ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চীনা ভ্যাকসিনের ঢাকা ট্রায়াল নিয়ে সংশয়

প্রকাশিত: ২২:১৩, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

চীনা ভ্যাকসিনের ঢাকা ট্রায়াল নিয়ে সংশয়

রশিদ মামুন ॥ আগ্রহ জাগালেও এখন সংশয় দেখা দিয়েছে চীনা ভ্যাকসিনের ঢাকা ট্রায়াল নিয়ে। আইসিডিডিআরবি সেপ্টেম্বরেই ট্রায়াল শুরুর সব প্রস্তুতি শেষ করলেও সিনোভ্যাক বায়োটেকের আগ্রহে এখন ভাটা পড়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিডিডিআরবি কিছুই বলতে পারছে না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ভ্যাকসিনটির ট্রায়ালে নতুন শর্ত দিয়েছে সিনোভ্যাক। এই শর্তে রাজি হলেই কোম্পানিটি ট্রায়ালের জন্য ভ্যাকসিন পাঠাবে বাংলাদেশে। সিনোভ্যাক ব্রাজিল এবং ইন্দোনেশিয়াতে তাদের ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু করেছে। খুব শীঘ্রই এই ট্রায়ালের ফলাফল পাওয়ারও আশা করছে তারা। ইতোমধ্যে চীনে গণহারে কোভিড ভ্যাকসিন প্রয়োগও শুরু হয়েছে। তৃতীয়ধাপের ট্রায়াল একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ওপর করা হয়ে থাকে। সাধারণত পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষের ওপর ট্রায়ালের ফলাফল সন্তোষজনক হলেই ভ্যাকসিনটি সফল বলে ধরে নেয়া হয়। যদি ব্রিটেন ভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যাল জায়েন্ট এ্যাস্ট্রেজেনেকা এবং মার্কিন ফাইজার এবং মর্ডানা ৩০ হাজার থেকে ৪৪ হাজার মানুষের ওপর তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল চালাচ্ছে। রাশিয়ার স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিনটির ট্রায়ালও ৪০ হাজার মানুষের ওপর করা হচ্ছে। তবে ভ্যাকসিন রাজনীতিতে তৃতীয়ধাপের ট্রায়ালের ফলাফল হাতে পাওয়াকে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। ফলে যে কোম্পানি দ্রুত তৃতীয়ধাপের ফলাফল প্রকাশ করতে পারবে তারাই বিশ্ববাসীর আগ্রহের কেন্দ্রতে থাকবে। সিনোভ্যাকও সেই দৌড়ে রয়েছে। বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, সিনোভ্যাক ট্রায়ালের বিষয়ে নতুন শর্ত দিয়েছে। এখন আমরা যদি শর্তগুলো মেনে নেই তাহলে ট্রায়াল শুরু হবে। তিনি বলেন আজ (রবিবার) এসব বিষয়ে অনুমোদন চেয়ে সামারি পাঠানো হয়েছে। কি শর্ত দিয়েছে জানতে চাইলে বলেন, এসব শর্তের কথা এই মুহূর্তে জানানো ঠিক হবে না। এদিকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সিনোভ্যাক স্বাস্থ্য বিভাগকে যে চিঠি দিয়েছে তাতে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু করতে আরও দুই মাস সময় চাওয়া হয়েছে। সিনোভ্যাক বলছে সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবরে তারা টিম পাঠাবে। আর নবেম্বর থেকে শুরু হতে পারে ট্রায়াল। তবে আইসিডিডিআরবি’র একটি সূত্র বলছে, সিনোভ্যাক আর্থিক সঙ্কটের কারণে ঢাকা ট্রায়াল থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। তৃতীয়ধাপের এই ট্রায়ালে বাংলাদেশকে এক লাখ ১০ হাজার ভ্যাকসিনসহ ট্রায়ালের সব খরচ দিতে চেয়েছিল সিনোভ্যাক। ভ্যাকসিন ট্রায়ালের জন্য গত জুন থেকেই চীনা কোম্পানিটি তৎপরতা শুরু করে। গত ১৭ জুলাই ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদন দেয় বিএমআরসি। তবে বিএমআরসির এই অনুমোদনের একদিন পরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেঁকে বসে। প্রথমে মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। একপর্যায়ে চীনা ভ্যাকসিনের বাংলাদেশে ট্রায়াল হবে না বলেও জানানো হয়েছিল। পরবর্তীতে জানানো হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের অনুমোদন নিলেই এই ট্রায়াল সম্ভব। আর এতেই আমলা তান্ত্রিক জটিলতায় জড়িয়ে যায় ট্রায়ালের ভবিষ্যত। আইসিডিডিআরবি’র একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিনোভ্যাক ব্রাজিল এবং ইন্দোনেশিয়াতে অনেক পরে ট্রায়ালের উদ্যোগ নিয়েছিল। প্রথমে তারা বাংলাদেশের কাছেই এসেছিল। সেই সুযোগটি আমরা নিতে পারিনি। সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের কিছুই জানাচ্ছে না। তারা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। তারা ভ্যাকসিন সরবরাহ করলেই আমরা ট্রায়াল শুরু করতে পারব। আইসিডিডিআরবি ট্রায়ালের জন্য ২৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পাঁচ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে কল সেন্টার। যারা ২৪ ঘণ্টা ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হলেই সমাধান দেয়ার জন্য পরামর্শক নিয়োগও করা হয়েছে। মোট চার হাজার ২০০ জনের ওপর ট্রায়াল চালানোর কথা রয়েছে। এরমধ্যে দুই হাজার ১০০ জনের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। আর বাকি দুই হাজার ১০০ জনকে প্লাসিবো প্রয়োগ করা হবে। প্লাসিবোতে কোন ওষুধ থাকে না। কিন্তু কেউ জানতে পারবে না কাকে প্রকৃত ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে আর কে প্লাসিবো পাচ্ছে। এরপর তাদের টানা ছয় মাস পর্যবেক্ষণ করা হবে। এই পর্যবেক্ষণ করবেন একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। যারা ভ্যাকসিন পেয়েছেন এবং যারা পাননি তাদের উভয়ের শরীরের ওপর প্রভাব পর্যালোচনা করা হবে। এজন্য ঢাকার আটটি হাসপাতালকে ঠিক করাও হয়েছে।
×