ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিনহা হত্যার পর পুলিশে বদলি আতঙ্ক

কক্সবাজার চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলায় অভিযান চলছে না

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২০ অক্টোবর ২০২০

কক্সবাজার চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলায় অভিযান চলছে না

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কক্সবাজারের টেকনাফের মারিশবুনিয়ায় পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনার পর ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলাজুড়ে কনস্টেবল থেকে এসপি পর্যন্ত গণহারে বদলির ঘটনা ঘটেছে। শুধু এসপি নয়, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজিকেও বদলি করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় অনুরূপ বদলি শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ইন্সপেক্টর ও এসআই পর্যায়ে গণবদলির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাঝে আতঙ্কিত করে রেখেছে। সিনহা হত্যার পর পুরো পুলিশ মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয় এ ঘটনা নিয়ে। সিনহা হত্যাকা- ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রামজুড়ে ক্রসফায়ারের বিভিন্ন ঘটনা আলোচনায় চলে আসে। যার মধ্যে টেকনাফে সবচেয়ে বেশি ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনার জন্য টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলাও হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার জেলার ৮ থানার সকল পুলিশ সদস্যকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। বদলির ঘটনাবলীতে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য ৭ দিনের সময় দেয়া হলেও একদিনের মধ্যে যোগদানের আদেশের বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য। কক্সবাজারের পর চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরীতে শীর্ষ পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যায় পর্যন্ত এখন বদলি চলছে। এর পাশাপাশি ৩ পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানেও বদলি আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছে। চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় এসআই ও ইন্সপেক্টর পর্যায়ে ইতোমধ্যে ২০ জনের বেশি কর্মকর্তাকে বদলি করে দেয়া হয়েছে। যা অব্যাহত রয়েছে। ফলে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মাঝে ভিন্ন ধরনের আতঙ্ক বিরাজমান। সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর ও রেঞ্জ ডিআইজি আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বদলির বিষয়টি রুটিন একটি কাজ। এ বক্তব্যটি শতভাগ সত্য। কিন্তু গণহারে বদলির বিষয়টি যখন চলে আসে তখন সংশ্লিষ্টদের মাঝে আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া আর কি থাকতে পারে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে এ ধরনের বদলির কারণে মাঠ পর্যায়ে স্বাভাবিক কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ফলে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারে বড় কোন অভিযান নেই। এমনকি স্বাভাবিক অভিযানও নেই। রুটিন মাফিক পুলিশী কার্যক্রম চলছে বলে প্রতীয়মান। সিএমপিতে প্রথম পর্যায়ে ইন্সপেক্টর ও এসআই পর্যায়ে বদলি করা হচ্ছে। বদলির আরও আদেশ ও আগাম বার্তা ছড়িয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, সিনহা হত্যাকা-ের পর বৃহত্তর চট্টগ্রামে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে তাৎক্ষণিক বদলির বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি। মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রমে যারা দোষ করেছেন তাদের শুধু বদলি নয়, শাস্তির আওতায় আনলেও কারও আপত্তি নেই। কিন্তু যারা সদ্য বিভিন্ন পোস্টে যোগদান করেছেন তাদেরও গণহারে বদলি করে দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলার আওতায় সদর থানা, টেকনাফ, উখিয়া, রামু, মহেশখালী, চকরিয়া, কুতুবদিয়া থেকে সকল পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া এএসপি থেকে এসপি পর্যন্ত কাউকে ছাড় দেয়া হয়নি। বদলির বিষয়টি কোন কোন মহলে ইতিবাচক, আবার সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের মাঝে নেতিবাচকভাবে আবির্ভূত হয়েছে। কেননা, কোন ধরনের ত্রুটি নেই এমন সদস্যদেরও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এরপরে বদলির ঢেউ লেগেছে চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত জেলায়। সূত্রমতে, এর কারণে মাঠ পর্যায়ে পুলিশের প্রকৃত কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন স্থানে নতুন কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
×