ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লালমনিরহাটে কোরান অবমাননা ॥ পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ০১:২৩, ৩০ অক্টোবর ২০২০

লালমনিরহাটে কোরান অবমাননা ॥ পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ২৯ অক্টোবর ॥ পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মসজিদে কোরান শরিফ অবমাননা করার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে শহীদুল নবী জুয়েল (৫০) নামের একজনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার পর গায়ে পেট্রোল ও খড়িতে আগুন জ্বালিয়ে পৈশাচিক কায়দায় পুড়ে মেরেছে। এ সময় সুলতান যোবাইর আব্দার (৫১) নামে একজনকে বিক্ষুব্ধ জনতার হাত হতে পুলিশ রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করেছে। তারও অবস্থা আশঙ্কাজনক। জানা যায়, উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় বাজার মসজিদে এই দুই ব্যক্তি প্রবেশ করে আছরের নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে উপস্থিত মুসল্লি ও ইমামকে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দেয়। সেই সঙ্গে মসজিদের ভেতরে থাকা অবৈধ অস্ত্র বের করে দিতে বলে। এই নিয়ে বাগবিত-ার পর একপর্যায়ে তারা নিজেরাই মসজিদের ভেতরে পবিত্র কোরান শরিফ ও হাদিসের বই রাখার তাকে অস্ত্র খুঁজতে থাকে। তাড়াহুড়া করে অবৈধ অস্ত্র খোঁজায় বইয়ের র‌্যাকে রক্ষিত কয়েকটি পবিত্র কোরান শরিফ নিচে মাটিতে পড়ে যায়। তখন তারা পবিত্র কোরান শরিফের ওপর পা রেখেই একটু উঁচতে থাকা বইয়ে তাকে অস্ত্র খুঁজতে থাকে। এই ঘটনায় মুসল্লিগণ প্রতিবাদ করে। তখন মসজিদের ভেতরে থাকা মুসল্লিগণ উত্তেজিত চিৎকার চেঁচামেচি করে। ঘটনাটি মসজিদের বাইরে বাজারের থাকা লোকজন শুনতে পায়। তারা মসজিদের ভেতরে দুই ব্যক্তিকে ঘিরে ফেলে। সেখানে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও কয়েকজন উত্তেজিত মুসল্লি এবং বিক্ষুব্ধ জনতার হাত হতে ব্যক্তিদ্বয়কে উদ্ধার করে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরের কক্ষে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেয়। এদিকে কোরান শরিফে পা রাখার খবর মুহূর্তের মধ্যে গ্রামে ও বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে অতি উৎসাহী কিছু যুবক হঠাৎ কোথা হতে আসে। তারা আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে ইউপি পরিষদের কক্ষের দরজা ভেঙ্গে আটক নিরাপদে থাকা দুই ব্যক্তিকে লাটি দিয়ে গণপিটুনি দিতে থাকে। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই দুইজনের মধ্যে শহীদুল নবী জুয়েল গণপিটুনিতে মারা যায়। তখন উত্তেজিত জনতা নিহত জুয়েলের নিথর দেহে পেট্রোল, কেরোসিন তেল ও কাঠ-খড়ি দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। নিহতের নাম পাওয়া গেছে। তার বাড়ি রংপুরের শাল বনে। বাবার নাম পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁচ্ছে গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত জখম অবস্থায় সুলতান যোবাইর আব্দার (৫১) নামের এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে। তার বাড়ি রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায়। পিতা মৃত শেখ আব্বাস আলী। পরে উত্তেজিত জনতা ও মুসল্লিগণ বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করে রাখে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইউপি ভবনটির দরজা জানালা ও আসবাবপত্র ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে। নথিপত্র তচনছ করা হয়েছে। অনেক নথিপত্র জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত মুসল্লিকে শান্ত করেছে। বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করে গ্রামটিতে শোডাউন করেছে। এই ঘটনায় পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত মোহন ম-ল জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। গ্রামটিতে পুলিশ পাহাড়ায় রাখা হয়েছে। গুরুতর আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে প্রথমে পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে ঘটনাটি পবিত্র কোরান শরিফ অবমাননার কারণে ঘটেছে।
×