ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে প্রাইভেট গাড়ি ॥ যানজট নিরসনে গণপরিবহন বাড়ানোর তাগিদ

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০

বাড়ছে প্রাইভেট গাড়ি ॥ যানজট নিরসনে গণপরিবহন বাড়ানোর তাগিদ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দেশে সরকারী রেজিস্ট্রেশনভুক্ত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। এর মধ্যে ৩৫ লাখ ব্যক্তিগত যান। ৩০ লাখ রয়েছে মোটরসাইকেল। তিন লাখ ৭০ হাজারের বেশি আছে প্রাইভেটকার। বাদবাকি গণপরিবহন ও অন্যান্য। আর রাজধানী ঢাকায় তালিকাভুক্ত যানবাহনের সংখ্যা ১৫ লাখ ৭৬ হাজারের বেশি। ১০ লাখের বেশি আছে ব্যক্তিগত যান। করোনার মধ্যেও ব্যক্তিগত যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন থেমে নেই। চলতি বছর জুন মাস পর্যন্ত সারাদেশে এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত যানের সংখ্যাই বেশি। এই পরিসংখ্যান বলে দেয়, গণপরিবহনের তুলনায় দেশে দ্রুত বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা। ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত করা ও গণপরিবহন বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও এর বাস্তবায়ন খুবই কম। জনস্বার্থে গণপরিবহনের জন্য যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা ঝুলে আছে বছরের পর বছর। এই প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত পরিবহনের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। কয়েক বছর আগে ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত করতে প্রতি শুক্রবার সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা দিয়ে ব্যক্তিগত যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও দু’সপ্তাহ পর এই উদ্যোগের কথা সবাই ভুলে গেছে। এমন বাস্তবতা সামনে রেখে আজ ২২ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস’ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে। ‘হাঁটা ও সাইকেলে ফিরি, বাসযোগ্য নগর গড়ি’ স্লোগান সামনে রেখে ৬০টি সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে দিবসটি উদ্যাপন করা হবে। বিআরটিএ হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে রেজিস্ট্রেশনকৃত যানবাহনের মধ্যে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও জীপসহ ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করছে। এর বাইরে অটোরিক্সা, বাস-মিনিবাস, অটোটেম্পো, টেক্সি মিলিয়ে মোট গণপরিবহন চলছে মাত্র সাড়ে পাঁচ লাখ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশে গণপরিবহন পর্যাপ্ত নয়। ফলে ব্যক্তিগত যানের পাশাপাশি বাড়ছে অনুমোদনহীন যানবাহনের সংখ্যাও। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে ১১লাখের বেশি চলছে অনুমোদনহীন ইজিবাইক। এর বাইরে অনুমোদনহীন বাহন হিসেবে পরিচিত নসিমন, করিমন, ভটভটি, ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও প্যাডেলরিক্সার সংখ্যা কমপক্ষে ৪০ লাখ। এসবের মধ্যে বেশি নিষিদ্ধ বাহন সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বিশেষভাবে দায়ী বলেও মনে করে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। নাগরিকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে বরং সাইকেল, হাঁটা বা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে সত্তরের দশকে ইউরোপে গাড়িমুক্ত দিবসের সূচনা হয়। ২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারী উদ্যোগে দিবসটি উদ্যাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকারী-বেসরকারী সংস্থার সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়। এই দিবসের অঙ্গীকার অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সীমিত বা নিয়ন্ত্রিত করার উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে। নগর ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি পরিকল্পিত শহরের জন্য ২৫ ভাগ রাস্তার মধ্যে ঢাকায় আছে সর্বোচ্চ সাত ভাগ। এই রাস্তায় আড়াই থেকে তিন লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারে। অথচ প্রাইভেটকারই চলছে প্রায় তিন লাখ। প্রায় সাড়ে সাত লাখ চলছে মোটরসাইকেল। রিক্সা ১০ লাখের বেশি। অন্যান্য পরিবহন তো আছেই। যানজটের কারণে গণপরিবহনের সংখ্যা কমছে। এই সুযোগে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানজট। তাই দ্রুত ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে বাস, মিনিবাস, মেট্রোরেল নির্মাণ, ট্যাক্সি ও অটোরিক্সা নামানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। অন্যথায় ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের পথচলা খুবই কঠিন হবে। যারা গণপরিবহনের ওপর নির্ভর করে রাস্তায় বের হন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশে^র উন্নত শহরগুলোতে এখন ব্যক্তিগত যানবাহন কমানোর রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। সেখানে সর্বাধিক সুবিধাসম্মত উন্নতমানের গণপরিবহন চালু করা হচ্ছে। হাত বাড়ালেই মিলছে যানবাহন। ফলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার প্রয়োজন মনে করেন না সেসব নগরের মানুষ। পার্র্র্শ্ববর্তী দেশ কলকাতা শহরে বেশিরভাগ মানুষ ট্রেননির্ভর। মেট্রোসহ সাধারণ ট্রেন সার্ভিস একেবারেই অহরহ। এছাড়া সড়কপথে বাসসহ গণপরিবহনের অভাব নেই। ফলে সেখানেই দিন দিন কমছে ব্যক্তিগত যানের চাহিদা। ব্যক্তিগত যানবাহন নিরুৎসাহিত করা ও গণপরিবহন বাড়ানোর বিষয়ে পদক্ষেপ প্রসঙ্গে বিআরটিএর সাবেক সচিব শওকত আলী বলেন, যে সকল শহরে যানজট ও গণপরিবহনের ভোগান্তি রয়েছে সেখানে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দিল্লীসহ বিভিন্ন শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। যা আমরা ফলো করতে পারি। তিনি বলেন, জোড়-বেজোড় করে ব্যক্তিগত গাড়ি নামানো, একেক এলাকায় নির্দিষ্ট দিনে গাড়ি চালানো এমনসব পদক্ষেপে সাধারণ পরিবহন চলাচলে সুবিধা হয়েছে। আমিও মনে করি, ডিটিসিএ ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এ রকম পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। তিনি জানান, এক সমীক্ষায় বিশ্বব্যাংক বলেছে, এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের শহর ঢাকা। এই শহরে দিন দিন গণপরিবহন কমছে। ঘণ্টায় গাড়ির সর্বোচ্চ গতি চার কিলোমিটারের কম। যানজট, ভাড়া নিয়ে জটিলতা, অব্যাহত লোকসানের কারণে গণপরিবহন হ্রাস পাচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, রাজধানীতে যে পরিমাণ বাস চলার কথা তা চলছে না। দিন দিন এর সংখ্যা কমছে। এই সুযোগে দ্রুত বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি। আমরা শুনেছি সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকটি সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বন্ধ করা হবে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হলো কাগজপত্রে গণপরিবহনের সংখ্যা যা আছে, রাস্তায় তা নেই। ১০ বছরে বেড়েছে তিনগুণ যান ॥ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে সারাদেশে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ২৪৪টি। গত ১০ বছরে তা তিনগুণের বেশি ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধিত পরিবহনের সংখ্যা ৪৪ লাখ ৭১ হাজার ৬২৫টি। ২০১০ সালে বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার ৭৭৮টি। ১০ বছরে সারাদেশে এই সংখ্যা ৮০ হাজারের কিছু বেশি। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি বাস ও ২৮৫টি মিনিবাসের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। ২০১০ সালে সারাদেশে নিবন্ধিত মাইক্রোবাসের সংখ্যা ৬৬ হাজার ৩৭৩, বর্তমানে এক লাখ পাঁচ হাজার ৮৯৬টি। জুন পর্যন্ত মাইক্রোবাসের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে এক হাজার ১৪৯টি। যার বেশিরভাগই ব্যক্তিগত যান হিসেবে চলাচল করে। ব্যক্তিগত যান হিসেবে পরিচিত ২০১০ সালে সারাদেশে রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরসাইকেলের সংখ্যা সাত লাখ ৫৯ হাজার ২৫৭, বর্তমানে ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৬১২টি রয়েছে। গত ছয় মাসে রেজিস্ট্রেশন পাওয়া বাইকের সংখ্যা এক লাখ ৩৮ হাজারের বেশি। ব্যক্তিগত পরিবহন হিসেবে পরিচিত ২০১০ সালে দেশে নিবন্ধিত প্রাইভেটকারের সংখ্যা ছিল দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৩০টি। বর্তমানে তিন লাখ ৭০ হাজার ৫১৯টি। জুন পর্যন্ত পাঁচ হাজার নয়টি প্রাইভেটকারের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, জুন পর্যন্ত অর্থাৎ গত ছয় মাসে সারাদেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা এক লাখ ৭০ হাজার ১৫টি। ২০১০ সালে সারাদেশে নিবন্ধিত ট্যাক্সির সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ৩৮০টি। এখন টেক্সির দেখা মেলা ভার। বেশি ভাড়ার কারণে ট্যাক্সি সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে বাইরে। মাঝে মধ্যে কিছু ট্যাক্সি দেখা গেলেও সেগুলো আর ভাড়ায় চলে না। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে চালকরা এসব ট্যাক্সি এখন এ্যাপভিত্তিক রাইড হিসেবে পরিচালনা করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেজিস্ট্রেশনের হিসাব বাদ দিলে প্রতিদিন ঢাকায় যুক্ত হচ্ছে ৪০টি ব্যক্তিগত গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেটকার। আর রাস্তায় চলছে সাড়ে তিন লাখের বেশি এই ধরনের যানবাহন। বিশিষ্ট নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নূরুল ইসলাম নাজেম বলেন, মানুষের আয় বৃদ্ধি, সস্তায় গ্যাস পাওয়াসহ ট্যাক্সি ও অন্যান্য পাবলিক ট্রান্সপোর্টের অভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে। তিনি বলেন, বিকলাঙ্গ করা হয়েছে আমাদের ট্যাক্সি সার্ভিসকে। অন্যান্য সার্ভিসও অজ্ঞাত কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। তাহলে মানুষের চলার কোন ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নৌপথ, বিআরটিএসহ যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। নইলে আগামী দিনে সাধারণ মানুষের পথচলা আরও কঠিন হবে। রাজধানীতে ১৬ লাখ যানের তিন লাখ প্রাইভেটকার ॥ বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের সংখ্যা ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৩০৯টি। জুন পর্যন্ত ছয় মাসে নিবন্ধন দেয়া যানবাহনের সংখ্যা ৪৭ হাজারের বেশি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন দেয়া হয়েছে মোটরসাইকেল। এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩০ হাজার। আর মোট মোটরসাইকেল চলছে সাত লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৫টি। নিবন্ধিত মাইক্রোবাসের সংখ্যা প্রায় নয় হাজার। জুন পর্যন্ত নিবন্ধন পেয়েছে প্রায় এক হাজার নতুন মাইক্রোবাস। বাসের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৪৯। গত ছয় মাসে নিবন্ধিত বাসের সংখ্যা এক হাজার ২৪৫। নগরজুড়ে মিনিবাস চলছে ১০ হাজার ৮০৬টি। গত ছয় মাসে মাত্র ৬২টি নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে। এর বিপরীতে প্রাইভেটকার চলছে দুই লাখ ৯৬ হাজার ৫৯৩টি আর গত ছয় মাসে নতুন রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে চার হাজার ৪৩৬টি প্রাইভেটকার। জানা গেছে, ২০১০ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত পরিবহনের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭টি। সারাদেশের মতো ঢাকাতেও গত ১০ বছরে তিনগুণ যানবাহন বেড়েছে। এই বছর শেষে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। কেন ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ একেবারেই কম। যে হারে ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা ঢাকাসহ সারাদেশে বাড়ছে সে পরিমাণে গণপরিবহন বাড়ছে না। এজন্য মানুষের ব্যক্তিগত পরিবহনের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। ব্যক্তিগত পরিবহন নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক ঋণ বাড়ানো ও কঠোর করা, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা ও দাম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা উচিত। রাজধানীতে ২০০টি পরিবহন কোম্পানির মধ্যে ১০ ভাগ লাভবান আছে জানিয়ে পরিবহন মালিকদের এই শীর্ষ নেতারা জানান, যানজটসহ নানা কারণে বাস কোম্পানিগুলো অনবরত লস দিয়ে আসছে। এ কারণে মালিকরা নতুন নতুন গাড়ি নামাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে সরকারকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। যাত্রা শুরুর কথা ॥ ইউরোপে সত্তরের দশকে ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসের প্রচলন শুরু হয়। বাংলাদেশে ২০০৬ সাল থেকে বেসরকারীভাবে পালিত হয়ে এলেও ২০১৬ সাল থেকে প্রথম সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়। প্রথম বছর ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষসহ (ডিটিসিএ) সরকারী এবং বেসরকারী ৪৪টি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে মানিক মিয়া এভিনিউর উত্তর পাশে (দক্ষিণ প্লাজায়) আলোচনা সভা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার বৃদ্ধিতে জ্বালানি নির্ভরতা ও পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধি পায়। আর স্বল্পসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের জন্য গণপরিবহনের পরিবর্তে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের ফলে সড়কে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়, যা যানজট সৃষ্টি করে। অথচ গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার মাধ্যমে পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ৪ হাজার শহরে দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশে বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর সমন্বয়ে সরকারী এবং বেসরকারী ৬০টি সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার, বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উদ্যাপিত হবে। বিগত বছরের ন্যায় ২০২০ সালেও দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে আয়োজিত কর্মসূচীতে ভিন্নতা আনা হয়েছে। নানা কর্মসূচী ॥ বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস-২০২০ উপলক্ষে সোমবার ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস-২০২০ উদযাপন জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিটিসিএর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন মজুমদার, সাংবাদিক নিখিল ভদ্র প্রমুখ। এছাড়া সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও সাংবাদিকবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছর ‘হাঁটা ও সাইকেলে ফিরি, বাসযোগ্য নগর গড়ি’ স্লোগান সামনে রেখে ৬০টি সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে দিবসটি উদ্যাপন করা হচ্ছে। বর্তমান (কোভিড ১৯) পরিস্থিতিতে এ বছর বাইরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে না। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচী ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হাঁটার ও সাইকেল চালানোর প্রতি উৎসাহিত করতে প্রবন্ধ ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
×