ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মতবিনিময় শেষে কাদের

দ্রব্যমূল্য সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকার কাজ করছে

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ২৪ অক্টোবর ২০২০

দ্রব্যমূল্য সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকার কাজ করছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, দ্রব্যমূল্য ওঠানামার পেছনে বাজারে একটা সিন্ডিকেট সব সময় কাজ করে। তবে সরকার সিন্ডিকেটের কাছে হেরে যাচ্ছে এ কথাটা ঠিক নয়। শুক্রবার ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সেখানে তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন। আওয়ামী লীগ টানা দুই মেয়াদ শেষ করে তৃতীয় মেয়াদে সরকারে আছে, তারপরও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেটের কাছে হেরে যাচ্ছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের সার্বিক পরিস্থিতির দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আপনারা প্রতিবেশী সব দেশের দিকে তাকান, এই করোনা পরিস্থিতিতে বাজারমূল্য, কোথাও আমদানি-রফতানিতে আগের পর্যায়ে কেউ নেই এবং এখানে উৎপাদনেরও একটা ব্যাপার আছে। পেঁয়াজ যদি আমাদের দেশে ঘাটতি থাকে, সেটা আমরা কাছের দেশ ভারত থেকে আনি। আমাদের সরকারের চেষ্টার ফলে ভারতীয় পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও ওঠানামা করবে। এখন বর্ষা, এ সময়ে একটু দ্রব্যমূল্য বাড়ে, আবারও এগুলো ঠিক হয়ে আসে।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার কোন অপরাধীকে ছাড় দিচ্ছে না। এই যে ধর্ষণবিরোধী, নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলন-সেখানেও আমাদের পার্টি আছে। ধর্ষণ-নারী নির্যাতনের সঙ্গে যারাই জড়িত, কোন অপারাধীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড় দেননি। কোন প্রকার আপোস করা হয়নি। করোনার কারণে দেশে-বিদেশে পারিবারিক সহিংসতা, সামাজিক অবক্ষয় বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বৃটেনের মতো দেশে ৫৫ হাজার নারী ধর্ষিত, নির্যাতিত হয়েছে। করোনার জন্য সারাবিশ্বে পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে গেছে। নারীরা বেশি শিকার হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশের হিসাবে এক বছরে এক হাজার ধর্ষণ-নির্যাতনের কথা আপনি আনতে পারেন। কিন্তু বৃটেনের মতো দেশে এই যে ৫৫ হাজার নারী নির্যাতিত হয়েছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকারের পদত্যাগের দাবি কেউ করেনি।’ বিএনপির আন্দোলনের আহ্বান নিয়ে কটাক্ষ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তারা বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে বারবার বিফ্রিং করে আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন। পরীক্ষার পরে আন্দোলন, রোজার ঈদের পরে আন্দোলন, কখনও কোরবানির পরে আন্দোলন; কত রোজা গেল, ঈদ কত গেল, কত পরীক্ষা চলে গেল, এই বছর না ওই বছর, আন্দোলন করে বিএনপি। আজকে বিএনপি মহাসচিবের কাছে জানতে চাই, আর সাংবাদিকদেরও বলতে চাই, আপনারা কি বিশ্বাস করেন যে বিএনপির আন্দোলনের হাঁকডাকে আষাড়ে তর্জন-গর্জনই সার? বেগম জিয়াকে মুক্ত করার জন্য এই বিএনপি ঢাকা মহানগরীতে একটা বড় বিক্ষোভ সমাবেশ করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতা, উদারতায় বেগম জিয়ার বয়সজনিত বিষয়টি চিন্তা করে তাকে আজকে কারাদন্ডাদেশ স্থগিত করে ছয় মাস। এটি বিএনপির আন্দোলনের ফসল নয়, এটা শেখ হাসিনার মানবিকতা এবং উদারতার দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, ‘বিএনপির পুনর্নির্বাচনের দাবি অযৌক্তিক। নির্বাচন এলেই সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপ করতে তাদের অপতৎপরতা শুরু হয়। তারা সব সময় নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে চায়। বিএনপির আন্দোলনের হাঁকডাক তর্জন-গর্জনই সার।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একটা কথা বলা হয়, এতদিন সব সাংগঠনিক কার্যক্রম নাকি বন্ধ ছিল। এ কথা ঠিক নয়। সাত মাস ধরেই আমাদের রাজনৈতিক সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল। সারাদেশে বন্যা মোকাবেলা, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বৈশ্বিক মহামারী করোনা মোকাবেলায় আমাদের নেতাকর্মীরা সারাদেশে সক্রিয় ছিল। আওয়ামী লীগ কোথাও অনুপস্থিত ছিল না। আমাদের সহযোগী সংগঠনগুলো কৃষকদের ধান কেটে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। এগুলো তো আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডের বাইরে নয়। এগুলো আমরা আমাদের দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করেছি। শুধু আপনি এইটুকুই বলতে পারেন যে, করোনাকালে আমাদের কমিটি গঠন প্রক্রিয়াটা বন্ধ ছিল।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী মাস থেকে দলীয় কর্মকান্ড পুরোদমে শুরু করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগামী ৩ নবেম্বর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে স্বল্প পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেল হত্যা দিবসের আলোচনা হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি আলোচনায় অংশ নেবেন। সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের উত্তরার নিজ ফ্ল্যাটে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইদানিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার চলছে। এ থেকে সাংবাদিকরাও বাদ যাচ্ছেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের বাসায় বর্বরোচিত হামলা করা হয়েছে। আমি বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এ হামলার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের বাসায় এ ধরনের হামলা কাম্য নয়। অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। যেকোনও গুজবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছে সরকার।’ মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, আহমদ হোসেন, আফজাল হোসেন, মির্জা আজম, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, সানজিদা খানম, আনোয়ার হোসেন, এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছারসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
×