ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতি হলে প্রয়োজনে চাকরিচ্যুতি

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২৫ জুলাই ২০২০

উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতি হলে প্রয়োজনে চাকরিচ্যুতি

মশিউর রহমান খান ॥ দেশের উন্নয়নের জন্য গৃহীত যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্মাণ কাজের গুণগত মান রক্ষায় সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এখন থেকে দেশে আর কোন নিম্নমানের কাজ করতে দেয়া হবে না। কেউ যদি নিম্নমানের কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকল্প কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে প্রকল্প পরিচালক, প্রকৌশলীরা কোন বাধা বা হুমকির সম্মুখীন হলে তাদের নিরাপত্তা প্রদানে মন্ত্রণালয় তা শক্ত হাতে মোকাবেলা করবে এবং তাদের দায়িত্ব নেবে। দায়িত্বরতদের ভাল কাজ করলে পুরস্কার ও খারাপ কাজ করলে তিরস্কারসহ নানা রকম শাস্তি প্রদান করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (ডিপিএইচই) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ঢাকাসহ সব ওয়াসা কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন, এনআইএলজি, পৌর কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পসমূহের কাজে এ নির্দেশ প্রতিপালিত হবে। মন্ত্রণালয়ের অধীন সব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার বিভিন্ন স্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সব জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রেও এ সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করা হবে। মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি বৃদ্ধি করতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা প্রধানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সরকারের গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়মিত মনিটরিং করা ও সময়মতো সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলা করলে বা কোন প্রকার অনিয়ম বা দুর্নীতির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে সাময়িক বরখাস্ত থেকে শুরু করে পদাবনতি, বিভাগীয় মামলা দায়ের, বদলি, ওএসডি করা, শোকজ করা, শোকজের উপযুক্ত জবাব না পেলে ও তদন্ত সাপেক্ষে যে কোন প্রকার দুর্নীতির প্রমাণ পেলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে স্থায়ী বরখাস্ত করা এমনকি তাদের জেল জরিমানাসহ ফৌজদারি মামলা দায়ের করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের অধীন সব সংস্থাতেই এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে ও দায়িত্ব পালনে অবহেলাকারীর ক্ষেত্রে এমন কোন অভিযোগ উঠলে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ব্রিজ কালভার্ট, রাস্তা, বিভিন্ন ভবন বা স্থাপনা নির্মাণসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নিম্নমানের হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সরকারের সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড মানসম্মত ও টেকসই করতে প্রকল্পের কাজে বিশেষ নজর দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নে টেকসই স্থাপনা নির্মাণ করতে সরকার গৃহীত সব উন্নয়ন প্রকল্প মনিটরিংয়ের মাধ্যমে উদ্দেশ্য যথাযথভাবে পূরণ করতে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। এরই অংশ হিসেবে কোন উন্নয়ন প্রকল্পই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করা হলে সংশ্লিষ্টদের কৈফিয়ত প্রদান করতে হবে ও প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কাজে অধিক মনোযোগ প্রদানের জন্য কঠোর নির্দেশ দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ প্রদানের পর মন্ত্রণালয় বেশ নড়েচেড়ে বসেছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর পরিশ্রমকে বাস্তবে রূপ দিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন সব প্রতিষ্ঠানকে দেশের উন্নয়নে একযোগে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সবাইকে নির্দেশ দেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে স্থানীয় সরকারের নানা স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী অবশ্যই গুণগত এবং টেকসই হতে হবে। এখন থেকে দেশে আর কোন নিম্নমানের কাজ করতে দেয়া হবে না। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সমগ্র দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিবিড়ভাবে জড়িত। তাই দেশের উন্নয়ন অনেকাংশেই স্থানীয় সরকার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৫৬টি বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের জুন পর্যন্ত অগ্রগতি ৮১.৪৯ ভাগ। যা গত বছর ছিল ৯৫.৪২ ভাগ। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত প্রকল্প কাজের মৌসুম হলেও করোনা মহামারির কারণে কাজ বন্ধ থাকায় এবছর কাজের অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সারাদেশে চলমান সব প্রকল্পের কাজের গতি বাড়াতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এসব সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, দেশের রাস্তাঘাট, সুপেয় পানি, স্যানিটেশনসহ ছোট বা বড় যে কোন প্রকল্প নেয়া হোক তা মান সম্মত এবং টেকসই হতে হবে। জনগণকে উন্নয়নের সুফল দিতে হলে যেকোন কাজ টেকসই এবং কোয়ালিটি সম্পন্ন করতে হবে। দেশের উন্নয়নে আর কোন নিম্নমানের কাজ করতে দেয়া হবে না। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিম্নমানের কাজে জড়িত থাকবে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। মন্দ কাজের জন্য যেমন তিরস্কার বা বরখাস্তের ব্যবস্থা থাকবে তেমনি ভাল কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের পুরস্কৃতও করা হবে। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেকোন ধরনের ঝুঁকি এবং সমস্যার সম্মুখীন হলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কর্তৃক তা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে ও সঙ্গে সঙ্গে এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া প্রকল্প কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে প্রকল্প পরিচালক, প্রকৌশলীরা যদি কোন বাধা বা হুমকির সম্মুখীন হন তাহলে তাদের নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাই মন্ত্রণালয় তাদের দায়িত্ব নেবে। একইসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেশের উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পে নিম্নমানের কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি নয় বরখাস্ত বা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। সব প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মানসম্মতভাবে শেষ করতে হবে এজন্য প্রকল্প পরিচালক এবং এর সঙ্গে যুক্ত সকলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রামীণ সড়ক, ইউনিয়ন পরিষদ সড়ক এবং উপজেলা সড়ক নির্মাণে স্ট্রাকচারাল ডিজাইনসহ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ইত্যাদি নির্দিষ্ট করে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজাইন তৈরি করে সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া ছোট-বড় যেকোন প্রকল্প নেয়ার আগে নেভিগেশন, পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। গ্রামীণ সামাজিক অবস্থার উন্নতি, গ্রামীণ অর্থনীতির গতির সঞ্চার এবং মানুষকে উন্নত জীবন দিতে উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্বসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণের কাজে মানুষকে সম্পৃক্ত করলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিাভাগ সূত্রে জানা গেছে, নানা রকম অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজন প্রকল্প পরিচালককে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সঠিকভাবে পরিপালন না করার দায়ে ১২ জনের বেশি উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অনিয়মের অনুসন্ধান চলছে ও তাদের নিজ কর্মস্থল থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া এলজিইডির কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বে অবহেলা পাওয়ায় তাদের শোকজ করা হয়েছে। জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের সব নির্দেশ সঠিকভাবে প্রতিপালন হচ্ছে কি না তাও অতি গুরুত্বের সঙ্গে মনিটরিং করবে ও অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইমলাম এমপি জনকণ্ঠকে বলেন, এখন থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে নিম্নমানের কোন কাজ করতে দেয়া হবে না। সব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অবশ্যই মানসম্পন্ন, টেকসই ও উৎপাদনশীল হতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। এ নিয়ে কাউকেই কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। সংশ্লিষ্টদের কাজের গুণগত মান নিশ্চিতকল্পে প্রকল্প কাজের যথার্থতা নির্ণয় করতে সরেজমিনে গিয়ে পরিকল্পনা ও নক্সা অনযায়ী হচ্ছে কি না তা কঠোরভাবে পরীক্ষা করতে হবে। গ্রামীণ সড়ক, ইউনিয়ন পরিষদ সড়ক এবং উপজেলা সড়ক নির্মাণে স্ট্রাকচারাল ডিজাইনসহ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ইত্যাদি নির্দিষ্ট করে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজাইন তৈরি করে সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, এছাড়া প্রকল্প নিয়মিত মনিটরিং করা ও সময়মতো সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। ভাল কাজ করলে পুরস্কার ও খারাপ কাজ করলে শাস্তি দেয়া হবে। কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি পেলেই সাময়িক বরখাস্ত করা, বিভাগীয় মামলা ও ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে। সর্বোচ্চ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রেও এ নির্দেশ প্রযোজ্য হবে।
×