ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২০:৫১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ

কাজী নজরুল ইসলামের ‘কুলি-মজুর’ কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তি নিবন্ধের সূচনায় উচ্চারণ করতে চাই- ‘আসিতেছে শুভদিন,/ দিনে দিনে বহু বাড়িয়েছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ-/..... একের অসম্মান নিখিল মানব-জাতির লজ্জা- সকলের অপমান !/ মহা-মানবের মহা-বেদনার আজি মহা-উত্থান,/ উর্ধে হাসিছে ভগবান, নিচে কাঁপিতেছে শয়তান!’ প্রাসঙ্গিকতায় উচ্চকিত যে, বর্তমান বিশ্বজুড়ে প্রতিটি জাতি-রাষ্ট্র এবং নাগরিকবৃন্দ এখনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং জীবন বিসর্জনের চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রান্ত করছে। আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি এবং এর আপামর জনগোষ্ঠীও অনেকাংশে সংক্রমণ বিস্তার ও প্রাণসংহারের বাইরে নয়। মোট আক্রান্ত ও মৃত্যু বরণের চিত্র বিশেষ করে বিগত কয়েক মাসের পরিসংখ্যান নতুন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল; জাতি কিছুটা তা কাটিয়ে উঠলেও এখনও পরিপূর্ণ স্বস্তির কোন আবহ পরিলক্ষিত নয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনাজয়ে গৃহীত পদক্ষেপ এবং তার যথার্থ বাস্তবায়ন এই প্রাণঘাতী সংক্রমণ বিস্তার সহনীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই সকল বিরোধ-বিচ্ছেদ-বিভাজনকে নিধন করে নতুন এক মানবিক বিশ্ব গড়ার শিক্ষণীয়-গ্রহণীয় জ্ঞান-অভিজ্ঞতা সঞ্চারণে প্রকৃষ্ট আলোকবর্তিকার নবতর উন্মেষ ঘটেছে। পশুতুল্য কিছু মানবসন্তান এ কঠিন সময়েও কোনভাবেই তাদের লোভ সংবরণ না করে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অপকৌশল ও নিকৃষ্ট উদ্ভাবনী পন্থায় দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নে অদমনীয় প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তারা হয়ত বেমালুম ভুলে গেছে যে, তাদের স্বার্থসিদ্ধি কখনও স্থায়ী হতে পারে না। করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণা-জালিয়াতি-দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর মনোভাব ও ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং সরঞ্জামাদি ক্রয়-বিতরণে নতুন কোন দুর্নীতির সংবাদ আর পাওয়া যাচ্ছে না। মহান আল্লাহ্ সূরা রা’দ এ ঘোষণা করেছেন, ‘আল্লাহ্ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না যে পর্যন্ত না তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তনে এগিয়ে আসে।’ বস্তুতপক্ষে যে কোন পবিত্র ধর্ম ও ধর্ম গ্রন্থে মানব জীবনে উৎকর্ষ অর্জনে চারিত্র্যিক গুণাগুণকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। উত্তম বা অসৎ চরিত্রের বিভাজিত ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন কর্মযজ্ঞকে গ্রহণ-বর্জনের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন এমন একটি অসৎ চরিত্রের বহির্প্রকাশ, যা পুরো জাতির উন্নতি-সমৃদ্ধিকে বিপর্যস্ত করতে পারে। আভিধানিক অর্থে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন হলো সমাজনীতি ও আদর্শবিরুদ্ধ আচরণ বা অপকর্ম। তবে সামগ্রিক প্রচলিত বিবেচনায় আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রবণতা এবং সংশ্লিষ্ট কর্ম দুর্বৃত্তায়নের প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবা গ্রহণ ও প্রদান, আক্রান্ত-শনাক্তকরণ, হাসপাতালে ভর্তি, সেবা প্রদান না করেও অনৈতিক অর্থ আদায়, বিদ্যুত বিল, প্রবাসীদের বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ও বিমানের টিকেট সংগ্রহ ইত্যাদি অসঙ্গতিসহ অরাজক সিন্ডিকেটের অসহনীয় পাপাচার বহুলাংশে দমন করা গেছে। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে সামান্য অক্সিজেন বা অক্সিজেন বঞ্চিত ব্যক্তিদের রাস্তা বা গাড়িতে মৃত্যুবরণের পরিবর্তে প্রায় সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল ও বিভিন্ন করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রে অধিকাংশ রোগীর সেবা শয্যা শূন্য পড়ে আছে। প্রসঙ্গত বিশ্বকবি রবীঠাকুরের ‘ত্রাণ’ কবিতার পংক্তি এক্ষেত্রে সমধিক প্রযোজ্য- ‘এ বৃহৎ লজ্জারাশি চরণ-আঘাতে/ চূর্ণ করি দূর করো। মঙ্গলপ্রভাতে/ মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে/ উদার আলোক-মাঝে, উন্মুক্ত বাতাসে ॥’ দেশের সকল দেশপ্রেমিক ও মানবতাবাদী মানুষের হৃদয়ে রবিঠাকুরের এই অমীয় মিনতিরাশি প্রাণশক্তিতে স্পন্দিত। ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ একযোগে বিরাজমান দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে নিরন্তর প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে যে কোন সমাজের গতিময়তা ও স্বাভাবিকতা বিপন্ন হয়ে থাকে। আমরা বরাবরই লক্ষ্য করেছি যে, জাতির কোন দুঃসময় বা দুর্যোগে অবাঞ্ছিত, অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত মনোবৃত্তির বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে এসব নির্মম কার্যসিদ্ধির মানবরূপী দানবের সংখ্যা কম নয়। আমরা সম্যক জ্ঞাত আছি যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে এবং পরবর্তীতে এ ধরনের কুৎসিত কর্মের কুশীলবরা নিকৃষ্ট চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র পরিপক্ব করার লক্ষ্যে এসব মানবসৃষ্ট কৃত্রিম সঙ্কটকে দুঃসহনীয় করার অপকৌশলে লিপ্ত ছিল। ১৯৭২ সালের ৭ জুন বঙ্গবন্ধু যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সমাজবিরোধী কার্যকলাপ নির্মূল করা জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছিলেন। মজুতদার, চোরাকারবারী ও চোরাচালানীদের হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ‘যারা শহরে সরকারী বাড়ি, গাড়ি দখল করে আছ, যারা অন্যের দোকান বা জমি দখল করে আছ, যারা মজুদ করছ, জিনিসপত্র বিক্রি করছো না, জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছো, তাদের রেহাই নাই... বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। আর ঘুঘু ধান খাওয়ার চেষ্টা কর না। আমি পেটের মধ্য হতে ধান বের করে ফেলব।’ প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত মৃতপ্রায় বাংলাদেশের যুদ্ধোত্তর পরিবেশ নবতর বিতৃষ্ণিত দৃশ্য আমাদের করোনাকালেও পরিলক্ষিত করতে হবে, যা কল্পনাতীত। এটি অনস্বীকার্য যে, শুধু বাংলাদেশ নয়; পুরো বিশ্ব কম-বেশি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। উন্নত বা উন্নয়নশীল, ইসলামী প্রজাতন্ত্র বা গণপ্রজাতন্ত্র, প্রাচ্য বা পাশ্চাত্য সকল দেশেই দুর্নীতির ভয়ঙ্কর প্রভাব রয়েছে। যেসব কারণে মানুষ দুর্নীতি করে থাকে তার মূলে আছে অর্থ, সম্পদ, ক্ষমতা, আধিপত্য, ভোগ-বিলাস ইত্যাদির প্রতি তীব্র দৌর্বল্য। অর্থনৈতিক বৈষম্য বা ধনী-দরিদ্রের মধ্যে অর্থ ও সম্পদের উপার্জন, বিতরণ, ভোগ দুর্নীতির মাত্রা ও প্রকৃতিকে নানাভাবেই উপস্থাপন করে। বিশিষ্ট সমাজ-অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক গুন্নার মিরডালের মতে, ‘সংস্কার, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ইত্যাদি কোন কিছুতেই আমার কোন আস্থা নেই যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতি দূরীকরণের কোন চেষ্টা না হচ্ছে।’ বর্তমান বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থান তৈরিতে সমগ্র বিশ্ব নানা উদ্ভাবনী পন্থা অবলম্বন ও সার্থক প্রয়োগে জনসংখ্যা হ্রাস, শিল্প ও কৃষিতে আধুনিকায়ন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-তথ্যপ্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার, আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক গুণগত শিক্ষা বিশেষ করে উপযোগী বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ, মহিলা উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে নতুন নতুন কর্মসংস্থান-কর্মকৌশলের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। প্রয়োজনীয় ভূমি সংস্কার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অপরিমেয় সাফল্য, সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সামাজিক নিরাপত্তাসহ মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিকরণ এবং উৎসিক্ত মাত্রায় সকল শ্রেণী-পেশা মানুষের জন্য মানবাধিকার সুরক্ষা ইত্যাদি প্রায় প্রত্যেক দেশেই ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত করেছে। আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতিতে এগিয়ে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে মর্যাদাসীন হয়েছে। ৮ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় পত্রিকা ‘জনকণ্ঠে’ প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা কর্তৃক ‘বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না’ শিরোনামে লিখিত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৫ শতাংশ। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে দারিদ্র্য বিমোচনে বেশকিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ভাতা, আশ্রয়ণ প্রকল্প, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, কৃষক ও কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণের ফলে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের পাশাপাশি অর্থনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করার সংকল্প সুদৃঢ় হয়েছে। মাথাপিছু আয় ১২০০ মার্কিন ডলার অতিক্রম করায় ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৫৪৩ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয়ের বিপরীতে ২০১৯ সালে তা ১৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ২০.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসাব মতে ২০১০ সালে দারিদ্র্যসীমার নিচে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ছিল ৭৩.৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ১০.৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়শীল দেশে উন্নীত হওয়ার অবস্থানকে স্বীকৃত করেছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৬১ হাজার কোটি টাকা বাজেটের বিপরীতে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রায় দশগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ও ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকায়। ইতিমধ্যে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর দেশে প্রত্যাবর্তন এবং করোনার কারণে সৃষ্ট কর্মহীনতা বা বেকারত্ব মোকাবেলায় প্রায় ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার জ্যোতির্ময় রিজার্ভ নতুন প্রণোদনা সৃষ্টি করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এসব কর্মহীন বেকার যুবক-তরুণদের যথাযথ যোগ্যতা অনুসারে কর্মক্ষম জনসম্পদে রূপান্তরের বিষয়টি প্রায়োগিক বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন সময়ের দাবি। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি খাত বিশ্বে সমাদৃত। গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলেও, সম্প্রতি বাংলাদেশকে টপকে গেছে ভিয়েতনাম। গত অর্থবছরে বারো মাসে উক্ত খাতে বাংলাদেশের ২৭ বিলিয়ন ৯৫ কোটি মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভিয়েতনাম আয় করেছে ৩০ বিলিয়ন ৯১ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, ভিয়েতনামের রফতানি আয় ছিল বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বিজিএমইএর তথ্যমতে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বিশ্ববাজারে ৯৬৮ কোটি ৪৯ লক্ষ ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। উল্লিখিত সময়কালে ভিয়েতনাম বাংলাদেশের চেয়ে ৮২ কোটি ডলারের বেশি পোশাক রফতানি করেছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ভিয়েতনামের চেয়ে ১১২ কোটি ডলারের চেয়ে বেশি রফতানি করলেও মার্চ থেকে ভিয়েতনাম কিছুটা এগিয়ে আছে। এপ্রিল ও মে মাসে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিল যথাক্রমে ৩৭ কোটি ও ১২৩ কোটি। এর বিপরীতে ভিয়েতনামের আয় ছিল যথাক্রমে ১৬১ ও ১৮৬ কোটি ডলার। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতে, বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের ৬.৮ শতাংশের বিপরীতে ভিয়েতনামের ৬.২ শতাংশ এবং চীন ৩০.৮ শতাংশ নিয়ে বিশ্ব শীর্ষে। করোনায় বাংলাদেশের পোশাক রফতানি আয় কমেছে ১৮.১২ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ৩.০৯ শতাংশ। বিকেএমইএ সূত্রমতে, সম্প্রতি পর্যাপ্ত অর্ডার আসছে এবং প্রবৃদ্ধি উর্ধমুখী। সুখের বিষয় হচ্ছে পাঁচ মাসে ভিয়েতনাম এগিয়ে গেলেও বছর শেষে বাংলাদেশ আবারও শীর্ষ দ্বিতীয় অবস্থানে ফিরে যেতে পারবে। বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে উন্নত দেশসমূহের পরিকল্পিত উদ্যোগের সময়োপযোগী বাস্তবায়ন বাংলাদেশ থেকে জনসম্পদ-পোশাক ও অন্যান্য পণ্য রফতানি নতুন দিগন্ত উন্মোচনের অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং একই সঙ্গে অর্থনীতির চাকাকে সচল করার সকল প্রক্রিয়ায় আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে মনোনিবেশ দৃশ্যমান করা না গেলে হতাশা-যন্ত্রণার দীর্ঘশ্বাস প্রলম্বিত হবে। অন্যথায় এর বৈরী প্রভাব হিসেবে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই-রাহাজানি-হত্যা-কিশোর অপরাধ-নারী নির্যাতন অধিক হারে বৃদ্ধির সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই সমাজের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভয়ঙ্কর বিপর্যস্ততা নতুন করে মানসিক মহামারীর রূপ পরিগ্রহ করবে। হতাশ না হয়ে প্রবল মনোবল ধারণ করে জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সকল সরকারী- বেসরকারী এবং সুশীল সমাজের সমন্বিত প্রয়াস জাতিকে নতুন করে উজ্জীবিত করবে। বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করলে কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশ কখনও পিছিয়ে থাকতে পারে না। সিএনবিসি সূত্র মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ১৯৩২, ১৯৩৩, ১৯৩৪, ১৯৩৫, ১৯৩৮ এবং ১৯৩৯ সালে যথাক্রমে ছিল ২৩.৬ শতাংশ, ২৪.৯ শতাংশ, ২১.৭ শতাংশ, ২০.১ শতাংশ, ১৯.০ শতাংশ এবং ১৭.২ শতাংশ। অভিশপ্ত করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে এই বেকারত্বের হার দাঁড়াতে পারে ৩২.১ শতাংশে। উন্নত বিশ্বে প্রায় সকল দেশেই বেকারত্বের ক্রমবর্ধমান বিশ্বজুড়ে বিরূপ সঙ্কটের আভাস দিলেও প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না। দেশবাসীর মতো এই প্রত্যাশায় সমস্বরে নিবেদন করছি বিশ্বকবি রবীঠাকুরের সে অমরকাব্য ‘আত্মত্রাণ’ কবিতার কয়েকটি পংক্তিÑ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থণা,/বিপদে আমি না যেন করি ভয়।/দুঃখ তাপে ব্যথিত চিতে নাই-বা দিলে সান্ত¡না,/দুঃখে যেন করিতে পারি জয়॥/সহায় মোর না যদি জুটে নিজের বল না যেন টুটে,/সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি, লভিলে শুধু বঞ্চনা/নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।/আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থনা-/তরিতে পারি শকতি যেন রয়।/আমার ভার লাঘব করি নাই-বা দিলে সান্তনা,/বহিতে পারি এমনি যেন হয়।/ন¤্রশিরে সুখের দিনে তোমারি মুখ লইব চিনে -/দুঃখের রাতে নিখিল ধরা যেদিন করে বঞ্চনা/তোমারে যেন না করি সংশয় ॥’ জয় হোক বাংলার মেহনতী মানুষের। বঙ্গকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনাযুদ্ধে বাঙালীর বীরত্ব গাঁথায় উড্ডীন হোক নিদারুণ যুদ্ধজয়ের নিরন্তর বিজয় পতাকা। লেখক : শিক্ষাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
×