ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে প্রিয় চর ধারাবর্ষা

যমুনার বুকে অপার নিসর্গ, শান্ত স্নিগ্ধ প্রকৃতি

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০

যমুনার বুকে অপার নিসর্গ, শান্ত স্নিগ্ধ প্রকৃতি

সমুদ্র হক ॥ যমুনার বুকে প্রাচীন জেগে থাকা দ্বীপ। পরিচিত চর ধারাবর্ষা নামে। চার ধারে বয়ে যাওয়া যমুনার স্রোত অশান্ত হলেও চর ধারাবর্ষার কোন পরিবর্তন হয় না। মনে হবে বরষার ধারা বহমান। যে কারণে হয়তো কেউ নামই দিয়েছে ধারাবর্ষা। বগুড়ায় এত সুন্দর একটি চর আছে তা অনেকেরই অজানা। লোকজন বগুড়া শহর থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে যমুনা তীরের উপজেলা সারিয়াকান্দি পর্যন্ত যায় পাকা সড়ক ধরে। প্রায় ২৭ বছর আগে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদী ভাঙ্গনের থাবা থেকে মুক্ত করতে যমুনার পশ্চিম তীরে বহু কোটি টাকা ব্যয়ে হার্ড পয়েন্ট রিভেটমেন্ট ‘টি-বাঁধ’ নির্মিত হয়। এরপর লোকজন রিভেটমেন্টের আশপাশে বিনোদনের জায়গা খুঁজে পায়। তরুণদের কাছে পরিচিতি পায় প্রেম যমুনার ঘাট নামে। এর বাইরেরও যে যমুনার নন্দন ভূমি আছে তার খোঁজ কেউ করে না। প্রায় ৩০ বছর আগে বগুড়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক নুরুজ্জামান ভূঁইয়া সারিয়াকান্দি সদর থেকে নৌকায় প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে ধারাবর্ষা চরে গিয়ে খুঁজে পান নিসর্গের এক ভূমি। বন বিভাগের সহযোগিতায় বনায়ন কর্মসূচী নিয়ে চরের উন্নয়নে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেন। সেই থেকে ধারাবর্ষা চর পরিচিত হয়ে ওঠে। দিনে দিনে এই চরের কথা এক কান থেকে চার কান হয়ে পৌঁছে যায় ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে। বিভিন্ন সংগঠন ভরা চাঁদের পূর্ণিমা রাতে চরে তাঁবু খাটিয়ে উৎসবের আয়োজন করে। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডাঃ সামির হোসেন মিশু বাউল শিল্পীদের নিয়ে প্রথম অনুষ্ঠান করেন এই চরে। তারপর বিভিন্ন সংগঠন শুকনো মৌসুমে নানা ধরনের আয়োজন করে ধারাবর্ষা চরে। ভ্রমণপিয়াসীরা মেতে ওঠে রোমান্টিসিজমে। শান্ত স্নিগ্ধ এই চরে ভরা চাঁদের রাতে জ্যোৎস্নায় যমুনায় তাকালে মনে হবে আকাশের চাঁদ নেমে এসেছে ধরনিতে। শান্ত ঢেউয়ের সঙ্গে ধ্রুপদী নাচনে মাতিয়ে তুলেছে ভুবন। এই সময়ে ভ্রমণপিয়াসীদের কেউ সঙ্গীত যন্ত্রে আনন্দের সুর তোলে। কেউ বেহালায় সুর তোলে বেদনার। যে আনন্দ বেদনা সুখ-দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবন প্রবাহ বয়ে চলে ¯্রােতের মতো। ধারাবর্ষা চরে গিয়েছিলেন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের কয়েক সদস্য। সারিয়াকান্দি কালিতলা গ্রোয়েন পয়েন্ট থেকে শ্যালো বড় নৌকায় দেড় ঘন্টায় পৌঁছেন। বনানয়ন কয়েক হাজার গাছের কাছেই খেয়াঘাট। চরের কাছেই পলি পড়ে আরেকটি চর জেগেছে। লোকজন জানালো এই চর ক্ষণস্থায়ী। বর্ষায় নদীর পেটে চলে যায়। তবে মূল ধারাবর্ষা চর জেগে থাকে দ্বীপের মতো। চরে নেমে ভ্রমণপিয়াসী বরেন্য বাচিক শিল্পী শ্রাবণী সুলতানা বললেন বিদেশের মাটিতে এমন এক নিসর্গ দেখেছেন। ধারাবর্ষা যেন অপার নিসর্গ। ছবি তুলছিলেন সরকারী কর্মকর্তা হোসনে আরা বেগম। বললেন এই চিকন বালি এতটাই মসৃণ ও তুলতুলে পা রাখতেই দেবে যায়। নিচ থেকে পানি উঠে আসে। চোরাবালির ভয়ে বেশিক্ষণ রাখা যায় না। ¯্রােতে নামলে সৈকতের কিছুটা অনুভূতি পাওয়া যায়। পার্থক্য সাগর পারের মসৃণ বালি শক্ত। যমুনার বালি খুবই নরম। ধারাবর্ষা চরে যমুনায় নামলে প্রথমে হাঁটু পানি তারপর কোমর পানি তারপর গভীর জল। কেউ এই জলে নেমে জলকেলি খেলছে। কেউ গভীর জলে রাবার বোট নিয়ে আনন্দ করছে। কয়েকজন বললেন এই চরকে পর্যটন স্পট বানিয়ে তো গ্লাইডারে উড়ে উড়ে যমুনা দেখা যায়। তবে ভ্রমণপিয়াসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই চরের খবর পৌঁছে দিচ্ছে। সারিয়াকান্দি এলাকার সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বললেন, শীত মৌসুমে পেশাজীবী সংগঠন সাংস্কৃতিক সংগঠন কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই চরে যায়। দিনভর নিসর্গের ধারায় থেকে ফিরে আসে। কোন কোন সংগঠন সারিয়াকান্দি হার্ড পয়েন্টে টি বাঁধের কাছে বাটির চরে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে। আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্যরা বাটি চরে বিশেষ ধরনের মশাল জ¦ালিয়ে বাউল সঙ্গীতের আসর জমিয়েছিল। এই মশাল যেন সার্চ লাইট। পাশর্^বর্তী দেশ থেকে বিশেষ মশাল মোটা বাঁশের মাথায় ফালি করে কেটে মশাল বসিয়ে জ¦ালিয়ে দিলে টানা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা জ¦লে। দূর থেকে মনে হবে বিদ্যুতের সার্চ লাইট। এই আলোয় মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কনসার্ট পরিবেশিত হয়। ধারাবর্ষা চরে জনবসতি প্রায় ৭ হাজার। ভোটার ৩ হাজার ২শ জন। একজন জনপ্রতিনিধি এই তথ্য দিয়ে বলেন চরের লোকজন কৃষিজীবী। তাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে। চরের ওপারেই জামালপুরে জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলা। ধারাবর্ষা গ্রাম চারভাগে বিভক্ত পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ। চারদিকে ধারাবর্ষা বগুড়া জেলার যমুনার বুকে নিসর্গের প্রাচীন দ্বীপ। পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
×