ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আলমগীর সাত্তার

চাঁদ ॥ বাস্তবে কল্পনায়

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ২০ নভেম্বর ২০২০

চাঁদ ॥ বাস্তবে কল্পনায়

বর্তমানে আমরা যেদিকে তাকাই সেখানেই বিজ্ঞানের ছোঁয়া দেখতে পাই। প্রায় সব কিছুর সঙ্গে আছে বিভিন্ন ধরনের আবিষ্কারের সম্পর্ক। কিন্তু সব আবিষ্কার যে আমাদের উপকারে এসেছে এমন কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। বিগত এক শ’ বছর বা তার কিছুটা অধিককাল সময়ে যে সব আবিষ্কার আমাদের বেশি আলোড়িত করেছে, তার মধ্যে আছে এরোপ্লেন আবিষ্কার। এ্যাটম বোমা এবং হাইড্রোজেন বোমা আবিষ্কার, চাঁদে গিয়ে ওখানে পদার্পণ করে আবার নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসা ইত্যাদি। কোন কোন ক্ষেত্রে গবেষণা এবং আবিষ্কার করতে গিয়ে অকল্পনীয় অর্থ ব্যয়, বুদ্ধিমত্তা-পরিশ্রমের ফলস্বরূপ মানুষ লাভবান হয়েছে সামান্যই। এসবের মাঝে আছে চাঁদে যাওয়া-আসা। আর অল্প খরচে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছি, মানুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান লাভ করার বিষয়। মানুষকে আমরা যতটা বুদ্ধিমান বলে মনে করি হয়ত তারা তার চেয়ে বেশি। দুর্নীতি, অপকর্ম করার ব্যাপারে মানুষের মেধা দেখে তাজ্জব বনে যেতে হয়! আবার কল্যাণধর্মী কাজে অথবা আবিষ্কার এবং গবেষণার ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে সে বিষয়ে তাঁরা যেন অনেকটা অবুঝ। চাঁদে যাওয়ার জন্য যে অকল্পনীয় অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, তার ফলে আমরা দুটো বিষয়ে লাভবান হয়েছি। একটা হলো, প্রকৌশল বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি, আর একটা বিষয় হলো চাঁদে না গেলে আমরা জানতে পারতাম না যে ওটা কেবল ধূসর আকৃতির অতি বিশাল আকৃতির একটি মাটির ঢেলা। ওখানে বাতাস নেই। কোন প্রাণী নেই, গাছপালা, নদী-নালা নেই। তবে অতি সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞানীরা নাকি দেখেছেন, চাঁদের সূর্যালোকিত পৃষ্ঠের এক প্রান্তে বরফের মতো কিছু! চাঁদে যাওয়ার জন্য যে অপরিমেয় অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, তার একটি ক্ষুদ্রাংশও যদি বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয় তার সঙ্গে যুক্ত হতো তবে আমরা সুস্থ শরীরে এক শ’ বছর বা আরও বেশি দিন বাঁচতাম। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন বইয়ে পড়তাম। আমাদের দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ২২ বছর। এখন সেটা ৭৩ বছর। উন্নত দেশে প্রায় ৮০ বছর। চাঁদে যাওয়ার অর্থের আর একটি ক্ষুদ্রাংশ কৃষি গবেষণার জন্য বর্তমানের বরাদ্দকৃত অর্থের সঙ্গে যুক্ত হলে পৃথিবীতে কোন মানুষ অভুক্ত থাকত না এবং কেউ অপুষ্টিতেও ভুক্ত না। আমার বিশ্বাস চন্দ্রোদয়ের এবং চন্দ্রডুবির সৌন্দর্য এই ধরাপৃষ্ঠে বসে বহুদূর থেকেই উপভোগ করতে হবে। চন্দ্রালোকিত রাতে জ্যোৎস্নাপ্লাবিত প্রাকৃতিক পরিবেশে আবেগপ্রবণ হয় না এমন মানুষ কমই আছে। কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশে চাঁদ দেখা এবং শহরের ঝলমলে আলোর মাঝে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখার পার্থক্য অনেক। আমি একবার নিউইয়র্ক শহরের স্যালহায়নে রাতের বেলায় অনেক আলোর মাঝে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম পূর্ণিমার চাঁদ। কিন্তু সে চাঁদের কোন আলো ছিল না। সব আলো নিউইয়র্ক শহরের অতি উজ্জ্বল আলোর মাঝে হারিয়ে গিয়েছিল। অথচ ১৯৭১ সালে ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের ডিমাপুরে রানওয়ের পাশে আমরা যে দোতলা ডাকবাংলোয় অবস্থান করছিলাম সে ডাকবাংলোর বারান্দায় দাঁড়িয়ে চারদিকের পাহাড় এবং গভীর জঙ্গলের পেছনে দিয়ে পূর্ণিমার বৃহদাকারের চাঁদ উঠতে দেখে আমার মনে হয়েছিল, এর আগে পৃথিবীতে অমন সুন্দর কোন দৃশ্য আমি দেখিনি। (২) এবার আমি আকাশপথে চন্দ্রোদয় এবং চন্দ্রডুবি দেখার দুটি বর্ণনা দেব। আগে চন্দ্রডুবির বর্ণনা দিয়ে নেই। ১৯৮৭ সালে মুম্বাই থেকে একদিন মধ্যরাতের পর ডিসি-১০ প্লেনের ফ্লাইট নিয়ে এথেন্স যাচ্ছিলাম। আমরা পশ্চিমে যাচ্ছিলাম, চাঁদও পশ্চিমে যাচ্ছিল। তাই চাঁদের আপেক্ষিক গতিবেগ অনেক কমে গিয়েছিল। ভূমিতে বসে চাঁদকে দেখা আর পঁয়ত্রিশ হাজার ফুট উচ্চতায় বসে সম্প্রসারিত দেখতে চাঁদকে দেখা সম্পূর্ণ ভিন্নতর ব্যাপার। দুটোর দুরকমের সৌন্দর্য। নিচ থেকে আকাশে যখন চাঁদ উপর থেকে যখন দেখি তখন মেঘের উপর চাঁদের আলো কি করে পড়ে চারদিকটি স্নিগ্ধ আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। প্রসারিত দিগন্তে চাঁদ এবং পৃথিবীকে আরও বেশি রহস্যময়ী মনে হয়। রাত বারোটার কিছু পরে মুম্বাই থেকে যাত্রা করেছিলাম। তারপর আরব সাগর পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম মাস্কাটের ওপর। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের অনেকগুলো দেশ পাড়ি দিয়ে ভূমধ্যসাগরের উপকূলে পৌঁছলাম। যাত্রার আগে ঘুম হয়নি। তারপর এতটা পথ ফ্লাই করেছি। ঘুমে দুচোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। এমন সময় একজন যথার্থ সুন্দরী বিমানবালা চায়ের ট্রে হাতে ককপিটে প্রবেশ করলেন। নিচে বাঁদিকের একটি শহর দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ওটা কোন্ শহর? বললাম লেবাননের ত্রিপলি শহর। আরও দূরে দেখা যাচ্ছে বৈরুত শহরের আলো। পশ্চিম দিগন্তে হেলে পড়া চাঁদ ডুবে যাওয়ার আগে আকারে অনেক বড় হয়ে দেখা যাচ্ছিল। আর ভূমধ্যসাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশির মাঝে তার প্রতিবিম্বকেও তেমনি বড়ই দেখা যাচ্ছিল। ককপিটে আগন্তুক বিমানবালা চাঁদ এবং সাগরের মাঝে ওটার প্রতিবিম্বকে দেখিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, মনে হয় দুটি চাঁদ। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, কোন্টি আসল? বললাম একটু আগে ককপিটে যে চাঁদটির উদয় হয়েছে সেটিই আসল। অন্য দুটি নকল। সুন্দরী বিমানবালা আমার রসিকতায় লজ্জা পেয়ে চলে যাচ্ছিলেন। তাকে অনুরোধ করে আমার পেছনের আসনে বসালাম। ওই বিমানবালা যে যথেষ্ট সুন্দরী তা তো আগেই উল্লেখ করেছি। তিনি যে ভাল গান করেন এমন সুনামও ছিল তাঁর। তাকে অনেক অনুরোধ-উপরোধ করায় একটা গান শোনাতে রাজি হলেন এবং নাতি-উচ্চৈঃস্বরে গাইলেন; ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে উছলে পড়ে আলো। ......................।’ ত্রিশ বছর আগে ভূমধ্যসাগরের জলরাশির মাঝে চাঁদের অস্ত যাওয়া এবং যে বিমানবালা গানটি গেয়েছিলেন তার সুন্দর মুখাবয়ব এখনও আমার চোখে সমুজ্জ্বল হয়ে ভাসে। (৩) আমি প্রায় চল্লিশ বছর এয়ারলাইন্সের পাইলট হিসেবে চাকরি করেছি। ১৯৮৮ সালের গ্রীষ্মকালে প্যারিস থেকে ফ্ল্যাইট নিয়ে দুবাই আসছিলাম। ওই ফ্লাইটে এয়ার ফ্রান্সের ছব্বিশ-সাতাশ বছরের একজন এয়ারহোস্টেস ঢাকায় আসছিলেন। তার নাম ছিল মিস সিলভা। প্যারিস বিমানবন্দরে সে বাংলাদেশ বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার তার সঙ্গে আমাকে আলাপ করিয়ে দেন। ফ্রান্সের কয়েক ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলা বাংলাদেশের চট্টগ্রামে একটি অনাথ আশ্রম চলাতেন। বিগত শতকের আটের দশকে ইতালির কিংবদন্তি ফুটবলার বরার্তো ওই অনাথ আশ্রম পরিচালনার জন্য পঞ্চাশ হাজার ডলার সাহায্য বাবদ দিয়েছিলেন। মিস সিলভাও ওই আশ্রম পরিচালকদের একজন ছিলেন। তাই ছুটি পেলে তিনি প্রায়ই বাংলাদেশে আসতেন। অনাথ আশ্রমের জন্য তিনি সাহায্য বাবদ অর্থকড়ি সাহায্য দিতেন। ফ্লাইট চলাকালে একজন কেবিন ত্রুুর মাধ্যমে মিস সিলভা ককপিটে আসার ইচ্ছা আমাকে জানালেন। তিনি ককপিটে আসার পর তাকে চা-কফি দিয়ে আপ্যায়ন করা হলো। তিনি তার প্যারিসের টেলিফোন নম্বর, বাসার ঠিকানা লিখে দিলেন এবং বার বার অনুরোধ করলেন, প্যারিসে গেলে তার সঙ্গে যেন দেখা করি। আমি সম্মতি প্রকাশ করলাম। রাত তখন স্থানীয় সময়ের হিসাবে দুটো বা অড়াইটা হবে। আমরা তখন সিরিয়ার আকাশসীমায়। আমি আইএনএস যন্ত্রে কয়েকটি কো-অর্ডিনেট অর্থাৎ অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ সন্নিবেশ করতে ব্যস্ত ছিলাম। এমন সময় দেখলাম পুব আকাশে চাঁদ উঠছে। প্রতিবার আকাশে চাঁদ ওঠে আগের বারের চেয়ে ভিন্নরূপে। এ যাবতকাল চাঁদ ওঠার দৃশ্য দেখে প্রতিবার মুগ্ধ হলেও আজকের মতো এমন সম্মোহনকারী রূপ নিয়ে চন্দ্রোদয়ের দৃশ্য আগে কখনও দেখিনি। সাঁয়ত্রিশ হাজার ফুট উচ্চতায় ককপিটে বসে দেখছিলাম, নিচে অনেকদূর বিস্তৃত সমতল মেঘের বিস্তার। অমন মেঘকে আবহাওয়া বিজ্ঞানে বলা হয় স্ট্রেটাস ক্লাউড কয়েক দিন আগে পূর্ণিমা গিয়াছে। ওইদিন ছিল কৃঞ্চপক্ষের রাত। তাই ক্ষয়প্রাপ্ত চাঁদের ওপরের দিকের কোণাকৃতির একটি অংশ মেঘের স্তর ভেদ করে দিগন্ত রেখার ওপর উঠছিল। সম্পূর্ণ চাঁদ মেঘের বিস্তারের কারণে দেখা যাচ্ছিল না। চাঁদের শুধু এক কোণের শিরোভাগ দেখে মনে হচ্ছিল, যেন কোন আলোকস্তম্ভ মেঘের স্তর ভেদ করে উপরে উঠে আসছে। মিস সিলভা পেছন থেকে আমার কাঁধে হাত রেখে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, দেখুন কি অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য! চন্দ্রোদয়ের এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে ফ্রেঞ্চ সুন্দরীর মনে কতটা আবেগ সঞ্চারিত, আমি তার দিকে পেছন ফিরে না তাকিয়েও শুধু আমার কাঁধের ওপর তার হাতের স্পর্শেই তা বুঝতে পারলাম। সুন্দরী মেয়েদের আবেগপ্রবণ স্পর্শ এবং আবেগবিহীন স্পর্শের পার্থক্য বোঝার মতো বয়স এবং অভিজ্ঞতা অবশ্যই ততদিনে আমার হয়েছিল। আমি মিস সিলভাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তো এয়ার ফ্রান্সের ফ্লাইটে কেবিন ক্রু হিসেবে ফ্লাই করেন। আপনি আকাশপথে চলার সময় এর আগে কখনও চন্দ্রোদয়ের এমন দৃশ্য কি দেখেননি? না, কেবিন থেকে এমন দৃশ্য দেখা যায় না। তা ছাড়া এয়ার ফ্রান্সের যখন ফ্লাই করি তখন যাত্রী সেবায় এত ব্যস্ত থাকি যে, জানালার পাশে বসে মহাকাশের দৃশ্য দেখার বিলাসিতা করার সময় পাই না। আমি মিস সিলভাকে বললাম, দেখুন, এই মহাকাশের সৌন্দর্য বড় বিস্ময়কর। এর সৌন্দর্যের কোন সীমা-পরিসীমা নেই, এর রহস্যেরও সীমা নেই। তাই বাঙালী কবি লিখেছেন এবং বাঙালী গায়ক গেয়েছেন : ‘নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়।’ মিস সিলভাকে এর অর্থ ইংরেজীতে তর্জমা করে বুঝিয়ে বললাম। তিনি বললেন, কথাগুলো খুব সুন্দর। (৪) আমি আগেই উল্লেখ করেছি, নীল আমস্ট্রং, বাজ অলড্রিন এঁনারা চাঁদে পদার্পনণ করে দেখলেন, অমন অসুন্দর স্থান আর হয় না। আবার ধরাপৃষ্ঠে বসে দেখলে চাঁদের মতো সুন্দর আর কিছু এই বিশ্বে আছে কিনা, তাও আমাদের জানা নেই। তাই আমরা সুন্দরী মেয়েদের নাম রাখি; চন্দ্রমুখী, চন্দ্রাবলি। নীল আমস্ট্রং, বাজ অলড্রিনের পরে আমেরিকা আরও কয়েকজন এ্যাস্ট্রনটকে চাঁদে পাঠিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত উপলব্ধি করল, অমন অত্যধিক অর্থ ব্যয় করে ওখানে এ্যাস্ট্রনটদের পাঠানো এক প্রকার অর্থহীন ব্যাপার। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করতেই হবে, আর তা হলো চাঁদের আয়তন এবং পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব। এখন থেকে কয়েক শ’ কোটি বছর আগে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের কাঠিন্য যখন তেমন শক্ত হয়নি তখন পৃথিবীর (ঊনপঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ) একটি ক্ষুদ্র অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে চাঁদ নামের পৃথিবীর এই উপগ্রহটির সৃষ্টি হয়। প্রয়োজন বিনা বিশ্ববিধাতা কোন কিছুই সৃষ্টি করেন নাই। আমাদের নদ-নদী, সাগরে জোয়ার ভাটার প্রয়োজন আছে। ওই প্রয়োজনের জন্যই চাঁদের সৃষ্টি। চাঁদ নামের উপগ্রহটি সৃষ্টি করার পর এর আয়তন কতটা এবং পৃথিবী থেকে কত দূরত্বে এর অবস্থান হতে হবে, গতিবেগই বা কত হবে এসব বিষয়ে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তার অনেক অঙ্ক এবং হিসাব-নিকাশ করতে হয়েছিল। চাঁদের বর্তমান যে আয়োতন, সেটা তাঁর দ্বিগুণ হলে তবে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতো। জ্যোৎস্নার আলোর উজ্জ্বলতা হতো দ্বিগুণ এবং চাঁদের আলোর মায়াবী এবং স্নিগ্ধরূপ আর রইল না। চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে। তার ফলেই তো জোয়ার-ভাটা হয়। চাঁদের আয়তন বর্তমানের দ্বিগুণ হলে জোয়ারের সময় জলের উচ্চতা এবং ভাটির সময় নিম্নগামিতা এত বেশি হতো যে বিষয়টা হতো বিপর্যয়কর। চাঁদ বর্তমান আয়তন নিয়ে পৃথিবীর অনেক নিকটবর্তী হলেও অমন একই রকমের বিপর্যয়কর অবস্থা হতো। চাঁদের দূরত্ব কতটা হলে পৃথিবীর অবস্থা বিপর্যয়কর হবে না শুধু সেটাই বিবেচ্য বিষয় ছিল না। চাঁদের গতিবেগ কতটা হলে সেটা চব্বিশ ঘণ্টায় পৃথিবীটাকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসবে সে হিসাবটাও সৃষ্টিকর্তাকে করতে হয়েছিল। বিগত শতকোটি বছরব্যাপী ওই নির্দিষ্ট গতিবেগেই চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে এবং আরও শতকোটি বছর ঘুরবে। এ বিষয়ে বিন্দুবিসর্গ ভুল হবে না। চাঁদ দেখা কমিটি বৈঠকে না বসলেও চাঁদ নির্দিষ্ট সময়ে প্রয়োজনীয় উজ্জ্বলতা নিয়ে উদয় হবে। চাঁদ দেখা কমিটির সঙ্গে চাঁদের কোন বিশেষ সম্পর্ক আছে এমন তথ্য আমার জানা নেই।
×