ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্যামসাং চেয়ারম্যান লি কুন হি আর নেই

প্রকাশিত: ২২:০৫, ২৬ অক্টোবর ২০২০

স্যামসাং চেয়ারম্যান লি কুন হি আর নেই

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী স্যামসাং গ্রুপের চেয়ারম্যান লি কুন হি আর নেই। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। রবিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের সময় লি কুন হি’র পাশে ছিলেন তার সন্তান ও স্যামসাংয়ের ভাইস চেয়ারম্যান লি জে ইয়ং। তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কিত কোন তথ্য এখনও দেয়নি প্রতিষ্ঠান বা তার পরিবার। খবর বিবিসির স্যামসাং জানায়, লি রবিবার মারা যান। এ সময় তার পাশে তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে লি’র মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানায়নি স্যামসাং। ২০১৪ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আমরা স্যামসাংয়ের সবাই তার স্মৃতিকে ধরে রাখব এবং তার সঙ্গে আমাদের যে পথচলা সেটার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’ ১৯৩৮ সালে লি বায়ুং চুল স্যামসাং প্রতিষ্ঠা করেন। লি ছিলেন স্যামসাং প্রতিষ্ঠাতার তৃতীয় সন্তান। লি কুন হি ১৯৬৮ সালে পারিবারিক এই প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দেন। এরপর ১৯৮৭ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এক সময় সস্তা, নিম্নমানের পণ্যের উৎপাদনকারী হিসেবে পরিচিত ছিল স্যামসাং। কিন্তু তার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে স্যামসাংয়ে। স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সকে বর্তমানের অবস্থায় নিয়ে আসতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছেন লি কুন হি। সস্তা টিভি ও গৃহস্থালী পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে স্যামসাংকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী প্রযুক্তি ব্র্যান্ডের রূপ দিয়েছিলেন তিনি। স্যামসাংয়ের পাশাপাশি নিজেও গড়ে উঠেছিলেন, খেতাব পেয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ ধনীর। উল্লেখ্য, পুরো দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জিডিপির এক পঞ্চমাংশই আসে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স থেকে। ফোর্বসের মতে, দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি লি কুন হি’র সম্পদের পরিমাণ ২১ বিলিয়ন ডলার। ‘নতুন ব্যবস্থাপনার’ সঙ্গে স্যামসাংকে ১৯৯৩ সালে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন লি কুন হি। স্যামসাং জানিয়েছে, তার ওই ব্যবস্থাপনাই বৈশ্বিক সমাজকে এগিয়ে নিতে সেরা প্রযুক্তি সরবরাহের প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যকে উদ্বুদ্ধ করেছে। ১৯৯৩ সালে লি কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘চলুন আমরা সবকিছু বদলে ফেলি, শুধু আমাদের সহধর্মিণী এবং সন্তান-সন্ততি ছাড়া।’ তার এই উক্তির কারণে তিনি বিখ্যাত হয়ে যান। এরপর প্রতিষ্ঠানটি তার গুদামে মজুদ থাকা দেড় লাখ মোবাইল হ্যান্ডসেট পুড়িয়ে ফেলেন। আইনী জটিলতার কবলেও পড়েছিলেন সদ্য প্রয়াত এ স্যামসাং চেয়ারম্যান। ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে ঘুষ প্রদানের অভিযোগ এসেছিল তার নামে। আর ২০০৮ সালে তোলা হয়েছিল কর ফাঁকি ও জালিয়াতির অভিযোগ। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি অপরাধ থেকেই ক্ষমা পেয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় ক্ষমার সময় দক্ষিণ কোরিয়ার বিচারমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘তিনি যাতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিতে নিজ পদে ফিরতে পারেন এবং ২০১৮ সালে পিয়ংচ্যাংয়ে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিকের জন্য ভাল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন’ সে লক্ষ্যেই কাজটি করেছেন তারা। জানা গেছে, লি কুন হি’র মৃত্যুতে স্যামসাংয়ের ভার নিয়েও কথা উঠবে আবার। অনেকদিন ধরেই লি কুন হি’র সন্তান লি জে ইয়ংকে স্যামসাংয়ের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছিল। কিন্তু তিনিও নানাবিধ আইনী জটিলতায় জড়িয়ে পড়েছেন। মাঝখানে দুর্নীতির দায়ে প্রায় এক বছর কারাদণ্ডও ভোগ করেছেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার আইন অনুসারে লি’র সম্পদ বিবেচনায় নিয়ে উত্তরাধিকার কর বাবদ শত শত কোটি ডলার গুনতে হবে তাকে। ফলাফল হিসেবে প্রতিষ্ঠানে নিজ মালিকানা অংশও বাধ্য হয়ে কমিয়ে ফেলতে হতে পারে লি’কে।
×