ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না, অটো প্রমোশন

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২২ অক্টোবর ২০২০

স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না, অটো প্রমোশন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর মাধ্যমিক স্তরে কোন বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত হবে সকল শিক্ষার্থী। তবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ঘাটতি চিহ্নিত করতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে দেয়া হবে এ্যাসাইনমেন্ট। প্রতি সপ্তাহে এই এ্যাসাইনমেন্ট দেয়া ও জমা নেয়া হবে। যদিও এই মূল্যায়ন পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে না। বুধবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তুলে ধরেছেন করোনাকালীন শিক্ষার সমস্যা ও উত্তরণের পরিকল্পনার কথা। সংবাদ সম্মেলনে উঠে এসেছে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাব্য লক্ষ্যের কথা। এর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয় করোনাকালে খুলছে না এমন তথ্য তুলে ধরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও কোন পরীক্ষা না নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, পঞ্চমের সমাপনীর পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে মেধার মূল্যায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে তার বাস্তবায়ন নির্ভর করছে নবেম্বরে করোনা পরিস্থিতির উন্নতির ওপর। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন জানিয়েছিলেন, অক্টোবর ও নবেম্বরকে দুটো টার্গেট করে দুটি লেসন প্ল্যান তৈরি করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে নবেম্বর থেকে সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। অক্টোবরে খোলার বিষয়ে এখনও কোন নির্দেশনা নেই। পরিস্থিতির উন্নতি হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যদি নবেম্বরে স্কুল খোলা না যায় তাহলে আমাদের অটোপাস ছাড়া উপায় নেই।’ সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল নির্ধারণ করা হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণির জেএসসি ও জেডিসির পরীক্ষা বাতিল করা হয়। ঠিক এমন অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন অন্যান্য শিক্ষা স্তরের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে ছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষ। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজেদের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা তুলে ধরেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও যুক্ত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। এবার পরীক্ষা ছাড়াই সবাই ওপরের ক্লাসে যাচ্ছে। তবে ৩০ কর্ম দিবসের জন্য একটি পাঠ্যসূচী করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত এই পাঠ্যসূচীর ভিত্তিতে এ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে শিক্ষার্থীদের। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। প্রতি সপ্তাহে এই এ্যাসাইনমেন্ট দেয়া ও জমা নেয়া হবে। তবে এই মূল্যায়ন পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রভাব ফেলবে না। এই মূল্যায়নের মাধ্যমে মূলত শিক্ষার্থীদের কি ঘাটতি আছে তা দেখা হবে। যাতে পরবর্তী ক্লাসে সেটা পূরণ করা যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই পাঠ্যসূচী দেয়া হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছেও তা পৌঁছে দেয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ্যাসাইনমেন্টের মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী ক্লাসে তা পূরণের চেষ্টা করা হবে। তবে এই মূল্যায়নটার মাধ্যমে যেন কোন চাপ সৃষ্টি করা না হয়। এই মূল্যায়ন শুধু আমাদের বোঝার জন্য যে শিক্ষার্থীদের কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে, সেগুলো পরের ক্লাসে কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করব। ১ নবেম্বর থেকে শিক্ষার্থীদের এ্যাসাইনমেন্ট দেয়ার কাজ শুরু হবে। প্রতি সপ্তাহে একটি করে এ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে শিক্ষার্থী বা তার অভিভাবক সশরীরে বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে দিতে পারবেন। তবে কেউ চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও শিক্ষকদের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারবেন। এ বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলার ইঙ্গিত ॥ সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এ বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে নাÑ এমন কোন ঘোষণা না দিলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, চলতি বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খুলছে না। ভর্তি বা এ সংক্রান্ত কাজের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফিসই কেবল খোলা হবে। এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণাতেও বলা আছে নবেম্বর ও ডিসেম্বরে পরীক্ষার পরিবর্তে নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কথা। মন্ত্রী বলেন, আগামী নবেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অনলাইনে এই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ক্লাস নেয়া হবে এবং এ্যাসাইনমেন্ট প্রদান ও মূল্যায়ন সম্পন্ন করা হবে। এই সময়ের মধ্যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অন্য কোন রকমের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করতে পারবে না। গ্রেডিংবিহীন সনদ জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার্থীদের ॥ এবার যেসব শিক্ষার্থী অষ্টম থেকে নবম শ্রেণীতে উঠবে, অর্থাৎ যাদের জেএসসি বা জেডিসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল, তাদের মার্কিং বা গ্রেডিং ছাড়াই সনদ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা সনদ দেয়ার বিষয়টির সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব। অষ্টম শ্রেণীতে পরীক্ষা দিলে তারা সনদ পেত। এবার পরীক্ষা দিচ্ছে না বলে সনদ পাবে না তা তো নয়। জেএসসির সনদটি কারও কারও জন্য খুব জরুরী হতে পারে। এবার যেমন সবাই পরবর্তী ক্লাসে যাবে। সেজন্য পরীক্ষা যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শেষ করেছে, কৃতকার্য হয়েছে সেটি উল্লেখ থাকবে।’ কারিগরি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে হবে ॥ কারিগরি শিক্ষা হাতে-কলমে শিখতে হয় বলে তাদের পরীক্ষা দিয়ে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, সাধারণ বিষয়ে পরীক্ষা ছাড়া ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হলেও কারিগরি শিক্ষায় তা সম্ভব নয়। কারিগরি শিক্ষার্থীদের লেখার চাইতে ব্যবহারিক পরীক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। সেটি না শিখলে তাকে পরবর্তী ক্লাসে প্রমোশন দেয়া সম্ভব হবে না। এ কারণে বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে এ স্তরের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে প্রমোশন দেয়া হবে। কারিগরি স্তরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের পরীক্ষা নেয়া হবে। অনার্সের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়া সনদ নয় ॥ অনার্সের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছায়া ডিগ্রী দেয়া ঠিক হবে না-মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, কারণ এই ডিগ্রী নিয়ে তারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবেন। এক্ষেত্রে তাদের কর্মক্ষেত্রেও অন্যভাবে দেখা হতে পারে। অনার্সের শিক্ষার্থীরা জানাচ্ছেন তাদের কিছু পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। আর কিছু পরীক্ষা বাকি আছে। তারা অটোপাসের দাবি জানাচ্ছেন; সার্বিক বিবেচনায় অনার্সের শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়া ঠিক হবে না। বিশ^বিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে মন্ত্রণালয় ॥ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে সমন্বিত পদ্ধতিই এই মুহূর্তে সবচেয়ে যুগোপযোগী বলে মনে করছি। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরাই সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে পারবেন। স্কুলগুলোর টিউশন ফিয়ের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা জানতে পেরেছি কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোর করে টিউশন ফি আদায় করছে। টিউশন ফি না দিলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না বলেও বলা হচ্ছে। তবে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেই। আশা করি, প্রতিষ্ঠানগুলো মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবে। টিউশন ফি আদায়ের বিষয়ে স্কুল কলেজগুলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হবে। স্থানান্তর হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রমোশন যেখানে ॥ শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, যারা (শিক্ষার্থী) স্থানান্তরিত হয়েছেন তারা অনলাইনে যুক্ত হয়ে অথবা স্ব-স্ব জায়গা থেকে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারবেন। এর মাধ্যমে তাকে পরবর্তী ক্লাসে প্রমোশন দেয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক অভিভাবক স্থানান্তরিত হয়েছেন। অনেকে ঢাকার বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী থাকলেও চাকরি হারিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। এসব শিক্ষার্থীর ৩০ কার্যদিবসের পাঠদান এবং এ্যাসাইনমেন্ট প্রক্রিয়া কেমন হবে সেটা নিয়ে চিন্তায় আছেন। আমরা তাদের বিষয়ে ভেবে রেখেছি। এসব শিক্ষার্থী সুযোগ থাকলে মূল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত হবেন। আর যদি অনলাইনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ না থাকে তাহলে যে গ্রামে বা লোকেশনে অবস্থান করছেন সেখানের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে তার এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারবেন। আগামী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে ॥ আগামী বছরের মাধ্যমিক (এসএসসি) এবং উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। বলেছেন, সব শিক্ষার্থীকে আমি বলব যাদের সামনের বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আছে, তারা অবশ্যই নিজেদের বইগুলো পড়বেন, যতদূর সম্ভব অনলাইনে এ্যাকসেস করবেন।
×