ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রিয় ফুলে আবার সেজেছে চারপাশ

কদম্বতলে বংশী আর বাজে না, তবু ডেকে যায় নীপবন

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

কদম্বতলে বংশী আর বাজে না, তবু ডেকে যায় নীপবন

মোরসালিন মিজান ॥ বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান...। হ্যাঁ, কদম বাদল দিনের ফুল। বর্ষায় ফুটে। একই সময় আরও অনেক ফুল ফুটে। সে যতই ফুটুক, কদম স্পেশাল। বর্ষাকে বাঙালী এ ফুল দিয়েই চেনে। ফুলটি ফুটলেই বোঝা যায়, বর্ষার কাল চলছে। অথবা বর্ষা শুরু হলেই চোখ খুঁজে বেড়ায় কদমের ফুল। তবে এখন শরত। বর্ষা বিদায় নিয়েছে অনেক আগে। তাহলে এই সময়ে এসে কেন কদমের কথা? কারণ আছে। সম্প্রতি বর্ষায় ফুলটিকে তেমন দেখা যাচ্ছে না। রাজধানী শহরে তো একদমই নয়। বর্ষা যাই যাই করছিল যখন, অল্প স্বল্প ফুটতে শুরু করে। আর এখন শরতের কালে এসে দেখা যাচ্ছে গাছ ভর্তি ফুল। বর্ষার কাল বিদায় নিলেও, বৃষ্টি অব্যাহত আছে। বৃষ্টির জলে ধোয়া ফুল মুগ্ধ করে রেখেছে প্রকৃতিকে। ঢাকার রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বলধা গার্ডেনে আছে কদম গাছ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও কম বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন রাস্তার ধারে, ঝিলের পাড়ে আছে। আর মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে তো আছেই। এখন অধিকাংশ গাছেই ফুল। উপরের দিকে তাকাতেই মন ভাল হয়ে যায়। কানে বাজে : এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে, এসো করো স্থান নবধারা জলে...। আর সে জনপ্রিয় লোকসঙ্গীতের কথা তো না উল্লেখ করলেই নয়, যেখানে প্রেয়সী কদম্ব তলে ছুটে আসতে মরিয়া। প্রেমিক পুরুষের জন্য আকুতি প্রকাশ করতে গিয়ে গ্রামীণ নারী গাইছে : প্রাণ সখিরে/ঐ শোন কদম্ব তলে বংশী বাজায় কে/বংশী বাজায় কে রে সখী/বংশী বাজায় কে/আমার মাথার বেনী বদল দেব/তারে আইনা দে...। নারী প্রিয় কদম ফুল খোঁপায় পরে। শহরেও দেখা যায় এমন দৃশ্য। দুরন্ত কিশোরের দল উঁচু গাছ থেকে কদম ফুল সংগ্রহ করে গুচ্ছ আকারে বিক্রি করে। এখন আশপাশে একটু খেয়াল করলেই পেয়ে যাবেন তাদের। কদম নামে সবাই চিনলেও এর আছে আরও কিছু নাম। এই যেমন : বৃত্তপুষ্প, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, প্রাবৃষ্য, ললনাপ্রিয়, সিন্ধুপুষ্প ও সুরভি। কদম গাছ দীর্ঘাকায় বৃক্ষ। সরল কা- উপরের দিকে বহু দূর পর্যন্ত উঠে যায়। শাখা-প্রশাখাও অনেক। এগুলো ভূমিভাগের সমান্তরালে প্রসারিত হয়। কদম ফুল দেখতে গোলাকার। ছোট টেনিস বলের মতো। মাংসল অংশটিকে আড়াল করে রাখে অপরূপ মঞ্জরি। পূর্ণ প্রস্ফুটিত মঞ্জরিতে কমলা ও সাদা রং স্পষ্ট। ফুলের বৃতি সাদা। দল হলুদ। ফুলটিই পরে ফলে পরিণত হয়। কাঠবিড়ালীর বেশ মজা করে খায়। এমনকি গ্রামের দুরন্ত ছেলেদের ফলটি খেতে আমি নিজেও দেখেছি। পাতাও বেশ সুন্দর। বড় এবং কিছুটা ডিম্বাকৃতির। বড় ও ঘন পাতার কারণে গাছের নিচটা ছায়াঘন ও সুশীতল থাকে। কদমের ভেষজ গুণও আছে। এখন করোনার কাল। প্রচুর জ্বর হচ্ছে মানুষের। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, কদম গাছের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবে বেশ উপকারী। তবে সবার আগে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা চাই। বলা চলে মৌসুম চলছে এখন। ফুলপ্রেমীরা আশপাশে তাকান উপভোগ করুন কদমের সৌন্দর্য।
×