ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এবার লবণ নিয়ে কারসাজি হলে কঠোর ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ২৯ জুলাই ২০২০

এবার লবণ নিয়ে কারসাজি হলে কঠোর ব্যবস্থা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানির কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও মজুদে এবার লবণ নিয়ে কোন ধরনের কারসাজি করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। লবণের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে তিন স্তরবিশিষ্ট মনিটরিং টিম গঠন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। দেশে এ মুহূর্তে সাড়ে ১১ লাখ টন লবণ মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে-শুধু কোরবানির পশু সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কম বেশি ১ লাখ টন লবণের প্রয়োজন হয়। চাহিদার তুলনায় বেশি লবণ মজুদ রয়েছে। তাই কোরবানির সময় লবণের দাম বাড়ানোর কোন কারসাজির সুযোগ নেয়া হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিসিক জানিয়েছে, এবারের ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন লবণ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। এ লক্ষ্যে দেশের ৮টি লবণ জোনে ১৮৬টি নিবন্ধিত লবণ মিলে পুরোদমে লবণ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৪টি, নারায়ণগঞ্জে ৩৪টি, চাঁদপুরে ২টি, চট্টগ্রামে ৫৭টি, পটিয়ায় ৩৪টি, কক্সবাজারে ৩৫টি, খুলনায় ৮টি এবং ঝালকাঠিতে ১২টি মিল চালু রেখে লবণের উৎপাদন করে যাচ্ছে। চালু লবণ মিলগুলোর মাসিক গড় উৎপাদন ক্ষমতা ৩ লাখ ৪০ হাজার টন হলেও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী মিলসমূহ লবণ উৎপাদন করে থাকে। এছাড়া সার্বিক লবণ উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য বিসিক আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। লবণ জোনগুলোতে অবস্থিত বিসিক কার্যালয়, আঞ্চলিক কার্যালয় এবং প্রধান কার্যালয়ের পৃথক কমিটি গঠন করে তিন স্তরবিশিষ্ট মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এসব কমিটি মাঠ পর্যায়ে লবণের মজুদ, চলাচল ও মূল্য সংক্রান্ত তথ্যাদি নিয়মিত সংগ্রহ করে লবণের সরবরাহ চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিসিক প্রধান কার্যালয়ে ইতোমধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। লবণ সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে তথ্যের জন্য ০২-৯৫৭৩৫০৫ (ল্যান্ড) এবং ০১৯১১-৮৩৮২০০ (সেল ফোন) নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিসিকের জেলা কার্যালয়গুলোর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলার মার্কেটিং কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলাভিত্তিক ডিলার ও পাইকারি লবণ বিক্রেতাদের মোবাইল নম্বরসহ তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ তালিকা ঈদের আগেই এতিমখানা, মাদ্রাসা, মসজিদ, স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার ও ইউনিয়ন পরিষদসহ কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরবরাহ করা হবে। সুতরাং লবণ নিয়ে কোন কারসাজির সুযোগ নেই বলে বিসিক মনে করছে। জানা গেছে, গত বছর কোরবানি ঈদে পশুর সংখ্যার বিপরীতে লবণের চাহিদা ছিল ৮১ হাজার ৮২০ টন। এবার এই চাহিদা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে কাঁচা চামড়া রফতানি করা হলে সেক্ষেত্রে ওই চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে আরও প্রায় ১ লাখ টন লবণের অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হবে। কিন্তু মজুদকৃত লবণ দিয়ে এবারের ঈদ-উল- আজহার চাহিদা মিটিয়ে আরও ৭ থেকে ৮ মাসের লবণের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে। অন্যদিকে আর মাত্র ৪ মাস পর অর্থাৎ নবেম্বর, ২০২০ হতে লবণ উৎপাদনের নতুন মৌসুম শুরু হবে। ফলে দেশে লবণের কোন ধরনের ঘাটতির আশঙ্কা নেই বলেও বিসিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। যদিও লবণ মিল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বরাবরই বিসিকের এই তথ্যকে বিভ্রান্তি বলে মনে করা হয়। উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে বিস্তর ফাঁরাক রয়েছে। আর এর সুযোগ নিচ্ছে সোডিয়াম সালফেট (শিল্প লবণ) আমদানিকারকরা। মানবদেহের জন্য বিষ হিসেবে খ্যাত এই লবণ বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে দেয়া চিঠিতেও বিসিকের তথ্যকে মনগড়া বলা হয়েছে।
×