ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সিলেটে দিনভর বিক্ষোভ ॥ আরেক আসামি গ্রেফতার তিনজন রিমান্ডে

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

সিলেটে দিনভর বিক্ষোভ ॥ আরেক আসামি গ্রেফতার তিনজন রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় গৃহবধূ ধর্ষণের মামলায় আসামি রনি, রাজন ও আইনুলের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। মঙ্গলবার সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান তাদের এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আরেক আসামি তারেককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ মামলার দুই নম্বর আসামি তারেকুল ইসলাম তারেককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৯ এর একটি টিম। সে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় এজাহারনামীয় ৬ আসামিসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করা হলো। এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মঙ্গলবারও দিনভর সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশে সরব ছিল। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে। বেলা পৌনে ১২টায় তাদের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে রনি, রাজন ও আইনুলকে আদালত চত্বরে নিয়ে আসা হয়। আদালতে হাজির করে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানা পুলিশ। আদালতে ধর্ষণের মামলায় সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। পরে শুনানি শেষে আদালত সকলের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। একই মামলায় আরও তিন আসামি সাইফুর, অর্জুন ও রবিউল পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত পাঁচজনসহ এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি ॥ সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নববধূ গণধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গত সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মোঃ শাহেদুল খবীর চৌধুরী নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সদস্যরা মঙ্গলবার তদন্তের কাজে সিলেট আসেন। রবিউলের বিরুদ্ধে অন্য মামলা ॥ সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নববধূ গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৫ নম্বর আসামি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের রবিউল ইসলাম (২৫)। গত রবিবার রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। জানা গেছে, সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে আগুন দেয়ার ঘটনার মামলা ছাড়াও আরেকটি ছিনতাই মামলারও আসামি রবিউল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে সিলেট থেকে পাঠানো দুটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। রবিউল পড়াশোনার জন্য ২০১৪ সালে সিলেটে আসে। সিলেট নগরে প্রথমে তাঁর নানার বাড়িতে থাকত। পরে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ওঠে। দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রবিউল মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসত। বিশেষ করে বৈশাখ মাসে বোরো ধান কাটার সময়। তাঁর চলাফেরায় পরিবারের লোকজন কখনও চিন্তাও করতে পারেনি সে এমন কাজ করতে পারে। আমি বৃদ্ধ মানুষ। আমার এক কথা, আমি কোন অন্যায়ের সঙ্গে নেই। সে (রবিউল) দোষ করলে সাজা হোক। আর যদি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়, তাহলে আল্লাহ আছেন। রবিউলের মা ও বোনদেরও একই কথা। দোষ করলে তার যেন শাস্তি হয়।’ বড় নগদীপুর গ্রামের দুজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, রবিউল ইসলাম গ্রামে কম যেত। তার বাবা তেমন কোন কাজ করেন না। তবে শুনেছি রবিউল ইসলাম সিলেটে রাজনীতি করে। তার বিরুদ্ধে নানা ঘটনায় সিলেটে মামলা থাকার বিষয়টিও গ্রামের লোকজন শুনেছেন। সিলেটে এক আওয়ামী লীগ নেতার প্রশ্রয়ে ছিল রবিউল। এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি মাহফুজুর রহমানকে (২৫) শাহপরাণ থানায় হস্তান্তর করেছে জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কানাইঘাট থানা পুলিশ শাহপরাণ থানায় তাকে হস্তান্তর করে। মামলার ৬নং আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুমকে গ্রেফতার করেছে জেলা ডিবি ও কানাইঘাট থানা পুলিশ। গ্রেফতার মাহফুজুর রহমান এমসি কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং কানাইঘাটের দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউপির লামা দলইকান্দি গ্রামের সালিক আহমদের ছেলে। লন্ডনে মানববন্ধন ॥ সিলেটের এমসি কলেজে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা স্বামীকে আটক রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত এমসি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন এমসি কলেজের সাবেক ছাত্র সোয়ালেহীন করিম চৌধুরী।
×