ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভাল খেলেই চূড়ান্তপর্বে যেতে চাই’

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ১৭ অক্টোবর ২০২০

‘ভাল খেলেই চূড়ান্তপর্বে যেতে চাই’

রুমেল খান ॥ আগামী বছরের ১৩-২১ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে এএফসি অনুর্ধ-২০ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব, এছাড়া ৩-১১ এপ্রিল পর্যন্ত হবে এএফসি অনুর্ধ-১৭ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব। দুটি আসরের স্বাগতিক হতে আগ্রহ প্রকাশ করে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের কাছে আবেদন করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এই দুটি টুর্নামেন্টের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ইতোমধ্যেই ৩৩ খেলোয়াড় ক্যাম্পে ডেকেছেন। এর মধ্যে অনুর্ধ-২০ দলে ১৮ এবং অনুর্ধ-১৭ দলে ১৫ জন। যে ফুটবলারদের ক্যাম্পে ডাকা হয়েছে তাদের প্রত্যেককেই কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানো হয়েছে। সবার রেজাল্টও নেগেটিভ এসেছে। শুধু মেয়েদেরই নয়, পুরো কোচিং স্টাফ এবং বাবুর্চিদেরও করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। কোচিং স্টাফ ও বাবুর্চিদের সবার ফলও নেগেটিভ এসেছে। আজ (বৃহস্পতিবার) ৩৩ জন অনুশীলনে ছিল। তবে বসুন্ধরা কিংস মহিলা ফুটবল লীগের জন্য সেই দলের ক্যাম্পে চলে গেছে ৯ জন (মারিয়া, মনিকা, আঁখি, শামসুন্নাহার সিনিয়র, সানজিদা, নীলা, রিপা, তহুরা, রূপনা)। কি-প্লেয়ারই সব। তবে এখানেও কিছু কি-প্লেয়ার রয়ে গেছে। যেমন : নাজমা, সাজেদা, মারজিয়া, ঋতুপর্ণা, আনুচিং, আনাই, শামসুন্নাহার জুনিয়র। অনুর্ধ-১৭ ও অনুর্ধ-২০ আসরে বাংলাদেশের লক্ষ্য সম্পর্কে ছোটনের মন্তব্য, ‘অনুর্ধ-১৬ আসরে আমরা দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম আঞ্চলিক পর্যায়ে। অনুর্ধ-১৭তে চূড়ান্ত পর্যায়ে খেলেছি। এটা একটা বড় অর্জন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা এবারও চাইব আগের আসরের মতো বাছাইপর্বে ভাল ফল করে চূড়ান্তপর্বে যেতে। অনুর্ধ-১৭ দলটা এবার বলতে গেলে পুরোপুরিই নতুন দল। আর অনুর্ধ-২০ দলে আছে বেশ ক’জন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়।’ মারিয়াদের ৯জনকে বসুন্ধরা কিংসের ক্যাম্পে যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়ে দেয়াতে এখন তো তারা জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে পারছে না। পরে যখন লীগ খেলা শেষে আবারও জাতীয় দলে ফিরবে তখন অনুশীলনে বাকি সবার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কতটা সমস্যা হবে? সমন্বয়টা কিভাবে হবে? জনকণ্ঠকে ছোটনের জবাব, ‘না, আশাকরি কোন সমস্যা হবে না। লীগের ডেট দেয়া আছে ৭ নবেম্বর। খেলা ঠিকমতো চললে আশাকরি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে লীগের সব খেলা শেষ হয়ে যাবে। এএফসির খেলা মার্চে (অনুর্ধ-২০)। এখন জাতীয় দলের ক্যাম্পে না থাকলেও ওই নয় ফুটবলার তো বসুন্ধরার ক্যাম্পে খেলা ও ট্রেনিংয়ের মধ্যেই থাকবে। ফলে তাদের ফিটনেস নিয়ে খুব একটা সমস্যা হবে না জাতীয় দলের ক্যাম্পে ফিরলে। তবে এটা ঠিক জাতীয় দল ও ক্লাবের ট্রেনিংয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।’ বৃহস্পতিবার কমলাপুর স্টেডিয়ামে মেয়েদের ফিজিক্যাল (রানিং ও উইথ দ্য বল), টেকনিক্যাল, সাইকোলজিক্যাল ট্রেনিং করান ছোটন। করোনার সময় মহিলা ফুটবলাররা যে যার বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। ছোটন প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ রক্ষা করে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিয়েছেন, সেই সঙ্গে দিয়েছেন ফিটনেস ধরে রাখার প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা। এ প্রসঙ্গে ছোটনের ভাষ্য, ‘ওরা বাড়িতে গিয়েছিল শতভাগ ফিট অবস্থায়। ওখানে তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে ফিটনেস রক্ষা করতে। কিন্তু পুরোপুরি পারেনি। এখানে আসার পর দেখা যাচ্ছে সবার ফিটনেস লেভেল ৩০-৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এটাই স্বাভাবিক। কারণ ওখানে তারা তো জাতীয় দলের মতো প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটিজ পায়নি। আমরা এখন চেষ্টা করছি তাদের ফিটনেস আগের পর্যায়ে নিয়ে যেতে। এ জন্য চার থেকে ছয় সপ্তাহ লাগতে পারে। গত ৬দিনের ট্রেনিংয়ে তাদের অনেক উন্নতি হয়েছে।’ মেয়েদের আরেকটা সমস্যা নিয়ে আলোকপাত করেছেন ছোটন, ‘বাড়িতে গিয়ে মেয়েরা ফুডিং বা নিউট্রেশন নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। জাতীয় দলের ক্যাম্পে তাদের যে মানের পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার দেয়া হয়, দেশের বাড়িতে তো তারা সেরকম খাবার পুরোপুরিভাবে খেতে পারেনি। ফলে এটাও তাদের ফিজিক্যাল স্ট্রেংথ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। এখন এই ঘাটতিও আমরা পূরণ করার চেষ্টা করছি।’ ছোটন মানেই পরিশ্রমী কোচ। ফুটবল তার অন্তরে, ফুটবল তার রক্তে। নিজের বিয়ের রাতটা কোনমতে পার করে ভোরেই যিনি মেয়েদের অনুশীলন সেশনে গিয়ে হাজির হয়ে সবাইকে অবাক করে দেন, সেই ছোটন গত ছয় মাস মেয়েদের কোন অনুশীলনই করাতে পারেননি। কারণটা যে করোনা, সেটা নিশ্চয়ই অনুমেয়। এই ছয় মাস ফুটবল ছাড়া কিভাবে কাটিয়েছেন? ‘গত চার বছরে একদিনও আমি বিশ্রাম নিতে পারিনি। পরিবারকে একদমই সময় দিতে পারিনি। করোনা মহামারী যদিও ভয়াবহ, তারপরও বলব, এটার জন্যই এবার আমি পরিবারকে প্রচুর সময় দিতে পেরেছি, সংসার ধর্ম পালন করতে পেরেছি। এতে ভালই অভিজ্ঞতা হয়েছে। ফুটবল কোচ হিসেবে কাজ করতে না পারাটা যদি খারাপ দিক হয়, তাহলে ভাল দিক হচ্ছে পরিবারকে সময় দিতে পারাটা’ ছোটনের জবাব। তবে ফুটবলে আবারও ফিরতে পেরে দারুণ খুশি ছোটন, ‘আবারও আগের রুটিনে ফিরে খুব খুশি। ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠি। ৫টার মধ্যেই বের হই। সকালে মেয়েদের অনুশীলন করাই। দিনের বাকি সময়টাতে তাদের কন্ডিশনিং ও মেইনটেনেন্স ট্রেনিং করাই। এভাবেই সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকি। করোনার সময় বেশ মানসিক চাপে ছিলাম। দুশ্চিন্তায় ঠিকমতো ঘুমাতেও পারতাম না। এতে দৈনন্দিন রুটিন ওলট-পালট হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার ক্যাম্প শুরু হওয়াতে আবারও সেই আগের স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে এসেছি।’
×