ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিয়েতনাম কেন বিনিয়োগকারীদের চোখের মণি?

প্রকাশিত: ১২:০৮, ২২ জুলাই ২০২০

ভিয়েতনাম কেন বিনিয়োগকারীদের চোখের মণি?

অনলাইন ডেস্ক ॥ এ বছর ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে চীনে যখন মাত্রই হুমকি হয়ে উঠতে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, তখনই সীমান্ত বন্ধ করে দেয় ভিয়েতনাম। ফলে চীন থেকে ট্রাকে করে বিভিন্ন কাঁচামাল ও উপকরণ পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। এটা অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার হার্ডওয়্যার জায়ান্ট স্যামসাংয়ের জন্য। কারণ, প্রতিষ্ঠানটি তাদের বেশিরভাগ স্মার্টফোনই তৈরি করে ভিয়েতনামে। সীমান্ত বন্ধ হওয়ার সময় স্যামসাং দু’টি নতুন মডেলের স্মার্টফোন ছেড়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। তাই উৎপাদন বন্ধ করতে চায়নি তারা। এ কারণে সরাসরি চীন থেকে আকাশপথে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ আমদানি শুরু করে দক্ষিণ কোরীয় প্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনা থেকে দু’টি বিষয় পরিষ্কার। অনুপ্রবেশ বন্ধ ও বিচ্ছিন্নকরণের (আইসোলেশন) সুষ্ঠু পরিকল্পনা মাধ্যমে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সফল ছিল ভিয়েতনাম। এ ধরনের পরিকল্পনা সম্ভবত একদলীয় রাষ্ট্রেই কার্যকর সম্ভব। এ সিদ্ধান্তে তাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকই, তবে তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বেশিরভাগ দেশের তুলনায় দ্রুততম সময়ে। ভিয়েতনাম হচ্ছে অল্প কিছু দেশের একটি, চলতি বছর যাদের জিডিপি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ গল্প থেকে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) জন্য অনুকূল ভেন্যু হিসেবে ভিয়েতনামের অবস্থানও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। পোশাকনির্মাতাদের কাছে এটি বরাবরই জনপ্রিয় স্থান। সম্প্রতি প্রযুক্তিপণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে ভিয়েতনাম।এশিয়ার এ দেশটি শুধু বহুজাতিক কোম্পানিগুলোরই চোখের মণি নয়, এটি প্রিয় হয়ে উঠছে অগ্রগামী বাজারগুলোতে বিনিয়োগকারীদের কাছেও। এ ধরনের বিনিয়োগকারীরা সাধারণত খুব কম অর্থনীতির ওপরই আস্থা রাখেন। তবে, ভিয়েতনাম ইদানিং তাদের কাছে বেশ বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। এছাড়া, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বৈশ্বিক বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় অন্যতম বিজয়ী দেশও ভিয়েতনাম। এখন তারা ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক সংকট থেকেও ফায়দা লুটছে। খুব বেশি সময় হয়নি, ভিয়েতনাম ছিল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। ১৯৮৬ সালে তারা ‘দোই মোই’ (সংস্কার) প্রক্রিয়া শুরু করে। এর আওতায় ব্যক্তিগত মালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বৃহত্তর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। বিদেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ভিয়েতনামের অর্থনীতি। দেশটিতে শ্রমিকদের নিম্নমজুরি বিশেষ সুবিধা হলেও, এটি বিরল কিছু ছিল না। এ কারণে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ট্যাক্সেও বিশাল ছাড় দেয় ভিয়েতনাম সরকার। হ্যানয়ের ভিয়েত ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের কর্মকর্তা লুয়ং হোয়াং বলেন, সাম্প্রতিক সময় স্থিতিশীল অর্থনীতি ভিয়েতনামের নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। ডলারের তুলনায় ভিয়েতনামিজ ডং মোটামুটি স্থির রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি রয়েছে এক অংকের ঘরেই। ২০০৭ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয় ভিয়েতনাম। এরপর দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে চুক্তি করেছে তারা, এ দু’টি দেশ ভিয়েতনামে অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী। গত মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও চুক্তি হয়েছে ভিয়েতনামের। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ধারাও অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছর বড় বিনিয়োগ এসেছে চীন, হংকং ও সিঙ্গাপুর থেকে। এছাড়া, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ও প্রযুক্তি লড়াইয়ে ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোরও অন্যতম গন্তব্যস্থল হয়ে উঠেছে ভিয়েতনাম। আশ্চর্যজনকভাবে ভিয়েতনামের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সঙ্গে চীনের অতীত পরিকল্পনার যথেষ্ট মিল দেখা যায়। সেখানে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ আসছে, রপ্তানিপ্রধান প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, টেক্সটাইল থেকে শুরু করে প্রযুক্তির বাজার বাড়ছে। তবে চীনের মতো ভিয়েতনামে দুর্নীতি, আবাসন চুক্তি, বাজে ঋণও বাড়তে শুরু করেছে। এরপরও, দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির সঙ্গে সেখানে এগিয়ে চলেছে শহরায়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বাড়ছে মধ্যবিত্তের সংখ্যা। ভিয়েতনামের এসব বিষয় ইতিবাচক হলেও একটা ঝামেলা আছে তাদের। দেশটি অনেক প্রতিষ্ঠানের ওপরই বিদেশি-মালিকানার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। অর্থাৎ, কোনও বিদেশি বিনিয়োগকারী নতুন শেয়ার কেনার সময় যদি নির্ধারিত সীমা শেষ হয়ে যায়, তবে বাড়তি শেয়ার কিনতে হবে অন্য কোনও বিদেশির কাছ থেকেই। এই প্রক্রিয়া সম্পাদনে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে। এর কারণেই দেশটিকে অগ্রগামী বাজার বললেও উদীয়মান বাজার হিসেবে ধরেন না বিশেষজ্ঞরা। সূত্র- দ্য ইকোনমিস্ট
×