ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অফিস বাজার শপিংমল কোথাও তোয়াক্কা নেই নজরদারি নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বাস্থ্য বিভাগের আন্তঃজেলা রুটে পাশাপাশি সিটে যাত্রী বসিয়ে বাড়তি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন

হায় স্বাস্থ্যবিধি! অস্তিত্ব শুধু কাগজে কলমে

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ১১ আগস্ট ২০২০

হায় স্বাস্থ্যবিধি! অস্তিত্ব শুধু কাগজে কলমে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাজধানীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মতিঝিল। সরকারী অফিস চলছে পুরোদমে। অথচ মতিঝিল থেকে সচিবালয় পর্যন্ত বিভিন্ন অফিস থেকে রাস্তায় দেখা গেছে ৭০ ভাগের বেশি মানুষ স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্কা করছেন না। মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার নেই। একই চিত্র গণপরিবহনের ক্ষেত্রেও। নিয়ম অনুযায়ী চালকসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মাস্ক পরা ও স্যানিটাইজার দিয়ে সব কিছু পরিচ্ছন্ন রাখা বাধ্যতামূলক। বাস্তবে এর বালাই নেই। রাজধানীর অন্তত ৩০টি এলাকা ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে বাজার ও আড়ত, বাস টার্মিনাল, মার্কেট-ফুটপাথের চিত্র দেখলে চোখ একেবারেই কপালে ওঠার মতো অবস্থা। এ তো গেল ঢাকার কথা। সারাদেশের চিত্র আরও ভয়াবহ। শহরাঞ্চলে কিছুটা মাস্কের ব্যবহার থাকলেও গ্রাম ও উপজেলা শহরগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানেন না। করোনাকে তোয়াক্কা করছেন না কেউই। বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। করোনা বলে ছোঁয়াচে কোন প্রাণঘাতী রোগ আছে- তা মাঠের চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই। জনসচেতনতার অভাবে তরুণরা আরও বেপরোয়া। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েই গেছে। প্রশ্ন হলো কোভিড টেস্ট কমে গেছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল আছেই। সরকারের পক্ষ থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা বহাল আছে। অফিস, দোকান, মার্কেটসহ শপিংমল খোলা ও বন্ধের নির্দেশনাও কার্যকর। গণপরিবহন চালুর নির্দেশনা আছে। সকলের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি করেছে সরকার। কিন্তু কেউ কিছু মানছেন না। অর্থাৎ কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই! অথচ সরকারের সব পক্ষ থেকেই বার বার বলা হয়েছে, মাস্ক না পরলে জেল-জরিমানার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে দেশজুড়ে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের সাম্প্রতিক একের পর এক বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি মানুষের এখন আর কোন আস্থা নেই। তাছাড়া নির্দেশনা দিলেও এর বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। ভ্রাম্যমাণ আদালত যেমন নেই, তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন রকম নজরদারি চোখে পড়ে না। পাড়া মহল্লায় প্রচার মাইকে সচেতনতামূলক কর্মসূচীও হাওয়া। কোভিড-১৯ একটি মারাত্মক ব্যাধি, এতে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে সরকারের পক্ষ থেকে এমন প্রচারও কমে গেছে। তাই সবাই নিজে থেকেই স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছেন। তোয়াক্কা করছেন না করোনার ভয়াবহতা। ফলে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। বাড়ছে আক্রান্তের ঝুঁকি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ভারতসহ বিশে^র অন্যান্য দেশে দেখা গেছে ঢিলেঢালা স্বাস্থ্যবিধির কারণে আবারও ব্যাপক আকারে করোনার ধাক্কা সামাল দিতে হয়েছে। এতে অকালে ঝরেছে বহু প্রাণ। আক্রান্ত হয়েছে বহু মানুষ। তাই করোনা প্রতিরোধে সতর্কতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলছেন, করোনাভাইরাসকে নিয়েই পৃথিবীকে বাঁচতে শিখতে হবে, এবং মহামারীর অর্থ এই নয় যে মানুষের জীবনযাত্রা স্তব্ধ হয়ে যেতে হবে। টেড্রোস গেব্রেইয়েসুস বলেন, অনেক তরুণ করোনাভাইরাসের বিষয়ে অসতর্ক হয়ে পড়েছে এবং সম্প্রতি সংক্রমণে যে উর্ধগতি দেখা যাচ্ছে তার জন্য এটা অংশত দায়ী। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, যাদের বয়স কম তারাও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে এবং মারা যেতে পারেন। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথম চীনে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চলতি বছরের আট মার্চ দেশে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাসের রোগী। এরপর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটির পাশপাাশি গণপরিবহন বন্ধ করে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। অর্থনীতির গতি সচল রাখা ও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সচল রাখার কথা বলে ৩১ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি তুলে নেয়ার পাশাপাশি চালু করা হয় গণপরিবহন। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে রোজার ঈদে নিজস্ব পরিবহনে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেয় সরকার। ঈদ উল আজহাতেও সবার মতামত উপেক্ষা করে নামমাত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে সারাদেশে চলাচল অবারিত করে দেয়া হয়। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অন্য বেশ কিছু বিধিনিষেধ বলবত আছে। কিন্তু কেউ মানছেন না। যেমন গণপরিবহন। ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়িয়ে এক আসনে একজন যাত্রীসহ বেশ কিছু শর্ত দিয়ে পরিবহন পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। বাস্তবতা হলো ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই। নেত্রকোনার শাহজালাল এক্সপ্রেসসহ কুমিল্লা থেকে ঢাকা অভিমুখী বেশ কিছু বাসে পাশাপাশি সিটে দুইজন যাত্রী বসিয়ে বর্ধিত ৬০ ভাগ ভাড়া নিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। জানতে চাইলে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা বাস পরিচালনা করছেন। যদিও বিআরটিএ বলছে, করোনা সংক্রমণ রোধে আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালানোর নির্দেশনা বলবত আছে। কোন যানবাহনই জীবাণুমুক্ত করা হয় না। সোমবার দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে আরও ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯০৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেন। এ দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ২ হাজার ৯০৭ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ জন হলো। আর গত একদিনে মারা যাওয়া ৩৯ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৩৮ জনে দাঁড়াল। আইইডিসিআরের ‘অনুমিত’ হিসেবে গত একদিনে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ হাজার ৬৭ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৩৭ জন। সোমবার বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ২ কোটির কাছাকাছি। আক্রান্তের সংখ্যায় ইতালিকে ছাড়িয়ে বিশ্বে এখন পাকিস্তানের পরই পঞ্চদশ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৭ লাখ ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ২৯তম। করোনার সময়ে ঢিলেঢালা স্বাস্থ্যবিধি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গণপরিবহন, বাস টার্মিনাল, ফেরিঘাটসহ শপিংমল এবং অন্যান্য স্থানে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি অনেকের উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। অনেকে সংক্রমণের লক্ষণ লুকিয়ে চলাফেরা করছেন। আপনারা দেখছেন, নমুনা পরীক্ষার তুলনায় আক্রান্তের হার শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগের মধ্যে অবস্থান করছে। কিছুদিন ধরে আবার বিশ্বের কোন কোন দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় তরঙ্গ আঘাত হানছে। এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের উদাসীনতা ভয়ানক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তিনি বলেন, নিজের, পরিবারের এবং প্রতিবেশীর সুরক্ষায় আসুন সচেতন হই। আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরিধান করি। একটাই জীবন আমাদের, তাই এ জীবন নিয়ে হেলাফেলা না করি। সর্বোচ্চ সতর্ক থাকি। টনক নড়ে-নড়ে না ॥ এদিকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বাসার বাইরে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানোর সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় জেনারেল আলোচনা হয়েছে যে, মানুষকে অন্তত সচেতন থাকতে হবে। এর মধ্যে দেখা গেছে যে অনেক মানুষের মধ্যে সচেতনতাটা একটু কমে গেছে, সেটা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সচেতন থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে আনোয়ারুল বলেন, এগুলো ক্যাম্পেনে নিয়ে আসা এবং যথাসম্ভব যদি মোবাইল কোর্ট করা যায়। এসব বিষয় নিয়ে রবিবার সচিব কমিটিতে আলাপ-আলোচনা করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মাঠ প্রশাসনকেও বলে দিয়েছি যে, এনফোর্সমেন্টে যেতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পক্ষে যুক্তি দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, একেবারে ম্যাসিভ কোন ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট করে যদি পানিশমেন্ট দেয়া হয়, এই জিনিসটা প্রচার করার জন্য যে আজকে মাস্ক না পরার জন্য বা সেফটি মেজার্স না নেয়ার জন্য এতগুলো লোককে বাসে বা বাজারে বা লঞ্চে পানিশমেন্ট দেয়া হয়েছে। এগুলো যদি প্রচারে যায়, তাহলে মানুষও উদ্বুদ্ধ হবে। মাস্ক পকেটে থাকে, কিন্তু মানুষ পরে না। সবাই যাতে মাস্ক ব্যবহার করেন, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আরও প্রচার চালানো হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তনি বলেন, বিশেষ করে তথ্য মন্ত্রণালয়কে আরও ম্যাসিভ প্রচারের জন্য বলা হয়েছে। ফিজিক্যালি মাঠে গিয়ে মাইক দিয়ে, বিল বোর্ড দিয়ে যাতে মানুষ আরেকটু সতর্ক হয়। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘ঈদে অনেক লোক বিভিন্ন পরিবহনে বাড়ি গেছেন। আমরা দেখেছি যে, গাদাগাদি করে ফেরিতে পার হয়েছেন। আমরা একটু আশঙ্কা করছি, কিছুটা সংক্রমণ বাড়তে পারে। এদিকে মহামারীর মধ্যে ৭৫ শতাংশ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী বাড়ি বসে কাজ করার সুযোগ পেলেও ওই নিয়ম তুলে দিয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী গত রবিবার থেকে সরকারী সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আগের মতো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস শুরু হয়েছে। জনগণের মধ্যে করোনার ভয় কেটে গেছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, করোনার ভয় কেটে গিয়ে মানুষ এখন কেয়ারলেস হয়ে গেছে। তারা আগের মতো আর ভীত নন। গত ৩০ মে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সর্বসাধারণের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জীবাণুনাশক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আর মাস্ক না পরে বাইরে বের হওয়া বেআইনী বলেও উল্লেখ করা হয়। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ আইনের আওতায় মাস্ক না পরে বের হলে অর্থদ-, কারাদ- কিংবা উভয় দ-ই কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এর কার্যকারিতা খুব একটা দেখা যায়নি। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডাঃ নজরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়টি কী অনেকে তা বুঝতেও পারেননি। আবার অনেকে বুঝলেও মানতে নারাজ। পরিস্থিতি এখন এমন, স্বাস্থ্যবিধি হচ্ছে কাজীর গরু, যা কিতাবে আছে গোয়ালে নেই। নমুনা পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা মহামারীর শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে এসেছে। সংস্থার পক্ষ থেকে সন্দেহভাজন প্রত্যেক মানুষকে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু আমরা নানাভাবে নমুনা পরীক্ষা সঙ্কুচিত করেছি। ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে মানুষের আগ্রহ কমেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেনিন চৌধুরী বলেন, করোনা প্রতিরোধে সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধিসহ বেশিরভাগ কার্যক্রম এখন কাগজে কলমে। মাঠ পর্যায়ে এর মিল পাওয়া যায় না। দেখে মনে হবে দেশে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। কোন রোগী নেই। অথচ প্রতিদিন ৩০জন মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো পরীক্ষার সংখ্যা কমছে। সেই তুলনায় রোগীর সংখ্যা কিন্তু নেহায়েত কম বলা যাবে না। তেমনি মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। তাহলে প্রশ্ন হলো দেশে করোনা কি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আসেনি। অথচ সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া ভাল লক্ষণ নয়। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা প্রতিরোধে সকল কার্যক্রম মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই মানুষ বিশ^াস হারিয়েছে। ভয় পাচ্ছেন না। করোনাকে তুচ্ছ মনে করে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা সবার মধ্যে। তাছাড়া সরকারী স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষকে বাধ্য করানো জরুরী। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে দেশে ধীরে ধীরে করোনার সংক্রমণ কমছে। তবে বিশেষজ্ঞরা এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তারা বলছেন, যে হারে প্রতিদিন করোনার পরীক্ষা হচ্ছে তাতে করে সংক্রমণ বাড়ছে নাকি কমছে এটা বোঝার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বরং এসব বার্তা নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সাধারণ মানুষকে ভুল ব্যাখ্যা দেবে, তাতে করে পলিসি তৈরি এবং সাধারণ মানুষ অসচেতন হবে, এতে করে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে ধীরে ধীরে আক্রান্তের হার কমতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকার দ্রুত কিছু উদ্যোগ নিতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন কিছু কার্যকরী চিকিৎসাসেবা কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে, দেশে ধীরে ধীরে আক্রান্তের হার কমতে শুরু করেছে। একই কথা বলেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। গত ২৭ জুলাই অধিদফতরের নতুন মহাপরিচালকের সঙ্গে উপস্থিত থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ কমতির দিকে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা এখন পিকে নাই, আইইডিসিআর (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) এর তথ্যও বলছে আমরা পিক টাইমে নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিদিনের হিসাব অনুযায়ী রোগী কমছে। আগে যেখানে গড়ে তিন হাজারের ওপরে রোগী ছিল, সেটা এখন তিন হাজারের নিচে নেমেছে। তবে এই প্রতিবেদন দেশের করোনার যে সংক্রমণের চিত্র তাতে সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ বেনজির আহমেদ। তিনি বলেন, এটা যদি সত্যিকারের প্রতিফল হয় তাহলে কমছে, আর যদি সেটা না হয় তাহলে বলা যাবে না রোগী কমছে। তাই দেশের প্রকৃত অবস্থা কী সেটা জানা জরুরী।
×