ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ২৮ অক্টোবর ২০২০

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা

কোভিড-১৯ মহামারীতে বিপর্যস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত জাতীয় অর্থনীতির সমূহ ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আশাবাদের একটা জায়গা এই যে, গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছিল। করোনা মহামারীর কারণে তা নেমে গিয়েছে ৫ দশমিক ২০ শতাংশে। অবশ্য বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-এডিবির প্রাক্কলন ছিল আরও কম। তবু দেশে ধান-চাল বিশেষ করে বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং সরকারের গতিশীল আর্থিক নীতিসহ বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমাণে নগদ প্রণোদনা ও আনুষঙ্গিক সহায়তা প্রদানের ফলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আগামীতে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারসহ জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার অগ্রসর হচ্ছে অষ্টম পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে। এতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন, রফতানিমুখী শিল্প স্থাপনসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ সর্বোপরি দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বারোপ। এই সমন্বিত পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। সরকারের এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, যা চূড়ান্ত করা হবে আগামী নবেম্বরে। ইতোপূর্বে কোভিড-১৯ মহামারীজনিত দীর্ঘ লকডাউন ও শাটডাউনে বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ মন্দা সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থা। তাতে বিশ্বের প্রায় সব দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা ঋণাত্মক হবে বলেও বলা হয়েছে, যা অযৌক্তিক ও অসঙ্গত নয়। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রকাশিত সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছে। এ সময়ে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। উল্লেখ্য, এ সময়ে ভারতের মাথাপিছু আয় হবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার। এক্ষেত্রে এডিবির প্রাক্কলন ৬.৮ শতাংশ হলেও বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮.২ শতাংশ। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে বিশ্বের ২২টি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হবে, তার মধ্যে শীর্ষ তিনটি দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। অন্য দুটি দেশ গায়ানা ও দক্ষিণ সুদান। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ। করোনাজনিত ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গড় জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা ঠিক রেখে এবার প্রণয়ন করা হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট। এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে বিশ্বব্যাংকের আশঙ্কা অমূলক হলেও হতে পারে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। দেশে প্রবাসী আয় তথা রেমিটেন্স ও রিজার্ভের ক্ষেত্রে তীব্র আশার সঞ্চার হয়েছে। রিজার্ভ অতিক্রম করেছে ৪০ বিলিয়ন ডলার। তৈরি পোশাকের ৮০ শতাংশ ক্রয়াদেশ ফিরেছে। নতুন কার্যাদেশও আসছে তুরস্ক ও জাপান থেকে। বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় খাদ্যের মজুদও সন্তোষজনক। সরকার পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা বন্দর ও বিদ্যুত কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগও আসছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। এই ধারা অব্যাহত থাকলে মন্দাবস্থা মোকাবেলা করে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব হবে না। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এরই প্রতিফলন ঘটবে বলে প্রত্যাশা।
×