ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হলেন সাকিব

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২৯ অক্টোবর ২০২০

নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হলেন সাকিব

মিথুন আশরাফ ॥ অপেক্ষার প্রহর শেষ। বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হয়ে গেছেন। ক্রিকেট থেকে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। আজ থেকেই মুক্ত সাকিব। এখন সাকিব আবার ক্রিকেট খেলতে নামতে পারবেন। মহা আনন্দের খবর। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য মহাখুশির খবর। সাকিবের জন্য তো খুশি বটেই। তিনি একজন পেশাদার ক্রিকেটার। অথচ ছোট্ট একটি ভুলে এক বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হয়। ম্যাচ গড়াপেটা করেননি। কিন্তু তিনবার ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব পেয়ে তা আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের কাছ থেকে গোপন রাখায় ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য দূরে থাকেন। আজ থেকে মুক্ত তিনি। এখন সব ধরনের ক্রিকেট কার্যক্রমে আবার যুক্ত হতে পারবেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাকিব আবার দ্রুতই মাঠে ফিরবেন। সেটি আগামী মাসে নবেম্বরেই হতে পারে। বিসিবির টি২০ টুর্নামেন্ট দিয়েই সাকিবের মাঠে ফেরা হয়ে যেতে পারে। এই এক বছরে সাকিবকে খুব বেশি ক্রিকেট অবশ্য হাতছাড়া করতে হয়নি। কারণ, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সব খেলাই বন্ধ ছিল। মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরু হলে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্বেও এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সব খেলাই বন্ধ থাকে। সাকিবের নিষিদ্ধ হওয়ার পর ভারতের বিরুদ্ধে তিন টি২০, দুটি টেস্ট, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুটি টি২০, দুটি টেস্ট, জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে এক টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও দুটি টি২০ ম্যাচসহ মোট ৭ টি২০, ৫ টেস্ট ও তিন ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। এরপর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক ওয়ানডে, এক টেস্ট, আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন ওয়ানডে, চার টি২০, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুটি টেস্ট, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি টেস্ট, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন টেস্ট খেলার কথা ছিল। সঙ্গে এশিয়া কাপ টি২০, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন টি২০ এবং টি২০ বিশ্বকাপও খেলার কথা ছিল। এই সবকটি ম্যাচই সাকিব খেলতে পারতেন না। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কোন ম্যাচ, সিরিজ, টুর্নামেন্টই খেলা হয়নি বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের। তাতে করে সাকিবেরও এইসব ম্যাচ, সিরিজ, টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলো হাতছাড়া হয়নি। এই সময়টিতে সাকিব বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রেই ছিলেন। পরিবারের কাছে ছিলেন। এখনও আছেন যুক্তরাষ্ট্রেই। ৪ নবেম্বর দেশে ফিরতে পারেন। এই মাসে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার মাটিতে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কার কঠোর কোয়ারেন্টাইন ইস্যুতে সিরিজ হয়নি। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর এই সিরিজ দিয়েই সাকিবের ক্রিকেটে ফেরার কথা ছিল। সিরিজ না হওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দিয়ে সাকিবের ফেরার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়। এ বছর আর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবে না। তাতে করে এ বছর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে সাকিবকেও দেখা যাবে না। তবে আগামী বছর শুরুতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে সিরিজ রয়েছে। সেই সিরিজেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবার খেলতে দেখা যাবে সাকিবকে। গত বছর সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছিলেন সাকিব। এরপর গত বছর ২৯ অক্টোবর ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন। এক বছর পর আজ মুক্ত হলেন সাকিব। সব ধরনের ক্রিকেট থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) আসলে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল সাকিবকে। আইসিসিরি দুর্নীতিবিরোধী নিয়ম বা এ্যান্টি করাপশন কোড লঙ্ঘনের তিনটি অভিযোগ স্বীকার করে নেয়ার পর সাকিবকে নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় আইসিসি। আইসিসির ওয়েবসাইটে এই সিদ্ধান্তটি জানানো হয়। ম্যাচ ফিক্সিং-এর প্রস্তাব পাওয়ার পর সেটা গোপন করার অভিযোগে তাকে এই সাজা দেয়া হয়। দুই বছরের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা থাকে। নবেম্বরে ভারত সফরের আগেই সাকিবকে নিষিদ্ধ করা হয়। আইসিসি তখন জানায়, আগামী এক বছর তিনি খেলতে পারবেন না, কিন্তু তিনি যদি সাজার সব শর্ত মেনে চলেন তাহলে তিনি ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে মাঠে ফিরে আসতে পারবেন। তবে সাকিব এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবেন না। সাকিব সেই পথে হাঁটেনি। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়ের মধ্যে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে দুইবার ও ২০১৮ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (সাকিব এই দলে খেলেন) ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যকার ২৬ এপ্রিলের ম্যাচে একবার দুর্নীতির প্রস্তাব দেয়া হয় সাকিবকে। তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়াননি। কিন্তু সাকিব সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ আইসিসির এ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে জানাননি। এখানেই সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে যায় সাকিবের। তাতে শাস্তিও ভোগ করতে হয় সাকিবকে। তখন আইসিসি থেকে সাকিবকে জানিয়েও দেয়া হয় সাকিবকে সন্তুষ্ট করতে হবে যে তিনি আর অপরাধের পুনরাবৃত্তি করবেন না। আইসিসির দেয়া বিবৃতিতে সাকিব এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি খুব দুঃখিত, আমার নিষেধাজ্ঞার জন্য। আমি খেলাটি ভালবাসি, তবে আমার বিরুদ্ধে আনা দায় আমি মেনে নিয়েছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইসিসির যে অবস্থান সেখানে আমি আমার দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারিনি। বিশ্বের সব খেলোয়াড়ের মতো আমিও চাই ক্রিকেট খেলাটা যেন দুর্নীতিমুক্ত থাকে। সামনের দিনগুলো আইসিসির এ্যান্টি করাপশন ইউনিটের সঙ্গে তাদের দুর্নীতিবিরোধী প্রোগ্রামে কাজ করতে আগ্রহী। আমি এটি নিশ্চিত করতে চাই যে, আমার মতো ভুল যেন কোন তরুণ খেলোয়াড় ভবিষ্যতে না করে।’ আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার এ্যালেক্স মার্শাল বলেছিলেন, ‘সাকিব অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটার, সে অনেক প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন, এটা তার দায়িত্ব ছিল এই প্রস্তাবগুলো রিপোর্ট করা।’ মার্শাল আশা করেছিলেন, সাকিব আর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন না এবং ভবিষ্যতে আইসিসির দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করবেন। সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পর ক্রিকেটার, কোচ এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) তার পাশে থাকে। সাহস দিয়ে যায়। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন যেমন বলেছিলেন, ‘সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞায় আমিও ব্যথিত। এরচেয়ে বেশি ব্যথিত হওয়ার কিছু হতে পারে, তা আমার জানা নেই। সাকিবের মতো খেলোয়াড় আমরা পাব কিনা জানি না। সাকিব খেলতে না পারার মতো হতাশ আর কেউ হতে পারে না। সাকিবকে নিয়েই আমাদের সব পরিকল্পনা ছিল। বাংলাদেশে ক্যাপ্টেনসিতে মাশরাফি এবং খেলোয়াড় সাকিব, এদের কোন তুলনা হয় না। সাকিব এই মুহূর্তে খুব খারাপ সময় অতিক্রম করছে। আশা করি সকলের সহযোগিতায় তা কেটে উঠবে। বিসিবির পক্ষ থেকে সাকিবকে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।’ সেই সহযোগিতা করাও হয়েছে।
×