ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে ৮ অস্থায়ী পশুর হাটের চূড়ান্ত ইজারা সম্পন্ন

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ১৩ জুলাই ২০২০

রাজধানীতে ৮ অস্থায়ী পশুর হাটের চূড়ান্ত ইজারা সম্পন্ন

মশিউর রহমান খান ॥ আসন্ন ঈদ-উল আযহায় রাজধানীতে এ পর্যন্ত মোট ৮টি অস্থায়ী পশুর হাটের চূড়ান্ত ইজারা সম্পন্ন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ৩টি ও ঢাকা দক্ষিণে ৫টি পশুর হাট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর বাইরে দুই সিটিতে উত্তরে গাবতলী ও দক্ষিণে সারুলিয়ায় স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে যা নিয়মানুযায়ী বসবে বলে জানা গেছে। অপরদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, করোনার প্রভাব বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঢাকার দুই সিটির মেয়রকে রাজধানীর জনবহুল স্থান বা রাস্তার ওপরে কোন পশুর হাট না বসানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন। দুই সিটি কর্তৃপক্ষও বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রীকে। এদিকে করোনার এ ভয়াবহ বিস্তার রোধে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে ৪ স্থানে কোরবানির পশুর হাট না বসাতে করোনা রোধে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ সত্ত্বেও মানছেন না সংশ্লিষ্ট কেউ। অনেকটা কাগুজেই সীমাবদ্ধ থেকে গেল জাতীয় পরামর্শক কমিটির এসব সুপারিশ। ৪ সিটিতেই এবং অনেক স্থানেই বসছে পশুর হাট। সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি করোনার বিস্তার কমাতে অনলাইনে ডিজিটাল হাট উদ্বোধন করলেও পাশাপাশি নতুন করে পশুর হাটও বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ সিটি অনলাইনে পশুর হাটের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্তই নিতে পারেনি। এখন পর্যন্ত দুই সিটিতে চূড়ান্ত হওয়া হাটগুলো হচ্ছে- ঢাকা উত্তরে কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরস্থিত বৃন্দাবন হতে উত্তরদিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, সম্পূর্ণ নতুন হিসেবে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজসংলগ্ন মস্তুল ডুমনি বাজারমুখী রাস্তার উভয়পাশের খালি জায়গার হাট। এদিকে ডিএসসিসি যে পাঁচটি পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলো হচ্ছে- কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, আফতাবনগর ব্লক-ই, এফ, জি এর সেকশন ১ ও ২ নম্বর এলাকা, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা এবং পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা। রবিবার সংস্থাটির করা এক সভায় এসব পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন। সূত্র জানায়, এ ৮টি হাটের বাইরে আরও পশুর হাট বসাবে কি না তা নির্ধারণ করতে ডিএনসিসি সোমবার এক বৈঠক আহ্বান করেছে। এ বৈঠকেই হাট নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে সংস্থাটি ঢাকা শহরের বাইরে বা কম জনবহুল স্থানে এসব পশুর হাট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে ডিএসসিসি ১৯ জুলাই দরপত্র দাখিলের শেষদিন বিধায় এরপরও সভা ডেকে দরপত্র অনুযায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সংস্থাটি। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, সংস্থাটি নতুন করে পশুর হাট বসানোর প্রক্রিয়া করতে তেমন রাজি নয়। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পশুর হাট বসাতে ইজারাদারদের কমপক্ষে ১৫ দিন আগেই পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হয়। যা এই সময়ের মধ্যে কোনক্রমেই সম্ভব নয়। ফলে ঢাকা দক্ষিণে এ বছর এই পাঁচটি হাটই থাকবে। ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোঃ রাসেল সাবরিন বলেন, রবিবারের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিএসসিসি এলাকায় এবার পাঁচটি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকিগুলোর দরপত্র অনুযায়ী ১৯ তারিখ শেষ সময়। এরপর বাকি হাটগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাকি হাটগুলো বসার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কম, তবে এ বিষয়ে পরে সভা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অনলাইনে পশুর হাট চালু করা নিয়ে রাসেল সাবরিন বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে অনলাইন হাট চালু করেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাছাড়া পশুর হাটের ডিজিটাল বাজার চালুর জন্য কোন অনলাইন হাট চালুর প্রতিষ্ঠানও এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত আসেনি। তাই আবেদন করলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলেচনাপূর্বক এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে আমরা এ নিয়ে সহযোগিতা করতে রাজি। জানা গেছে, ডিএসসিসি এলাকায় চূড়ান্ত হওয়া পাঁচটি হাটের মধ্যে রয়েছে- কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, আফতাবনগর ব্লক-ই, এফ, জি এর সেকশন ১ ও ২ নম্বর এলাকা, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা এবং পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা। ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে ডিএসসিসি এলাকায় ১৪টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে তিনটি হাট ইজারা নিতে কেউ দরপত্র জমা দেয়নি। এছাড়া দুটিতে সরকারী দরের চেয়ে কম মূল্যে দরপত্র জমা পড়েছে, যে কারণে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এ বছর ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে কোরবানির পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। একইসঙ্গে ভাইরাসের বিস্তার রোধে ঈদের ছুটিতে এই চার এলাকা থেকে অন্যান্য স্থানে যাতায়াত বন্ধ রাখারও পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে এই চার জেলা। শুক্রবার পরামর্শক কমিটির ১৪তম অনলাইন সভায় সুপারিশ করা হয়। পরামর্শক কমিটির মতে, নিয়ন্ত্রণে না আসায় কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কমিটি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে। এ অবস্থায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধ জীবনযাত্রায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। কমিটি তাদের সুপারিশে বলেছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে যেন পশুর হাট স্থাপন না করা হয়। এক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া অন্যান্য জায়গায় সংক্রমণ প্রতিরোধ নীতিমালা পালনসাপেক্ষে কোরবানির পশুর হাট বসানো যেতে পারে। কমিটি কোরবানি পশুর হাট স্থাপন ও পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম অনুসরণ করার সুপারিশ করেছে। কমিটি কোরবানির পশুর হাট শহরের অভ্যন্তরে না বসানোর সুপারিশ করেছে।
×