ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি

ধর্মসভায় নারী অবমাননা বন্ধ করতে হবে

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ১৯ অক্টোবর ২০২০

ধর্মসভায় নারী অবমাননা বন্ধ করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে নতুন আইন করায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে দেশের ২১ বিশিষ্ট নাগরিক বলেছেন, ধর্মসভায় নারী অবমাননাও বন্ধ করতে হবে। একই জায়গা থেকে আরও কিছু দাবি উত্থাপন করেন তারা। রবিবার গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠানো হয়। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, নির্মলেন্দু গুণ, রামেন্দু মজুমদার, ডাঃ সারোয়ার আলী, ফেরদৌসী মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মফিদুল হক, মামুনুর রশীদ, গোলাম কুদ্দুছ। বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সম্বলিত রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করবার জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার তরিৎ সিদ্ধান্ত ও কার্যকর পদক্ষেপে এই কাক্সিক্ষত পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি বিবৃতিতে বলা হয়, আইনের সঠিক ও সময়োপযোগী প্রয়োগের ওপর নির্ভর করছে এর কার্যকারিতা। বাংলাদেশে অনেক আইন রয়েছে। কিন্তু এর সঠিক প্রয়োগ ঘটছে না। তাতে করে আইন তার বিশ্বাসযোগ্যতা ও প্রয়োগকারীর ওপর জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এ অবস্থায় আমরা দ্রুততম তদন্ত ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার কার্য সম্পন্ন করার তাগিদ জানাই। বিদ্যমান আইনের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে আইনটিকে নির্যাতিত ও ধর্ষিত নারীর অনুকূলে সংশোধনী আনারও জোর দাবি জানান তারা। বলেন, আমরা এ কথাও জোর দিয়ে বলতে চাই যে শুধুমাত্র আইন সংস্কার ও শাস্তি প্রদান করে এই জঘন্য অপরাধ থামানো যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন দেশে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিশুদ্ধতা। আর এজন্য প্রথমে যে কাজগুলো করা জরুরী বলে ধারণা করি সেগুলো হলো-১. ধর্ষক ও সন্ত্রাসী যেন কোন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এ ঘৃণ্য অমানবিক কাজ করতে না পারে তা নিশ্চিত করা। ২. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শতভাগ সততা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করা। ৩. আইনী প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত রাখা। ৪.ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। বিভিন্ন ধর্ম সভায় মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাখ্যা দিয়ে নিরন্তর নারী-অবমাননাকর বক্তব্য থেকে মৌলবাদীদের নিবৃত্ত করতে দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। ৫. ধর্ষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে ও নির্যাতিত নারীর সামাজিক লাঞ্ছনা থেকে রক্ষাকল্পে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক শক্তি সমূহের কর্মসূচীকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানে তৎপর হওয়া। ৬. প্রাথমিক-উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্যসূচীর আধুনিকায়ন। মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রমকে সরকার নিয়ন্ত্রিত করা। এবং নারীর প্রতি সম্মানের মানসিকতা গড়ে তুলতে সকল পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রমে, নারী-পুরুষের সমঅধিকারের বিষয়টি জেড়ালোভাবে উপস্থাপন করা। একমুখী শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা। ৭. পেশী শক্তির বিপরীতে জ্ঞান ও যুক্তি নির্ভর সমাজ গড়ে তুলতে ব্যাপক সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা। এক্ষেত্রে সংস্কৃতি কর্মী ও সংগঠনের দায় ও দায়িত্ব সর্বাধিক। সরকারের এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করাও জরুরী। বিবৃতিতে বলা হয়, উল্লেখিত কর্মোদ্যোগ সমূহ বিবেচনায় এনে সরকার এই ভয়াবহ ধর্ষণ-সংস্কৃতি থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে পারেন। জাতীয় কবি নজরুল ইসলামে পংক্তি উল্লেখ করে তারা বলেন, এ বিশ্বে যা কিছু মহান, চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। আমরা এই কাব্য পংক্তিতে শতভাগ বিশ্বাসী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এই অসাধারণ বাক্যটি। আসুন আমরা সকলে সম্মিলিতভাবে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আরও রয়েছেন শামসুজ্জামান খান, আবদুস সেলিম, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, মোহাম্মদ নূরুল হুদা, শফি আহমেদ, লাকী ইনাম, সারা যাকের, শিমূল ইউসুফ, মান্নান হীরা ও হাসান আরিফ।
×