ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কেউ রেহাই পাবে না ॥ ধর্ষণের ঘটনায় কঠোর অবস্থানে সরকার

প্রকাশিত: ২২:০৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

কেউ রেহাই পাবে না ॥ ধর্ষণের ঘটনায় কঠোর অবস্থানে সরকার

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ও খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের ঘটনায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনায় অপরাধীদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ইতোমধ্যে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় মূল আসামিসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রধান আসামি ছাত্রলীগ ক্যাডার এম সাইফুর রহমানকে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার ৪ নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর ও ৫ নম্বর আসামি রবিউল এবং শাহ মাহাবুবুর রহমান রনিকে হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করছিল। বাকিদের গ্রেফতারে জোরালো অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে, রবিবার দুপুরে ধর্ষণ ঘটনার সময়ের জঘন্যতম এ বর্বর ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন গৃহবধূ। এদিন দুপুর একটার দিকে ওসমানী হাসপাতাল থেকে নির্যাতিত গৃহবধূকে সিলেট মহানগর হাকিম ৩য় আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ। দেড়টার দিকে তিনি আদালতে ওই রাতের ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। আদালতে তার পুরো জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করা হয়। অপরদিকে খাগড়াছড়িতে ডাকাতি ও প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ৭ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ৭ আসামিই ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনা স্বীকার করেছে। ঘটনার প্রতিবাদে রবিবারও খাগড়াছড়ি শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। জিরো টলারেন্সে শেখ হাসিনা সরকার ॥ বিশেষ প্রতিনিধি জানান, এমসি কলেজের ঘটনায় ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে আইন নিজস্ব গতিতে চলছে। বিচার বিভাগের উপর সরকারের কোন হস্তক্ষেপ নেই। দেশের মানুষ দেখেছে নিজ দলের সমর্থক কিংবা নেতারা অপরাধী হলেও সরকার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধা দেয়নি। এমসি কলেজের ঘটনায়ও শেখ হাসিনার সরকার কঠোর অবস্থানে। অপরাধী যেই হোক ছাড় পাবে না। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষে রবিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় মানবতার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটি এই আলোচনা সভা ও কৃষকদের মাঝে উন্নতমানের বীজ বিতরণ এবং বিভিন্ন হাসপাতালে মাস্ক বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওবায়দুল কাদের তার সরকারী বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। সিলেট অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৬ আসামির মধ্যে অন্যতম আসামি ছাত্রলীগ ক্যাডার এম সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রবিবার দিনভর ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। এদিকে সিলেট মহানগর হাকিম ৩য় আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন গত শুক্রবার এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ। বিচারক শারমিন খানম নিলার আদালতে রবিবার দুপুরে সেই সময়ের জঘন্যতম এ বর্বর ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন গৃহবধূ। আদালত সূত্র জানায়, রবিবার দুপুর একটার দিকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে নির্যাতিত গৃহবধূকে সিলেট মহানগর হাকিম ৩য় আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ। দেড়টার দিকে তিনি আদালতে ওই রাতের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। আদালতে তার পুরো জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করা হয়। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়া ধর্ষক সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিল। দুজনই অপকর্মের পর সিলেট নগর ছেড়ে অবস্থান নিয়েছিল ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায়। কিন্তু পুলিশের সতর্ক নজরদারির কারণে তাদের আর ভারতে পালানো সম্ভব হয়নি। তাদের মধ্যে ধর্ষক সাইফুর রহমান ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ও বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাই গ্রামের তাহিদ মিয়ার ছেলে। আর অর্জুন লস্কর ৪ নম্বর আসামি ও জকিগঞ্জ উপজেলার আট গ্রামের কানু লস্করের ছেলে। ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার সকালে ছাতক শহর সংলগ্ন নোয়ারাই ইউনিয়নের নোয়ারাই খেয়াঘাট এলাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ছাতক থানার এসআই হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সাইফুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ধর্ষণ ও অস্ত্র মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে গ্রেফতার এড়াতে মুখের দাড়িও কেটে ফেলে। তবুও তার রক্ষা হয়নি। গ্রেফতারের পর তাকে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, রবিবার সকালে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দুলর্ভপুর গ্রাম থেকে অর্জুন লস্করকে গ্রেফতার করে সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাকে সিলেট নিয়ে আসা হয়েছে। সূত্র জানায়, ধর্ষণের ঘটনার পর অর্জুন পালিয়ে যায় হবিগঞ্জের মাধবপুর। সেখানে মনতলা এলাকায় তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিল সে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অর্জুনের অবস্থান শনাক্ত করে রবিবার সকালে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এমসি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সাইফুর এমসি কলেজের ইংরেজী বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে। তার ইভটিজিং ও হয়রানির কারণে এমসি কলেজ থেকে অনেক মেয়ে অন্য কলেজে চলে যায়। এমনকি কলেজে সাইফুরসহ তার সহযোগীরা সাধারণ শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে চাঁদাবাজিও করে আসছে। ছাত্রলীগ নেতাদের প্রত্যেকেই ছাত্রাবাসে থাকেন। তারা নগরের টিলাগড় কেন্দ্রিক আওয়ামী লীগের এক নেতার অনুসারী বলে জানা গেছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে অভিযান ॥ এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে এসএমপি কমিশনারের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। রবিবার দুপুর একটার দিকে নগরীর শাহজালাল উপশহরের সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কাউন্সিলরবৃন্দ। এ সময় দোষীদের গ্রেফতারে পুলিশ জোর তৎপরতা চালানো এবং ভিকটিমকে আইনী সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও পুলিশের উপস্থিত কর্মকর্তাবৃন্দ। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে বখাটেপনা, ইভটিজিং ও ধর্ষণসহ সকল প্রকার অপরাধ কর্মকান্ড প্রতিরোধে এখন থেকে নিয়মিত সিসিক ও পুলিশ যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে। অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন সিসিকের নির্ধারিত ম্যাজিস্ট্রেট। বড়ভাইদের ছত্রছায়ায় ছিল বখাটে রনি ॥ এমসি কলেজের এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বাগুনিপাড়া গ্রামের শাহ্ জাহাঙ্গীরের ছেলে শাহ্ মাহবুবুর রহমান রনি। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার কারণে রনি ও তার পরিবারের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছেন এলাকার লোকজন। পাশাপাশি রনিকে ধরিয়ে দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ। জানা যায়, শাহ্ মাহবুবুর রহমান রনি শায়েস্তাগঞ্জ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে এমসি কলেজে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত রয়েছে। পড়ালেখায় মেধাবী রনি ছোটবেলায় অনেকটা শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল। তবে কলেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তার স্বভাব-চরিত্রে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। বিভিন্ন ধররের নেশা, বখাটেপনা, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে এলাকায় থাকাকালে রাজনীতিতে সে ততটা সক্রিয় ছিল না। সিলেট যাওয়ার পর বড়ভাইদের ছত্রছায়ায় সেই রনি হয়ে ওঠে বেপরোয়া। ছাত্রলীগের সঙ্গে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি এম সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে তুলেছে একটি ‘গ্যাং’। যে ‘গ্যাং’য়ের অন্যতম সদস্য শায়েস্তাগঞ্জের এই বখাটে রনি। এই ‘গ্যাং’টি ছিল এমসি কলেজ এলাকার আতঙ্ক। এমসি কলেজের ছাত্রাবাস ভাংচুর ও পোড়ানোর সঙ্গেও এই ‘গ্যাং’টি জড়িত ছিল বলে জানান শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন তারা। এমসি কলেজের ক্যাম্পাসটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় সেখানে প্রতিদিন বিকেলে অনেক মানুষ ঘুরতে যান। পর্যটকদের টাকা, মোবাইল, মোটরসাইকেল, দামী হাতঘড়ি, নারীদের সোনা-গহনা ছিনতাইয়ের মূল চক্র ছিল ‘সাইফুর গ্যাং’। যার অন্যতম সহযোগী ছিল শায়েস্তাগঞ্জের মাহবুবুর রহমান রনি। এলাকাবাসীর দাবি, রনির ওপর ভর করে তার পরিবার ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ হয়েছে। সিলেটে চাঁদাবাজি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা বাড়িতে পাঠাত রনি। এলাকায় আসলে নিজেকে অনেক বড় ছাত্রলীগ নেতা দাবি করত সে। এলাকার বখাটেদের নিয়ে বেপরোয়া চলাফেরা ও রাতে নেশার আড্ডা বসাত। কোমরে অস্ত্র নিয়ে চলাফেরাই ছিল তার ‘লাইফ স্টাইল’। কলেজ অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি আওয়ামী লীগের ॥ সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় ওই কলেজের অধ্যক্ষ ও ছাত্রাবাসের সুপারের পদত্যাগ দাবি করেছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ। কলেজ বন্ধ থাকা অবস্থায়ও কী করে ছাত্ররা ছাত্রাবাসে থাকে এই প্রশ্নও তুলেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এ ঘটনায় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়- শুক্রবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা এক দম্পতিকে রাত ৯টায় কতিপয় ছাত্র নামধারী দুর্বৃত্ত কলেজ ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে স্বামীকে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা ঐতিহ্যবাহী সিলেট এমসি কলেজকে কলুষিত করেছে। আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট জেলা শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট মোঃ লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোঃ নাসির উদ্দিন খান উক্ত ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। করোনাকালীন যেখানে সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে সেখানে সিলেট এমসি কলেজের মতো স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসে যেভাবে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে, তা আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সর্বতোভাবে নির্যাতিত উক্ত নারী ও তার পরিবারের পাশে থেকে যতটুকু আইনী সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত আছি। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাস বন্ধ থাকাকালে কিভাবে দুর্বৃত্তরা স্বামী-স্ত্রীকে ধরে নিয়ে ছাত্রাবাসে প্রবেশের সুযোগ পেল তা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চায়। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্বাধীন প্রতিষ্ঠানে আদৌ কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল কিনা তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা সিলেট এমসি কলেজের অধ্যক্ষ, দায়িত্বহীন অধ্যক্ষ ও ছাত্রাবাসের সুপারের পদত্যাগ দাবি করছি। উক্ত ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তারা কোন দলের হতে পারে না। ধর্ষকদের কোন দল নেই। তাদের পরিচয় একটাই তারা ঘৃণ্য অপরাধী। অনতি বিলম্বে এই ঘৃণ্য অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ যা বললেন ॥ দীর্ঘদিন ধরে কলেজ বন্ধ থাকা অবস্থায়ও ছাত্রাবাস খোলা রাখার কারণ জানতে চাইলে শনিবার দুপুরে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, কলেজের গরিব ও মেধাবী ছাত্রদের সুবিধার জন্য ছাত্রাবাস খোলা ছিল। যারা কিনা টিউশনি ও ছোটখাটো চাকরি করে তাদের পড়াশোনার খরচ জোগাচ্ছে। তবে কলেজের ছাত্রাবাস খোলা থাকলেও হোস্টেলের ক্যান্টিন বন্ধ ছিল, ছাত্রাবাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা খাওয়া দাওয়া করত বাইরেই। ছাত্রাবাস ছাত্রলীগের দখলে ॥ তবে কলেজ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ছাত্রলীগের দখলে। ছাত্রদের পাশাপাশি অনেক অছাত্রও এখানে আস্তানা গেড়েছে। ছাত্রাবাসের ভেতরে নিজেদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে কিছু ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। টিলাগড় এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার প্রশ্রয়ে ছাত্রাবাসে ভেতরে নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে তারা। মাদক সেবন ও ব্যবসা, জুয়ার আসর বসানোসহ নানা অপকর্ম চলে ছাত্রাবাসের ভেতরে। ছাত্রাবাসের ভেতরে অস্ত্রের মজুদ করে রাখারও অভিযোগ রয়েছে। মহানগর ছাত্রলীগ ॥ সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ, ঢাবি শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তারকে ধর্ষণ, নিপীড়ন ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন এবং তার সহযোগী ভিপি নূরসহ সকল ধর্ষকের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার বিকেল ৩টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ নেতা হুসাইন মুহাম্মদ সাগরের সভাপতিত্বে ও মহানগর ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধন অনুষ্ঠানে বক্তারা বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত ধর্ষণকা-ে যারা জড়িত তাদের অনতি বিলম্বে গ্রেফতার ও দ্রুতবিচার আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। গ্রেফতার ৭ আসামির অপরাধ স্বীকার ॥ খাগড়াছড়ি থেকে পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে ডাকাতি ও প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ৭ আসামি অপরাধ স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজ। সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আলামতসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের গ্রেফতারে সক্ষম হওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরলেও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি। ঘটনার প্রতিবাদে পালিত হয়েছে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, ‘ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সকলেই বিভিন্ন মামলায় জামিনপ্রাপ্ত আসামি।’ এই ঘটনায় সাতজনকে আটক করা হয়। আটককৃত হলেন মালমার প্রধান আসামি মোঃ আমিন, মোঃ বেলাল হোসেন, মোঃ ইকবাল হোসেন, মোঃ আবদুল হালিম, শাহিন মিয়া, মোঃ অন্তর, আব্দুর রশীদ। বিভিন্ন মামলায় জেলে থাকাকালে তাদের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি হয়। ঘটনার দিন আসামিরা সংগঠিত হয়ে মাটিরাঙ্গা থেকে ওই নারীর বাড়িতে ঢোকে। এ সময় তারা দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে বাবা- মাসহ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীকে বেঁধে ফেলে। পরে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীকে আলাদা কক্ষে নিয়ে আসামিরা গণধর্ষণ করে। পরে তারা বাড়ির নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে চলে যায়। ঘটনায় ধর্ষিতার মা ৯ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে খাগড়াছড়ি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ডাকাতির ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করেন। পুলিশ এরই মধ্যে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৭ আসামিকে গ্রেফতার ও ডাকাতির মালামালসহ ডাকাতির সময় ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিক্সাটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিকে খাগড়াছড়ি আমলি আদালতের বিচারক মোর্শেদ আলমের আদালতে ভিকটিমকে হাজির করে পুলিশ। আদালত তার ২২ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ শেষে পরিবারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়ার আদেশ দেয়। পুরে পুলিশ প্রহরায় তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ মামলার বাদী (পুষ্প রানী চাকমা ) ঘটনার পর পুলিশী কার্যক্রম নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আটককৃত ৭জনই ডাকাতি ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। আসামিরা আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী দিলে রিমান্ড চাইবে না বলে জানিয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ গোলাম আফসার। খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজ ঘটনাকে ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে বলেন, ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি বলেই দায়ীদের চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছি। ডাকাতি ও প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ৭ আসামি অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দী দিতে রাজি হয়েছে। কোন কোন ডাকাত প্রতিবন্ধী নারীকে তিনবারও ধর্ষণ করেছে দাবি করে পুলিশ সুপার বলেন, অন্য আসামিদেরও খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় মূল আসামি গ্রেফতার ॥ সুনামগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় এমসি কলেজ হোস্টেলে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনার হোতা সাইফুর গ্রেফতার হয়েছে। রবিবার ভোর ৭টায় ছাতক থানার নোয়ারাই খেয়াঘাট থেকে এসআই হাবিবুর রহমান পিপিএম এবং এএসআই মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ছাতক থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার সকালে ছাতক খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় এসআই হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সাইফুর রহমানকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, আসামি সাইফুর রহমান নোয়ারাই খেয়াঘাট দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। একই ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রবিউল হাসানকে গ্রেফতার করতে তার গ্রামের বাড়ি দিরাইয়ে অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ। উপজেলার জগদল এলাকায় তার গ্রামের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে দিরাই থানা পুলিশ। রবিউল হাসানের গ্রামের বাড়ি উপজেলার জগদল ইউপির বড়নগদীপুর। সে মূলত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকার বলয়ের ছাত্রলীগ নেতা ও এমসি কলেজ শাখা ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’র সভাপতি। রবিউলের এমন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন জগদল ইউনিয়নসহ তার গ্রামবাসী। হবিগঞ্জে আরও এক আসামি গ্রেফতার ॥ হবিগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে নববধূকে গণধর্ষণ মামলার আরও এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম অর্জুন লস্কর। সে এই মামলার চতুর্থ আসামি ও সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে। রবিবার সিলেট গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। রাঙ্গামাটিতে মানববন্ধন ॥ রাঙ্গামাটি থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, খাগড়াছড়িতে প্রতিবন্ধী পাহাড়ী নারী ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পাহাড়ের ৫টি সংগঠন যৌথভাবে মাঠে নেমেছে। তারা রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের সামনে দীর্ঘ মানববন্ধন করেছে।
×