ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দোলনচাঁপার ঘ্রাণে ফিরবে প্রেম, স্নিগ্ধ হবে চারপাশ

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ৯ জুলাই ২০২০

দোলনচাঁপার ঘ্রাণে ফিরবে প্রেম, স্নিগ্ধ হবে চারপাশ

মোরসালিন মিজান ॥ দোলনচাঁপা নাম নিলেই নাকে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ এসে লাগে। লাগে না? ফুলটির সঙ্গে যারা পরিচিত তারা নিশ্চিত ‘হ্যাঁ’ বলবেন। শুধু তাই নয়, অনেকে এ-দিক ও-দিক তাকাবেন। ফুটল কি প্রিয় ফুল? খোঁজ করবেন। তাদের জন্য বলা, এরই মাঝে সৌন্দর্যের সবটুকু নিয়ে দৃশ্যমান হয়েছে দোলনচাঁপা। বর্ষা শুরু হতে না হতেই এর দেখা মিলছে। সাদা পাপড়ি প্রজাপতির ডানার মতো উড়ছে। যেন উড়ছে। দেখে মনেও অদ্ভুত দোলা লাগে। তসলিমা নাসরিন লিখেছিলেন, আমার ভালবাসার কথা দোলনচাঁপা জানে/তাই এত গন্ধ ছড়ায়...। ভালবাসার কথা আসলেই দোলনচাঁপা জানে। অন্য অনেক ফুল দিয়ে পূজা হয়। প্রেম হতে পারে। দোলনচাঁপা একটু আলাদা। টিনেজ প্রেমিকাটি পরিণত হতে হতে একদিন হয়ত সব ভুলে যাবে। মানিক মিয়া এভিনিউ কিংবা টিএসসির দিকে হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ দোলনচাঁপা দেখে থেমে যাওয়ার স্মৃতি ভুলবে না। বৃষ্টিভেজা বিকেল কাঁচা দোলনচাঁপার ঘ্রাণ তাকে ফেরাবে। যদি ফেরায় অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। দোলনচাঁপা এমনই ফুল! ফুলটির হালকা সাদা পাপড়ি। বৃষ্টির ঝিরি হাওয়ায় দুলছে। কেঁপে কেঁপে উঠছে। দেখে মনে হচ্ছে শ্বেত শুভ্র প্রজাপতি। এ কারণে ফুলটিকে বাটারফ্লাই জিঞ্জার লিলি নামেও ডাকা হয়। দোলনচাঁপার নাচন দেখে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, দোলে দোলে দোলে প্রেমের দোলন-চাঁপা হৃদয়-আকাশে...। নজরুল নিজের মতো করে ফুলটির বর্ণনা দিয়েছেন। কবির ভাষায়Ñ যেন দেবকুমারীর শুভ্র হাসি, ফুল হয়ে দোলে ধরায় আসি/ আরতির মৃদুজ্যোতি প্রদীপ কলি দোলে, যেন দেউল আঙিনাতে...। নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা থেকে জানা যায়, দোলনচাঁপা একটি বুনো ফুল। আদিনিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ভারতীয় প্রজাতির ফুল বহুকাল ধরে বাংলাদেশে আছে। এর প্রায় ৪০টির মতো প্রজাতি। কোনটির রং হলদেটে। কোনটি আবার লাল। তবে প্রধানত সাদা রঙের হয়। গাছ ৬০ থেকে ৭০ সেমি উঁচু। কা-ের পাশে কয়েকটি লম্বা পাতা থাকে। দোলনচাঁপার পাতা লেন্স আকৃতির। লম্বায় আট থেকে চব্বিশ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। চওড়ায় হয় দুই থেকে পাঁচ ইঞ্চি। বর্তমানে বাংলাদেশে ফুলটির ভাল চাষ হয়। ফুলচাষীরা মৌসুমি ফুল হিসেবে দোলনচাঁপার চাষ করে থাকেন। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে বসন্ত পর্যন্ত গাছের ওপরের অংশে ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি পুষ্পমঞ্জরি দেখা দেয়। দোলনচাঁপা গাছ দেখতে অনেকটা আদা বা হলুদ গাছের মতো। ফুল ফোটা শেষ হলে কা- শুকিয়ে যায়। তবে গোড়া থেকে আবার নতুন কা- জন্ম নেয়। সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে না এমন জায়গায় ভাল জন্মে। ঢাকার কোন কোন বাড়ির সামনের বাগানেও দোলনচাঁপা দেখা যায়। তারও বেশি চোখে পড়ে চলার পথে। রাজধানী শহরে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ফুলের তোড়া নিয়ে ছিন্নমূল ছেলে-মেয়েরা ছোটাছুটি করে। ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি থামতেই সামনে এসে দাঁড়ায়Ñ ‘আপা, ফুল নিবেন? ভাই নেন একটা...।’ না, অনুনয় শুনে গাড়ির গ্লাস উঠিয়ে চলে যাবেন না। চলে তো কতই গেলেন। এবার একটু থামুন। দোলনচাঁপা হাতে নিন। এই ঘ্রাণ আপনার মনকে, সে যতই ভেঙ্গে চুরে যাক, জোড়া দেবে। দিতেও পারে!
×