ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কম্পিউটার মাউসের সহ-উদ্ভাবক বিল ইংলিশ আর নেই

প্রকাশিত: ১২:০৭, ৪ আগস্ট ২০২০

কম্পিউটার মাউসের সহ-উদ্ভাবক বিল ইংলিশ আর নেই

অনলাইন ডেস্ক ॥ জুলাইয়ের ২৬ তারিখ ক্যালিফোর্নিয়ায় মারা গেছেন কম্পিউটার মাউসের সহ-উদ্ভাবক উইলিয়াম ইংলিশ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি অঙ্গরাজ্যে ১৯২৯ সালে জন্ম নিয়েছিলেন এই প্রকৌশলী ও উদ্ভাবক। মার্কিন নেভিতে যোগ দেওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈদ্যুতিক প্রকৌশল নিয়ে পড়ালেখা করেন তিনি। প্রথম মাউস ১৯৬৩ সালে তৈরি করেন তিনি। মাউসের ধারণা অবশ্য তার নয়, সহকর্মী ডাগ এঙ্গেলবার্টের। দু’জনেই ওই সময়টিতে প্রাথমিক কম্পিউটিং নিয়ে কাজ করছিলেন। ইংলিশের স্ত্রী গণমাধ্যমকে তার জীবনাবসানের ব্যাপারে নিশ্চিত করেন বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। ইংলিশ শুধু মাউসের সহ-উদ্ভাবক নন, প্রথম মাউস ব্যবহারকারীও তিনি। স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এঙ্গেলবার্টের গবেষণা প্রকল্পের অধীনে প্রথম মাউসটি তৈরি করেন তিনি। ধারণা এঙ্গেলবার্টের থাকলেও পুরো কারিগরি কাজটিই নিজে করেছিলেন ইংলিশ। মাউসের প্রথম সংস্করণটি ছিল শুধু একটি বাটনসম্পন্ন বাদামি কাঠের বাক্স। নিচে দুটি চাকা ছিল যা ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে চলতে পারতো এবং খাড়া ও সমান্তরাল নড়াচড়া রেকর্ড করে রাখতো। “আমরা লেখা সম্পাদনা নিয়ে কাজ করছিলাম – মূল লক্ষ্য ছিল এমন ডিভাইস তৈরি করা যা দিয়ে বর্ণ এবং শব্দ নির্বাচন সম্ভব হবে।” – ১৯৯৯ সালে কম্পিউটার হিস্টোরি মিউজিয়ামকে বলেছিলেন ইংলিশ। এক পরীক্ষায় ব্যবহারকারীদেরকে লাইট পেন বা জয়স্টিকের মতো অন্যান্য ডিভাইসের পাশাপাশি মাউস ব্যবহার করতে বলেছিলেন এই জুটি। ফলাফলে জানতে পারেন, মাউসকেই মনে ধরেছে সবার। পরে এ নিয়ে এক গবেষণা প্রকাশ করেন তারা যা দীর্ঘদিন সমাদর পায়নি। এই জুটি প্রথমবার জনসম্মুখে মাউস দেখিয়েছিলেন ১৯৬৮ সালে। “এটি যখন উপর বা নিচে বা পাশে যায়, তখন ট্র্যাকিং স্পট-ও নড়ে।” – দর্শকদের সামনে ব্যাখ্যা করেছিলেন ডগ এঙ্গেলবার্ট। আর সম্মেলনের কারিগরি দিক সামলেছিলেন বিল ইংলিশ। কিন্তু কে, কেন, কীভাবে ডিভাইসটির নাম মাউস রেখেছিলেন তা মনে করতে পারেননি ইংলিশ বা এঙ্গেলবার্ট কেউই। “প্রথম প্রতিবেদনে আমাদের এটিকে কিছু বলা দরকার ছিল, ‘বাটনসহ বাদামি বাক্স’ বলতে পারছিলাম না।” – বলেছেন ইংলিশ। তিনি আরও বলেন, “নাম ছোট হওয়া দরকার ছিল। আর এটি খুবই ছোট একটি নাম ছিল।” প্রায় সব মডেম কম্পিউটারে ব্যবহৃত গ্রাফিকাল ডেস্কটপ ইউজার ইন্টারফেইস তৈরিতেও অবদান রেখেছিলেন ইংলিশ। স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিটিউট ১৯৭১ সালে ছেড়ে জেরক্সের পার্ক গবেষণা কেন্দ্রে যোগ দেন তিনি। ওখানেই প্রথমবারের মতো মাউসে চাকার পরিবর্তে বল জুড়ে দেন ইংলিশ। এ নকশাতেই বহু বছর চলেছে মাউস। শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার কারণে ইংলিশ মারা গেছেন বলেই জানিয়েছেন তার স্ত্রী রবার্টা। আর মাউসের আরেক উদ্ভাবক এঙ্গেলবার্ট মারা গেছেন ২০১৩ সালে, ৮৮ বছর বয়সে। দুই জনের একজনও মাউস থেকে তেমন কোনো অর্থ আয় করতে পারেননি। মাউসের পেটেন্ট তাদের নামে থাকলেও, এ থেকে মুনাফা লুটেছিলেন তাদের নিয়োগদাতারা। ১৯৮৭ সালে ফুরিয়ে গিয়েছিল তাদের মেধাস্বত্ব অধিকার, এর পরে এসে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত প্রযুক্তি ডিভাইস হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিল এটি। এঙ্গেলবার্টের মৃত্যুর পর ইংলিশ বলেছিলেন, “মাউস থেকে পাওয়া ডাগের একমাত্র পয়সা ছিল জেরক্সের দেওয়া ৫০ হাজার ডলার, যখন জেরক্স তা ব্যবহার শুরু করে।” পরবর্তীতে নিজেদের ব্যক্তিগত কম্পিউটার ‘লিসা’-এর জন্য একই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছিল অ্যাপল। “অ্যাপল আর পরে কোনো পয়সা দেয়নি, এবং ওখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে ডিভাইসটি।” – যোগ করেছিলেন ইংলিশ।
×