ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ দানের ৪৬তম বার্ষিকীতে ওয়েবিনারে দুই বাংলার বিশিষ্টজনরা

বঙ্গবন্ধু প্রথমত একজন বাঙালি-দ্বিতীয়ত একজন মানুষ- ধর্মীয় পরিচয় ছিল তারপরে

প্রকাশিত: ১৭:৪২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

বঙ্গবন্ধু প্রথমত একজন বাঙালি-দ্বিতীয়ত একজন মানুষ- ধর্মীয় পরিচয় ছিল তারপরে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘শুধু জাতিসংঘে নয়, ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে চীনের রাজধানী তৎকালীন পিকিং-এ অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিস্মিত ও অভিভূত করেছিলেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অগাধ ভালবাসার এরকম দৃষ্টান্ত তাঁর বহু ভাষণ ও রচনায় পাওয়া যাবে। অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র গঠন করে বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে অভিষিক্ত করেছেন। এ কারণেই বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু প্রথমত একজন বাঙালি, দ্বিতীয়ত একজন মানুষ, তার ধর্মীয় পরিচয় ছিল তারপরে। শুক্রবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দানের ৪৬তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং পশ্চিমবঙ্গের ‘আমরা মনভাসি’র যৌথ উদ্যোগে এক ওয়েবিনার আয়োজনে বক্তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এভাবেই নিজেদের অভিমত প্রকাশ করেন। নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনলাইন আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সমাজকর্মী কাজী মুকুল, শহীদ সন্তান ডাঃ নুজহাত চৌধুরী। ভারত থেকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসের মাননীয় উপরাষ্ট্রদূত জনাব তৌফিক হাসান, সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ হাশমত জালাল, কবি, লেখক ও সাংবাদিক, শুভরঞ্জন দাসগুপ্ত, অধ্যাপক মননকুমার মন্ডল, (অধ্যাপক বাংলা বিভাগ, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ও মানবাধিকার কর্মী ইলোরা দে, (সাধারণ সম্পাদক, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি)। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী শিউলি ভট্টাচার্য, সংস্কৃতি সম্পাদিকা, (ইন্দো-বাংলাদেশ ফোরাম ফর সেক্যুলার হিউম্যানিজম)। স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন আমরা মনভাসি’র সাধারণ সম্পাদক ও ইন্দো-বাংলাদেশ ফোরাম ফর সেকুলার হিউম্যানিজম পশ্চিমবঙ্গের যুগ্ম সম্পাদক সংস্কৃতিকর্মী পার্থ দে। সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার কালপঞ্জিতে ২৫ সেপ্টেম্বর এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিবস। ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির এক সপ্তাহের ভেতর ২৫ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলায় ভাষণ প্রদান করে সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত জাতিসমূহের গভীর শ্রদ্ধা যেমন অর্জন করেছেন, একইভাবে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনের উপরাষ্ট্রদূত তৌফিক হাসান বলেন, ‘১৯৭৪ সালে আজকের দিনে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান নিঃসন্দেহে বিশ্বের বুকে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছিলেন, তেমনি বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ণ বাংলা ভাষাভিত্তিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং জাতিসংঘের সদস্যপদ অর্জনের পর সেখানে প্রদত্ত বাংলা বক্তৃতার মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে আরও সুউচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি বছর জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা দিয়ে আসছেন এবং তিনি বাংলাকে জাতিসংঘের সপ্তম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানেরও আহ্বান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের সেই বাংলা ভাষার বলিষ্ঠ উচ্চারণ এবং সাহসী পদেক্ষেপ সমগ্র বাঙালি জাতির জন্যই একটি অতীব গর্বের ও শ্রদ্ধার বিষয়।’ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘ক্ষুধা, দারিদ্র এবং বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়ার কথা বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে তাঁর ভাষণে বলেছিলেন। ভাষণের শেষে তিনি বলছিলেন, মানুষের অজেয় শক্তির প্রতি বিশ্বাস, মানুষের অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা, এবং অজেয়কে জয় করার শক্তির প্রতি অকুণ্ঠ বিশ্বাস রেখে আমি আমার বক্তৃতা শেষ করতে চাই। আমাদের মতো যেসব দেশ সংগ্রাম ও আত্মদানের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে আত্মপরিচয়ে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে তারা দৃঢ়। দৃঢ়তাই জনগণের চরম শক্তি। আমরা যেন বঙ্গবন্ধুর এই কথাগুলো স্মরণ করি।’ বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আজকের দিনটি শুধু বাংলাদেশের জন্যই গর্বের দিন নয়, এটি গোটা বাঙালি জাতির জন্যই গৌরবের, কারণ ১৯৭৪ সালের এই দিনটিতেই জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ হয়েছিল, আর সে ভাষণ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলায় এই ভাষণ ১৯৭২ সালেই হতে পারত, কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার শত্রু চীন বারংবার ভেটো দিয়ে জাতিসংঘে আমাদের সদস্য হওয়ার পথ রুদ্ধ করে রেখেছিল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপদমস্তক একজন বাঙালি একথা উল্লেখ করে তিনি বলনে, বঙ্গবন্ধু প্রথমত একজন বাঙালি, দ্বিতীয়ত একজন মানুষ, তার ধর্মীয় পরিচয় ছিল তারপরে। সাহিত্যের ছাত্র না হয়েও বাংলা সাহিত্যে ছিল তাঁর অসাধারণ দখল। তিনি গভীরভাবে রবীন্দ্র ভক্ত ছিলেন। সময় পেলেই রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতেন। বিশ্বসাহিত্যের পাশাপাশি নজরুল, জীবনানন্দ, সুকান্ত, শরৎ, বঙ্কিম, মুজতবা আলি থেকে আরম্ভ করে লালন সাহিত্যও তিনি অধ্যয়ন করেছেন।
×