ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মায়ের কবরের পাশে সাহারা খাতুনের লাশ আজ দাফন

প্রকাশিত: ২২:২২, ১১ জুলাই ২০২০

মায়ের কবরের পাশে সাহারা খাতুনের লাশ আজ দাফন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিচ্ছন্ন, সৎ, ত্যাগী ও নিরহঙ্কারী রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিশেষ করে নিজ দলের নেতাকর্মী ও ঢাকা-১৮ সংসদীয় এলাকার সর্বস্তরের মানুষ শোকে মুহ্যমান। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে রাতেই তাঁর লাশ ঢাকায় আনা হয়েছে। বিমানটি রাত ৯টায় থাইল্যান্ড থেকে রওনা দিয়ে রাত ১২টায় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। এ সময় আওয়ামী লীগের বিপুলসংখক নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আজ শনিবার জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে। সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলের শোক অব্যাহত রয়েছে। শোকবার্তায় তারা সাহারা খাতুনের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিকাশে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের রাজনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হবার নয় বলেও তারা মন্তব্য করেন। সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার রাতেই শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজও অনেকে শোক প্রকাশ করেছেন। জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি সাহারা খাতুনের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক,পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলপথমন্ত্রী মোঃ নূরুল ইসলাম সুজন, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ২৬ মিনিটে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মারা যান সাহারা খাতুন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। খবর শুনে রাতেই তাঁর নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-১৮’র কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। করোনা পরিস্থিতিতেও অনেকেই মধ্য রাতে বাসা থেকে বের হয়ে একে অপরের সঙ্গে তাঁর কর্মময় জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ ফোন বা অন্য সামাজিক মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ঢাকা-১৮ নির্বাচনী এলাকার অধিবাসী সাংবাদিক আতিকুল ইসলাম বলেন, এমন নিরহঙ্কারী ও পরোপকারী রাজনৈতিক নেতা এখন আরেকটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি কত যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। জাতীয় চার নেতা ও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি রাজপথে প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। একজন নারী হয়েও তিনি আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। সাহারা খাতুন ও আমার প্রয়াত বড় ভাই মোহাম্মদ আলী পিনুর নেতৃত্বে এই এলাকার মানুষ রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচী সফল করতে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, সেই ছোট্টবেলা থেকেই সাহারা আপার সঙ্গে রাজপথে ছিলাম। তিনি যখন ডাকতেন তখনই ছুটে যেতাম। তাঁর প্রতি এত শ্রদ্ধা ছিল যে, কোন কিছু পাওয়ার আশায় রাজনীতি করিনি। রাজপথে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন সাহারা খাতুন। এ লড়াইয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা-৫ আসন থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নামেন। ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকার পরও তিনি স্বল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। ওয়ান-ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতারের পর তিনি আদালতে ও রাজপথে সোচ্চার ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনিসহ দলীয় আইনজীবীদের আইনী লড়াইয়ে শেখ হাসিনাকে মুক্ত করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হন তিনি। এর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তাঁকে দেয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ৩ বছর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার পর তিনি পান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এর পর দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সাহারা খাতুন ঢাকা-১৮ আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শুক্রবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছিলেন সাহারা খাতুন, সেই থেকে অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি মাঠ ছাড়েননি। বছরের পর বছর মাঠের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন একজন নিরলস, নির্ভীক ও ত্যাগী নেতা। দেশের রাজনীতিতে তাঁর অভাব পূরণ হবার নয়। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, দল ও দেশের জন্য নিজেকে শতভাগ উৎসর্গ করেছিলেন সাহারা খাতুন। এ জন্যই তিনি একজন আদর্শবান রাজনীতিবিদ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। দেশের রাজনীতিতে তাঁর অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান সাহারা খাতুন আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। পরে এ দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম মেম্বার হন নিজের যোগ্যতাবলেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদটি বহন করেন। সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এমপি শোক প্রকাশ করেছেন। সর্বইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের শোক ॥ ভিয়েনা থেকে সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, সংসদ সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে সর্বইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ। সংগঠনের সভাপতি এম. নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান এক শোকবার্তায় বলেন, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন আজীবন নিষ্ঠা ও উদারতার সঙ্গে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনে, বিএনপি-জামায়াতের স্বৈরাচারী গণবিরোধী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ও দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে আইনী সাহায্য সহযোগিতা দেয়ার প্রশ্নে তার অগ্রণী সাহসী ভূমিকার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার প্রয়াণ দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তারা মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
×