ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাতারাতি বড়লোক হওয়ার চিন্তা করবেন না

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২২ অক্টোবর ২০২০

রাতারাতি বড়লোক হওয়ার চিন্তা করবেন না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও হিমাগার মালিক ও আড়ৎদারদের দৌরাত্ম্যে আলুর দাম কমে না আসায় চটেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ব্যবসায়ী-আড়ৎদারদের উদ্দেশে বলেছে, আপনারা মুনাফা করেন, করার জন্যই ব্যবসা করছেন। সরকার নির্ধারিত দামে আলু বেচে মুনাফা করেন। কিন্তু এ সুযোগে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার চিন্তা করবেন না। সরকার নির্ধারিত খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি আলুর দাম ৩৫ টাকা নির্ধারণে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। বুধবার দুপুরে এ্যাগ্রিকালচার রিপোর্টার্স ফোরাম (এআরএফ) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে যোগ দিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, আলুর দাম ৩০ টাকা, এটা অনেক দাম। বাস্তবতা বিবেচনা করে আমরা আরও পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করে দিলাম। কিন্তু আলুর দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা; এটা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ থেকে আপনাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, আপনারা সরকারের নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করুন। বাজার স্থিতিশীল রাখতে খুচরা বাজারে এক কেজি আলুর দাম ৩০ টাকায় বেঁধে দিয়ে তা কার্যকর করতে না পেরে পরে ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এছাড়া কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৭ টাকা এবং পাইকারিতে ৩০ টাকা কেজি বেঁধে দিয়ে মঙ্গলবার দাম পুনঃনির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। বাজারে আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার পর গত ৭ অক্টোবর কৃষি বিপণন অধিদফতর কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকা, পাইকারীতে ২৫ টাকা এবং খুচরায় দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। ‘গোল্ডেন রাইস’ নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জেনেটিক্যালি মডিফায়েড এই ধানটি নিয়ে বেশ বিতর্ক ও সমালোচনা রয়েছে। এই ধান মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকারক কিনা, ধান চাষের ফলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে কিনা, এ নিয়ে পরিবেশ অধিদফতর এখনও আমাদের ছাড়পত্র দেয়নি। আমরা চেষ্টা করছি। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতে ডিম, দুধ, মাছ, মাংসের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর রাখছে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে চাল মোটামুটি ভাল উৎপন্ন হয়। আমরা বেশি চাল খেতাম, চাল থেকে প্রোটিন আসত। চালই আমাদের মূল খাবার। আগে আমরা ৪২৫-৪৩০ গ্রাম চাল খেতাম। এটা কমে গিয়ে এখন ৩৬০-৩৭০ গ্রাম খাই। তার মানে আমরা চাল কমিয়ে পুষ্টিজাতীয় খাবার যেমন ডিম, দুধ, মাছ, মাংস এগুলোর উৎপাদন যদি বাড়াতে পারি, যদি তা ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই পুষ্টির লক্ষ্য আমাদের অর্জিত হবে। এসডিজি অর্জন নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশের জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনে কৃষি খাতে উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান শতকরা হার হিসেবে আগের তুলনায় কমলেও, এর গুরুত্ব কমেনি । দারিদ্র্য বিমোচন এবং সকলের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষির অবদান অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি বলেন, করোনার কারণে এসডিজি অর্জন ব্যাহত হবে না। আমরা সে চেষ্টাই করছি। আমরা আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। দুটি সমীক্ষায় আমাদের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির কথা উঠে এসেছে। ক্ষুধা সূচকে আমরা এগিয়েছি। কৃষির সহযোগিতায় অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে আশা করছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ বলেন, কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। স্বাধীনতার পরে সাত কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেখানে অসম্ভব ছিল, সেখানে এখন ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে কৃষি খাত কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারের সময়োপযোগী উদ্যোগের কারণে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের যুগ্ম-সম্পাদক ফয়জুল সিদ্দিকী। এআরএফ’র সভাপতি মোঃ আশরাফ আলির সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল হাসানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন-সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)-এর মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)-এর মহাপরিচালক ড. মোঃ নাজিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কাউন্সিল (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মোঃ সায়েদুল ইসলাম এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল মুঈদ প্রমুখ। কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত ॥ এদিকে, বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে কৃষিযন্ত্রপাতি তৈরি ও সংযোজনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম কে. দোরাইস্বামী সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে এই আশ্বাস দেন। দোরাইস্বামী জানান, ভারতের মাহিন্দ্রসহ অন্যান্য কৃষিযন্ত্রপাতি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বাংলাদেশে তাদের ফ্যাক্টরি স্থাপন করে স্থানীয়ভাবে কৃষিযন্ত্রপাতি তৈরি ও অ্যাসেম্বল এবং খুচরা যন্ত্রপাতি তৈরিতে বিনিয়োগ করে সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সাক্ষাতকালে দুদেশের কৃষি, কৃষিযন্ত্রপাতি, কৃষি প্রসেসিং, বীজ প্রযুক্তি এবং ডেইরি প্রসেসিং নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। এসময় কৃষি সচিব মোঃ মেসবাহুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকীকরণের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সরকার প্রায় ৩০০০ কোটি টাকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রচুর কৃষিযন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে ভারতের কৃষিযন্ত্রপাতি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনেক সুযোগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের ফ্যক্টরি স্থাপন করে স্থানীয়ভাবে কৃষিযন্ত্রপাতি তৈরি ও অ্যাসেম্বল এবং খুচরা যন্ত্রপাতি তৈরি করতে পারে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতে ও বাজারজাতে বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে আছে। আর ভারত এক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে আছে। সেজন্য, এসব ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দুদেশের একসঙ্গে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এসময় কৃষিমন্ত্রী বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ, বীজ প্রযুক্তি, বিটি কটন, ভুট্টা, কাজুবাদামসহ উন্নতজাতের জাত ও চারা সরবরাহ, দুগ্ধ প্রসেসিং, এ্যাগ্রো প্রসেসিং ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভারতের সহযোগিতা কামনা করেন। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এ সম্পর্ক অটুট থাকবে। ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে। কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম কে. দোরাইস্বামী বলেন, বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাই অর্জন করেনি, বরং অনেকক্ষেত্রে এখন খাদ্যপণ্য রফতানি করতে পারে। বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ, বীজ প্রযুক্তি, বিটি কটন, ভুট্টা, কাজুবাদামসহ উন্নতজাতের জাত ও চারা সরবরাহ, দুগ্ধ প্রসেসিং, এ্যাগ্রো প্রসেসিং সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানির বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বিক্রম কে. দোরাইস্বামী বলেন, ভারতের মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি ও দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশে ২০,০০০ টন পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিয়েছে ভারত। আবহাওয়ার উন্নতি হলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও তিনি জানান।
×