ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উপজেলা ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের ওপর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা নেই

বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্বার্থেই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জিএম কাদেরের

প্রকাশিত: ১৭:০১, ২৯ অক্টোবর ২০২০

বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্বার্থেই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জিএম কাদেরের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংবিধান থেকে ৭০ অনুচ্ছেদ উঠিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, এর ফলে একনায়কতন্ত্রের ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জি এম কাদের এ দাবি জানান। জাপার ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। জি এম কাদের বলেন, অনেকেই এরশাদকে স্বৈরাচার বলে থাকেন। গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে সংবিধান থেকে ৭০ ধারা তুলে দিতে হবে। তিনি বলেন, ৭০ ধারার কারণে সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে দলীয় প্রধান সরকার প্রধান হন, এতে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কোন সংসদ সদস্য ভোট দিতে পারেন না। দলীয় প্রধান যা বলেন, তাই কার্যকর হয়। তাই ৭০ ধারায় একনায়ক তন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা স্বৈরতন্ত্রের পর্যায়ে পরে। এতে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা থাকে না। আর জবাবদিহিতা না থাকলে সুশাসন নিশ্চিত হয় না। সুশাসন নিশ্চিত করতে ৭০ ধারা তুলে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা দেশে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং দেশকে আটটা প্রদেশে ভাগ করতে হবে। আনুপাতিক হারে নির্বাচনে যে দল যত ভোট পাবে, সেই দল সংসদে ততটা আসন পাবে, এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করত হবে। এরশাদ প্রবর্তিত উপজেলা পদ্ধতি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ উপজেলাপদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে আদালতকেও উপজেলা পর্যায়ে আনতে হবে বলে মত দেন তিনি। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সাংসদ সংসদে তাঁর দলের বিপক্ষে ভোট দিলে তাঁকে সংসদ সদস্যপদ হারাতে হয় একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংসদে সকলের নিজস্ব মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া উচিত। দল সব কাজ ঠিক করবে এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি যদি মনে করি দলের পক্ষ থেকে দেয়া প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়, তবে কেন বিরোধীতা করতে পারব না। তাছাড়া নিজের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেয়া হলে পরিকল্পনা আরো সমৃদ্ধ ও গণমুখী হতে পারে। এখন যাঁরা উপজেলা প্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের মতো কাজ করতে পারেন না, বলে দাবি করেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, উপজেলা প্রতিনিধিদের অধীনেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করতে হবে। এতে আমলা ও সরকারি কর্মকর্তাদের ভয়ের কিছু নেই। রাজনীতিবিদেরা খারাপ কাজ করলে জনগণ ভোট দিয়ে তার জবাব দেবেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্বার্থেই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর নয়। তাই, ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে দেশের সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে সংসদে। বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় শুধু বড় দুই থেকে তিনটি দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। তিনি বলেন, সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের মতই যদি সারাদেশের ভোটের অনুপাতিক হারে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় তাহলে গণমানুষের আশা-আকাংখার প্রতিফলন হবে। কাদের আরো বলেন, জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদের স্বপ্নের ফেডারেল সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, ১৮ থেকে ২০ কোটি মানুষের জন্য এককেন্দ্রীক সরকার ব্যবস্থায় সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ফেডারেল সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে প্রশাসন, বিচার, স্বাস্থ্যসহ সকল সেবা নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, গণমানুষের পভাটের রায় সবসময় মঙ্গলময়। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে কখনো ভুল করেনা। ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে ভোটে কালো টাকার খেলা বন্ধ হবে। নির্বাচনে খুনা-খুনি হবে না। কাদের বলেন, ৯১ সালের নির্বাচনের পর একটি আদেশে তৎকালীন বিএনপি সরকার গণমানুষের প্রত্যাশার উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। কিন্তু পরবর্তী সরকার গণদাবি মেনে আবারো উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থা পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এতে স্বপ্নের উপজেলা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বর্তমান উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এতে আমলাতন্ত্রের ওপর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা নেই বললেই চলে। বর্তমান উপজেলা ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষকে বোকা বানানো হয়েছে, সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। জাতীয় ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন প্রতি বছর ২৩ অক্টোবর জাতীয়ভাবে উপজেলা দিবস পালন করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, আলমগীর সিকদার লোটন, নূরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, গোলাম মোস্তফা, আব্দুল হামিদ ভাসানী, ফখরুল আহসান শাহজাদা, বেলাল হোসেন, একেএম আশরাফুজ্জামান খান, হেলাল উদ্দিন, এনাম জয়নাল আবেদীন, মিজানুর রহমান প্রমুখ। এদিকে হযরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস “ঈদে মিলাদুন্নবী” (সাঃ) উপলক্ষে বাংলাদেশ সহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিশ্বনবীর জন্মদিনে এক বাণীতে বিশ্ববাসীর প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।
×