ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেটের সব ক্ষেত্রে নজর রাখা হচ্ছে

ডিজিটাল সুরক্ষা তৈরিতে সরকারের নানা উদ্যোগ

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

ডিজিটাল সুরক্ষা তৈরিতে সরকারের নানা উদ্যোগ

ফিরোজ মান্না ॥ ডিজিটাল সুরক্ষা তৈরি করতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে ডিজিটাল ডিভাইস সুরক্ষা, সফটওয়ার নিরাপত্তা, পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা, লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক সুরক্ষা, ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা, ইমেল ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সতর্ক থাকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এসব বিষয় নিরাপদ রাখার জন্য বিটিআরসির পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ অধিদফতর, পুলিশসহ সরকারের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ ইন্টারনেটের সব ক্ষেত্রে নজর রাখতে কাজ করছে। এ বিষয়ে জনসচেতনারও প্রয়োজন উল্লেখ করা হয়েছে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, ইন্টারনেট ও সার্ভার সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে সতর্ক না হলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। নিরাপদ ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের কলাকৌশল না জেনে ইন্টারনেট ব্যবহার করার ফলে অনলাইন সিস্টেম, ডিজিটাল ডিভাইস ও এতে সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো বিভিন্ন ধরনের সাইবার আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ডিজিটাল ডিভাইস ও তথ্য সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে নিরাপদ ইন্টারনেট থাকতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে ইন্টারনেটকে নিরাপদ করার নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। টেলিযোগাযোগ অধিদফতর ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন এ্যান্ড রেসপন্স’ প্রকল্পের মাধ্যমে ইন্টারনেটসহ সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যমকে নিরাপদ করা হচ্ছে। বিটিআরসি, পুলিশসহ সরকারের কয়েকটি দফতর কাজ করে যাচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে পর্ন সাইটসহ হাজার জুয়ার সাইট বন্ধ করা হয়েছে। গুজব ছড়ানো অনেকাংশে বন্ধ হয়ে গেছে। ইন্টারনেট একদিকে যেমন সুফল বয়ে আনে অন্যদিকে বিপর্যয়ও ডেকে আনছে। যাতে দেশে কোন সাইবার নৈরাজ্য তৈরি না হয় তার জন্য টেলিযোগাযোগ অধিদফতরের ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন ও রেসপন্স প্রকল্প’ বড় ধরনের কাজ করছে। ডিজিটাল সুরক্ষা না থাকলে যে কোন সময় বিপর্যয় ঘটতে পারে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জনকণ্ঠকে বলেন, ২০১৮ সালে প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি সময়োপযোগী আইন উল্লেখ করে বলেন, সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপের কিছু দেশ ডিজিটাল অপরাধ প্রতিহত করতে অনেক শক্ত আইন প্রণয়ন করেছে। ডিজিটাল অপরাধ প্রতিরোধে সাইবার থ্রেট ডিটেকশন ও রেসপন্স প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিগত দিনে সীমিত সামর্থ্য দিয়েও তারা যে কাজ করেছে- উন্নত বিশ্বেও তা পারেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সচেষ্ট না হলে কী পরিমাণ সাইবার নৈরাজ্য হতো তা কল্পনাও করা যায় না। ইন্টারনেট হচ্ছে জ্ঞান ভা-ার, শিক্ষার্থীরা সারাদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করবে তাতে আপত্তি নেই, তবে ইন্টারনেট নিরাপদ রাখতে সতর্ক থাকতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা মেল এ্যাকাউন্ট দুই স্তরের ভেরিফিকেশন্স ব্যবহার করতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে পারলে কেউ এ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারবে না। ডিজিটাল দুনিয়া অনেক ঝুকিপূর্ণ। স্পাম কখনও খুলবে যাবে না। প্রযুক্তি দিয়ে সংগঠিত অপরাধ প্রযুক্তি দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। প্রযুক্তি বন্ধ করে দিয়ে নয়। আগামী দিনের প্রযুক্তির অভাবনীয় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন প্রজন্মকে উপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে ইন্টারনেট থেকে তাদের সরানো যাবে না। বরং তাদের জন্য ইন্টারনেট নিরাপদ রাখতে হবে, বন্ধ নয়। দেশে ইন্টারনেট প্রসার ঘটেছে গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। ২০০৮ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৮ লাখ। গত দশ বছরে তা সাড়ে ৯ কোটি অতিক্রম করেছে। দেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে অভাবনীয় রূপান্তর হয়েছে। আমরা ডিজিটাল হব নিরাপদও থাকব। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার বা সন্তানের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটা খুব প্রয়োজন ছিল। এটা এখন প্রমাণিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার বড় উদ্বেগের কারণ। তবে সরকারের সফল প্রচেষ্টায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি এবং প্রচলিত আইন মেনে কন্টেন্ট প্রকাশে সম্মত হয়েছে। ভবিষ্যতে ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনুরূপ ভূমিকা রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি তথ্যযোগাযোগ প্রযুক্তি বিকাশে দেশে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। ২০০৮ সালেও দেশে সাড়ে সাত জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে দেশে এক হাজার ৭শ’ জিবিপিএসে ব্যবহার হচ্ছে। এ থেকেই প্রমাণ করে দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে কত দূর এগিয়ে গেছে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যান্ডউইডথ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড) ৫-৯৯ পর্যন্ত এমবিপিএস প্রতি চার্জ ৩শ’ টাকা। ন্যূনতম ৫ বছর মেয়াদী চুক্তিতে এমবিপিএস প্রতি চার্জ ২৭০ টাকা। ব্যান্ডউইডথ এমবিপিএস ৩০০০ এবং তদুর্ধ এমবিপিএস প্রতি চার্জ ২শ’ টাকা। ন্যূনতম ৫ বছর মেয়াদী চুক্তিতে এমবিপিএস প্রতি চার্জ ১৮০ টাকা। সরকারী অফিস, আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট অফিসের জন্য ব্যান্ডউইডথ এমবিপিএস ৫-৪৯ পর্যন্ত এমবিপিএস প্রতি চার্জ ৩৯৫ টাকা। ন্যূনতম ৫ বছর মেয়াদী চুক্তিতে এমবিপিএস প্রতি চার্জ ৩৫৫ টাকা। ৩ হাজার এমবিপিএস প্রতি চার্জ ২৫০ টাকা। ন্যূনতম ৫ বছর মেয়াদী চুক্তিতে এমবিপিএস প্রতি চার্জ ২২৫ টাকা করা হয়েছে। ইন্টারনেটের দাম কমানোর কারণেই দেশে এক দশকে সাড়ে ১১ কোটি গ্রাহক সৃষ্টি হয়েছে। আগামী বছর গ্রাহক সংখ্যা ঠিক কত হবে এখনই বলা যাচ্ছে না।
×