ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই

মৌসুমি জ্বরে আক্রান্তরাও ছুটছেন করোনা পরীক্ষা করাতে

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ১৯ অক্টোবর ২০২০

মৌসুমি জ্বরে আক্রান্তরাও ছুটছেন করোনা পরীক্ষা করাতে

নিখিল মানখিন ॥ করোনা ভেবে চিকিৎসকদের কাছে আগত অনেক রোগীই গরম ও ঠা-া মিশ্রিত আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট মৌসুমি সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, আক্রান্তদের অনেকে বিষয়টি করোনা ভেবে টেস্ট করাতে ছুটে যাচ্ছেন। নগরীর অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এমন মৌসুমি জ্বরে আক্রান্তরা ভিড় জমাচ্ছেন। রোগীর কাশি অনেক সময় রূপ নিচ্ছে শ্বাসকষ্টে। কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়ায়। এ ধরনের মৌসুমি জ্বর নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রতিবছরই এমন সময় সর্দি-কাশি জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ জ্বরের চিকিৎসা লাগে না। এ জ্বরে আক্রান্ত হলে মাথা ব্যথা হতে পারে। তবে দেশে করোনার প্রকোপ রয়ে গেছে। তাই জ্বর হলেই ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে করোনা টেস্ট করানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েই চলেছে। গরমের পাশাপাশি বিরাজ করছে শীতের আমেজ। সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত বিরাজ করে শীতের আবহ। বর্তমানে গরম ও শীতের মাঝামাঝি অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছরই এমন সময়ে মৌসুমি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মৌসুমি জ্বরে একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের কোন সদস্যই রেহাই পায় না। সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কিছু ওষুধপত্র সেবন করলে কয়েকদিনের মধ্যেই মৌসুমি জ্বর কেটে যাবে। কিন্তু দেশে করোনার প্রভাব থাকায় মৌসুম জ্বর নিয়েও দুশ্চিন্তার শেষ নেই। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মৌসুমি জ্বরে আক্রান্তের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। নগরীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও (মিটফোর্ড হাসপাতাল) সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও মৌসুমি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, করোনা ভেবে আগতদের বড় অংশ মৌসুমি জ্বরে আক্রান্ত। আমার ব্যক্তিগত চেম্বারেও এ ধরনের রোগীর আগমন বেড়েছে। সব বয়সের মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে। চেম্বারে প্রতিদিন ১৬ থেকে ২০ জন রোগী আসছে। তিনি জানান, এটি ভাইরাসজনিত রোগ। আর ভাইরাসবাহিত এ সব রোগ অন্য আরেকটি রোগে আক্রান্ত হতে সহায়তা দেয়। আর করোনা হলে তো কথাই নেই। সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের কারণে এসব রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। রোদে ঘোরাফেরা কমাতে হবে। বাইরের খোলা জায়গার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বেশি পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খাওয়া উচিত। নিয়মিত শরীর মুছে দিতে হবে। জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বর কমানোর ও শরীরের ব্যথা কমার ওষুধ খেতে পারেন। খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক রাখতে হবে। শরীরে যাতে পুষ্টির অভাব না হয়, সে জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় পুষ্টিকর খাবার। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকলে সেই ক্ষমতা দিয়ে সাধারণ ভাইরাল জ্বর ভাল হয়ে যায়। অসুস্থ ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন এ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। আর করোনার প্রকোপ অব্যাহত থাকায় জ্বর হলেই করোনা টেস্ট করানো পর পরামর্শ দেন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ। সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া জনকণ্ঠকে জানান, মিশ্র আবহাওয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গ্রীষ্মকালের পুরো আবহ না আসা পর্যন্ত এটা চলতে থাকে। এ জ্বরে আক্রান্তদের নিয়ে চিন্তার কিছুই নেই। ভাইরাল জ্বরের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো শরীরের পেশিতে প্রচন্ড ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, মাথা ভারি মনে হওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি। তবে শিশুদের মুখ লাল হয়ে যায়, শরীরের তাপমাত্রা বেশি, মাথা ব্যথা, সর্দি ও কাশি হতে দেখা যায়। রোগীর এমন উপসর্গ অনেকটা করোনা ভাইরাসের উপসর্গের সঙ্গে মিল রয়েছে। তাই জ্বর হলেই করোনা টেস্ট করানোর পরামর্শ দেন ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া। রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ মুশতাক হোসেনও সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, সর্দি-কাশি জ্বর নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কিছু ওষুধপত্র সেবন করলে কয়েকদিনের মধ্যেই সমস্যা কেটে যাবে। আতঙ্কের কিছু নেই। তবে আক্রান্ত রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বিষয়ে অবহেলা করা যাবে না। ভাইরাসবাহিত অসুখে আক্রান্ত হলে বাইরে বের হওয়া ঠিক হবে না। এ সময় মাথা ব্যথা হতে পারে। জ্বর সাধারণত ১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইট হলে বড়দের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়া হবে। জ্বর হলে স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। হাঁচি-কাশি দেয়া এবং নাক দিয়ে পড়া পানি মুছতে পরিষ্কার রুমাল বা কাপড় ব্যবহার করতে হবে। রোগটি ছোঁয়াচে বলে এ ক্ষেত্রে সাবধানও থাকতে হবে। কিছুতেই ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা বা পচা-বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। তিনিও করোনা টেস্ট করানোর পরামর্শ দেন।
×