দেখানোর মতো অভিযোগও রয়েছে। ডিএমপি উপ-কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন জানান, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। মাদকের ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলি। এখানে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মাদকের সঙ্গে জড়িত বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ২৫ জনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, মাদক বিক্রয়, সেবন এবং মাদক দিয়ে ফাঁসানোসহ উদ্ধারকৃত মাদক তুলনায় কম দেখানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছন ডিএমপির আরও ২৯ সদস্য। এদের মধ্যে ইতোমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন ৬ পুলিশ সদস্য। এদের মধ্যে মাদক সংক্রান্ত অন্যান্য অভিযোগ যেমন মাদক বিক্রি অভিযুক্ত ১০, মাদক সেবনে অভিযুক্ত ৫, মাদক দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় অভিযুক্ত ১০ এবং উদ্ধারকৃত মাদক উদ্ধারের তুলনায় কম দেখিয়ে অর্থ গ্রহণের অভিযুক্ত ৪ জন। ডিএমপি সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য-সহিষ্ণুনীতি বাস্তবায়নে পুলিশ নিরলস কাজ করছে। এর ধারাবাহিকতায় মাদক সেবন ও এর কারবারে জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে এর আগে ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, মাদক সংশ্লিষ্টতায় শাস্তি দেয়ার আগে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। যারা নিজেদের শোধরায়নি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মহানগর পুলিশের মাদকাসক্ত কোন সদস্য আমার কাছে এলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। ডিএমপির পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে ডোপ টেস্ট করানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে নিজেদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ সদর দফতর। এর অংশ হিসেবে দুই মাস আগে ডিএমপি সদস্যদের ডোপ টেস্ট শুরু হয়। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনে নবসৃষ্ট ট্রাফিক মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয় উদ্বোধন শেষে ডিএমপি কমিশনার জানান, ডোপ টেস্টে যাদের পজিটিভ এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে বাকিদের জন্য সুস্পষ্ট বার্তা যাবে যে, আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। এ উদ্যোগের ফলে অনেকে ভাল হয়েছে। এ রাস্তা থেকে ফিরে এসেছে। তিনি জানান, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যারা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে বা মাদক ব্যবসায়ীকে সহযোগিতা করছে, সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনরকম শিথিলতা দেখানো হচ্ছে না।সাধারণ মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়, ঠিক সেভাবেই মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, ডিএমপির সদস্যদের মধ্যে মাদকাসক্ত হিসেবে সন্দেহভাজনদের তালিকা করে সিআইডির ল্যাবে তাদের রক্ত ও প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপি কমিশনারের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা (ইন্টেলিজেন্স এ্যানালাইসিস ডিভিশন-এনআইডি) পুলিশের মাদক সেবন ও মাদক কারবারে সম্পৃক্ততার বিষয় তদন্ত করছে। ডিএমপির বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বরতদের অনেকে মাদকাসক্ত হওয়ার পাশাপাশি মাদক কারবারিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকে বলেও তদন্ত উঠে এসেছে। তাদেরও তালিকা করা হচ্ছে।
×