ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনার সুযোগে হাতিয়ে নিল সাড়ে ৩ কোটি টাকা ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা পালিয়ে গেছেন চেয়ারম্যান ও এমডি পলাতক আসামিদের ধরতে মাঠে নেমেছে র‌্যাব

চিকিৎসায় প্রতারণা ॥ সিলগালা করা হলো রিজেন্ট হাসপাতাল

প্রকাশিত: ২২:১৮, ৮ জুলাই ২০২০

চিকিৎসায় প্রতারণা ॥ সিলগালা করা হলো রিজেন্ট হাসপাতাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা মহামারীর সুযোগে ধরাকে সরাজ্ঞান করেছেন রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক। করোনার নকল সনদ তৈরি করে একই সঙ্গে রোগী ও সরকারের কাছ বিল আদায় করা, মিরপুর শাখা পরিদর্শনের সময় মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তাকে অস্ত্রের মুখে তাড়িয়ে দেয়া, লাইসেন্স ছাড়াই ৭ বছর ধরে হাসপাতাল চালানো, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্টিকার ও ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড লাগিয়ে রেজিস্ট্রেশনবিহীন ব্যক্তিগত গাড়ি চালানো ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি পরিশোধ না করার মতো অসংখ্য অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে র‌্যাব। ছয় হাজার রোগীর কাছ থেকে কমপক্ষে সাড়ে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এই রিজেন্ট। অভিযানের পর থেকে পলাতক রয়েছেন মূল হোতা সাহেদ ও মাসুদ। এসব অভিযোগ এনে মঙ্গলবার উত্তরা পশ্চিম থানায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোঃ সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তাদের মধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। উত্তরায় রিজেন্টের প্রধান কার্যালয়সহ রোগীদের স্থানান্তরের পর সিলগালা করা হয়েছে উত্তরা ও মিরপুরের হাসপাতাল। পলাতক আসামিদের ধরতে মাঠে নেমেছে র‌্যাব। এদিকে র‌্যাব রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতালের কার্যকর বাতিল করা হয়েছে। গত সোমবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে একটি দল প্রথমে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। এর আগে আরেকটি দল রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর শাখায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে আটজনকে আটক করা হয়। এ সময় জব্দ করা হয় ৫টি কম্পিউটার, রাসায়নিক উপাদান, নকল সনদের সামগ্রী, রেজিস্ট্রেশনবিহীন একটি বিলাসবহুল গাড়ি ও অন্যান্য বস্তু। র‌্যাবের দাবি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রভাবশালী লুটেরা সিন্ডিকেটের প্রত্যক্ষ মদদে রিজেন্ট মালিক এ ধরনের অবিশ্বাস্য সব কা- ঘটিয়েছেন। সুষ্ঠু তদন্ত করা হলে নেপথ্য নায়কদেরও চিহ্নিত করা হবে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম দৈনিক জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, এই হাসপাতালে অভিযান চালাতে গিয়ে এমন সব অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণার চিত্র ধরা পড়েছে, যা অবিশ্বাস্য। কিভাবে একটি সিন্ডিকেট দিনের পর দিন করোনা মহামারীকে পুঁজি করে সরকার ও জনগণের পকেট কেটেছে তা অবিশ্বাস্য। প্রাথমিক তদন্তেই চাঞ্চল্যকর কাহিনী বেরিয়ে আসছে। মূল হোতাদের আটক করা গেলে আরও অনেক কেলেঙ্কারি বেরিয়ে আসবে। র‌্যাব ম্যাজিস্ট্রেট জানালেন আরও ভয়াবহ তথ্য। মিরপুরের পল্লবীতে রিজেন্টের একটি শাখা অনুমোদন দেবার আগে পরিদর্শন করতে যান- স্বাস্থ্য বিভাগের দুজন সহকারী পরিচালক মর্যাদার কর্মকর্তা। তাদের দেখতে পেয়ে- এমডি মাসুদের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী ধাওয়া করে। এতে প্রাণ ভয়ে দুই কর্মকর্তা পিছু হটতে থাকলে মাসুদকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায় ‘আমার হাসপাতালের অনুমোদন পেতে হলে পরিদর্শন করা লাগবে না। সচিবরা এসেই করে দিয়ে যাবে।’ তারপর পরিদর্শনকারী টিম স্বাস্থ্য বিভাগে জানানোর পরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জানা গেছে, করোনা তা-বের শুরুতেই গত মার্চে র‌্যাব জানতে পারে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে প্রধান শাখায় চিকিৎসার নামে চরম অনিয়ম দুর্নীতি ও অরাজকতা চলছে। তখন থেকেই মূলত র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এ সময় র‌্যাবের হাতে তথ্য আসে করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং বাড়িতে থাকা রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করত রিজেন্ট হাসপাতাল। এছাড়াও সরকার থেকে বিনামূল্যে করোনা টেস্ট করার অনুমতি নিয়ে রিপোর্ট প্রতি সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে আদায় করা হতো। এভাবে রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করে মোট ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাহেদ ও এমডি মাসুদ সরাসরি ডিল করতেন অনিয়ম, অপরাধ ও প্রতারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো। তাদের বিশ্বস্ত এক ডজন কর্মীও ছিল। এ সম্পর্কে র‌্যাব জানতে পারে- করোনা টেস্টের জন্য আসা রোগীদের বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল রিজেন্টের। কিন্তু তারা প্রায় ১০ হাজার জনের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে, প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা টাকা নিয়েছে। এসব নমুনার অর্ধেকের বেশি পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দিয়েছে, যা সম্পূর্ণ প্রতারণা। রিজেন্ট সরকারকে জানিয়েছে তারা কোভিড রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা দিচ্ছে। এই বলে তারা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ ক্লেইম করেছে। অথচ অনেক রোগীর কাছ থেকেও তাদের দেড় থেকে দুই লাখ, আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত বিল আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্টকে কোভিড হাসপাতালের এই অনুমতি দেয়ার আগে শর্ত ছিল- এখানে যারা ভর্তি হবেন, তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআইআর, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে ফ্রি অব কস্ট (বিনামূল্যে) পরীক্ষা করাবে। তারপর থেকে রিজেন্ট বাসায় বাসায় গিয়ে ১০ হাজারের বেশি নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৪ হাজার ২৬৪ জনের নমুনা আইইডিসিআরসহ অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান থেকে টেস্ট করিয়েছে। বাকি নমুনাগুলো টেস্ট না করে ভুয়া রিপোর্ট করেছে। আমরা আইইডিসিআরে রিপোর্ট ক্রসচেক করে দেখেছি, রিজেন্ট এগুলো তাদের পাঠায়নি। ভুয়া রিপোর্টের জন্য সাড়ে তিন হাজার করে টাকা নিয়েছে। আমরা দেখলাম এ পর্যন্ত তারা ৩ কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে। বিষয়গুলো চেয়ারম্যান নিজে ডিল করেছেন, অন্যান্য কয়েকজন কর্মীও ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্টের মালিকরা কতটা ভয়ঙ্কর একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। সাহেদ ও মাসুদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণলায়ের কেউ নয়। অথচ তারা একটি গাড়ি ব্যবহার করত অধিদফতরের স্টিকার, ফ্ল্যাগস্ট্যান্ডসহ। ওই গাড়ি জব্দের পর দেখা যায় কোন কাগজপত্রই নেই। রেজিস্ট্রেশন বিহীন গাড়িটি সরকারী হিসেবে ব্যবহার করে অবাধে সংরক্ষিত এলাকায় মুভ করত। তার গাড়ি ধরার সাহস ছিল না কারোর। এ সম্পর্কে ভুক্তভোগী একজন রোগীর স্বজন দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্তাদের ম্যানেজ করেই সাহেদ ও মাসুদ নির্বিঘেœ ত্রাসের রাজত্ব করেছে। মন্ত্রণালয়ে করোনা চিকিৎসার সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই করার সময় প্রভাবশালী একাধিক সচিবকে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। যাদের ওই অনুষ্ঠানে থাকারই কোন প্রয়োজন ছিল না। শুধু সাহেদ ও মাসুদকে খুশি করার জন্যই এতটা সমীহ করতে দেখা গেছে। মোটকথা স্বাস্থ্য বিভাগ ছিল এদের কাছে জিম্মি। তারা যা চাইত তাই পেত। এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতরে সরকারের সঙ্গে করোনার চিকিৎসা দেয়ার বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে রিজেন্ট হাসপাতাল। এরপর থেকে নানা রকম অভিযোগ আসছিল হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। র‌্যাব জানিয়েছে, রিজেন্ট আরও কিছু অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বেশকিছু সনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা হাতে নিয়েই মাঠে নামে র‌্যাব। কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রান্ত অভিযোগগুলো প্রকাশ্যে আসতে থাকলে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে নতুন কৌশল নেয় রিজেন্ট। অভিনব এই কৌশলের বিষয়ে সারোয়ার আলম বলেন, যখন আমরা বিভিন্নজনের কাছ থেকে এসব অভিযোগ পাচ্ছিলাম- তখন রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ এটাকে গোপন করার জন্য ক’দিন আগে একটা প্রেস কনফারেন্স করে। সেখানে তারা বলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসবের জন্য দায়ী নয়। রিজেন্ট হাসপাতালের ৩ জন কর্মী এর সঙ্গে জড়িত। নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করতে ১ মাস ৭ দিন আগের ব্যাকডেট দিয়ে ৩ কর্মচারীকে বরখাস্ত করে রিজেন্ট। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একটা সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছে রিজেন্ট। অথচ আমরা দেখলাম- ওই ৩ কর্মী গত দেড় মাস অফিস করেছে, হাজিরা দিয়েছে। রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ ফ্লুইড দিয়ে তাদের হাজিরা খাতার স্বাক্ষরগুলো মুছে দিয়েছে, যাতে সে প্রমাণ করতে পারে যে আগেই তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। শুধু তাই না, রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ এই ৩ কর্মচারীকে বলেছে যে- আপনারা চাকরি করেন কোন সমস্যা নেই, আমরা আপনাদের আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসব। তার মানে কর্তৃপক্ষ স্টাফদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার করার চেষ্টা করেছে। এসব অপরাধ ও টাকার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান নিজে করত। লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১৪ সালে শেষ হওয়ার পরেও কোন রিজেন্ট হাসপাতালকে কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়? এমন এক প্রশ্নের জবাবে সারোয়ার আলম বলেন, ক্রাইসিস মুহূর্তে যখন একটি বেসরকারী সংস্থা বিনামূল্যে সেবা দিতে চাইবে- সরকার অবশ্যই তাদের ওয়েলকাম করবে। সরকার তাই করেছে। লাইসেন্সের চেয়ে মুখ্য ছিল সেবা দেয়া। এ অভিযানের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখানে অনেক ধরনের প্রতারণার প্রমাণ পেয়েছি। আর এগুলো হয়েছে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে। তাদের বাসায় গিয়ে নমুনা পরীক্ষার অনুমতি ছিল না কিন্তু তারা সেটি করেছে টাকা নিয়ে। এই নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়েও তারা জালিয়াতি করেছে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে। এ নিয়ে অনেক অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। আমার দুইজন সহকর্মীর কাছ থেকেও টাকা নিয়ে নমুনা পরীক্ষা করানো হয়েছে কোন মানি রসিদ ছাড়াই। এ সময় আমরা যে টাকা দিয়েছি- তার নোট নম্বর টুকে রাখি। আমরা পরে হাসপাতালে অভিযানকালে এমন অনেক সনদ পেয়েছি, যা নমুনা পরীক্ষা করা ছাড়াই বানানো হয়েছে। আইইডিসিআর, আইটিএইচ ও নিপসম থেকে ৪ হাজার ২০০ রোগীর বিনামূল্যে রিজেন্ট হাসপাতাল নমুনা পরীক্ষা করে এনেছে। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টাকার বিনিময়ে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। অথচ তাদের এ ধরনেরও কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। ‘রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা চুক্তিতে উল্লেখ ছিল এখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার। এক্ষেত্রে সরকার এই ব্যয় বহন করবে কিন্তু তারা রোগী প্রতি লক্ষাধিক টাকা বিল আদায় করেছে। একদিকে তারা যেমন টাকা নিয়েছে অন্যদিকে সরকারের কাছে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি বিল জমা দিয়েছে। এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত প্রায় দুশ’র বেশি কোভিড আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। আমরা আশা করছি এ ধরনের অপরাধের কারণে তাদের মারাত্মক শাস্তি হবে। কেননা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে পৃথিবীর অন্য কোন দেশ এই ইতিহাস তৈরি করেছে বলে আমার জানা নেই। আমার ধারণা একমাত্র বাংলাদেশেই এসব লোক টেস্টের নামে আমাদের দেশকে কলঙ্কিত করেছে। এদের কঠোর শাস্তি হতে হবে। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ওভাল গ্রুপের জেকেজি হেলথকেয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার নানা রকম প্রমাণ পাওয়ার পর সেখানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় প্রতিষ্ঠানটির মালিক দম্পতিকে। ওই ঘটনায় আরও ক’জন পলাতক রয়েছে। এ বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেও রিজেন্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে রিজেন্টের একটি হটলাইনে কথা হয়েছে ম্যানেজার পদ-মর্যাদার একজনের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেছেন, গণমাধ্যমে একতরফাভাবে রিজেন্টের বিরুদ্ধে প্রচার করা হচেছ যা সত্য নয়। প্রকৃত সত্য তাহলে কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল করোনার দুঃসময়ে শুরু থেকেই যে কাজটি করে আসছে সেটা ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং। কোন বেসরকারী হাসপাতাল যখন করোনার চিকিৎসা করতে রাজি হয়নি- তখন এই রিজেন্টের মালিককে অনুরোধ করে কাজ দেয়া হয়েছে যাতে মানুষের দুর্দিনে পাশে থেকে একটা নজির গড়তে পারে। তদবির নয়, বরং স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুরোধেই রিজেন্ট সেদিন রাজি হয়েছিল। হাসপাতালের লাইসেন্স না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ঠিক নয়। লাইসেন্স রয়েছে, সেটার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় রিনিউ করার জন্য আবেদন জমা আছে। প্রক্রিয়াধীন আবেদন আর লাইসেন্স না থাকা এক বিষয় নয়। সাংবাদিকরা ভাল করে তদন্ত না করেই অসম্পূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশ করছে। করোনার নকল সনদ তৈরি করে দু’জায়গা থেকে বিল তোলা সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন- এটাও ঠিক নয়। হাসপাতালের তিনজন কর্মচারী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি এমডি ও চেয়ারম্যান স্যারের নলেজে আসার পর তাৎক্ষণিক তাদের বরখাস্ত করা হযেছে এবং থানায় জিডি পর্যন্ত করা হয়েছে। দু’জায়গা থেকে বিল নেয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, করোনার পরীক্ষার জন্য টাকা নেয়া হয়নি। কিছু বিল নেয়া হয়েছে হাসপাতালের ডাক্তার নার্স, অন্যান্য সার্ভিসের জন্য। এটা ডাবল বিল নয়। রিজেন্টের সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর ॥ এদিকে র‌্যাব রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে। এতে হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় আর কোন ধরনের কার্যক্রম চলতে পারবে না। মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতর এই হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডাঃ আমিনুল হাসান জানিয়েছেন, রিজেন্ট হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতালটি কোন কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন প্রস্তুত করা হয়েছে। কিছু সময়ের মধ্যেই এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পৌঁছে যাবে। ওই আদেশে বলা হয়েছে, রিজেন্ট হাসপাতাল উত্তরা ও মিরপুর গত মার্চ মাস থেকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছিল। কিন্তু সোমবার র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখায় (মূল শাখা) বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অধিদফতর বলছে, প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, হাসপাতাল দু’টি রোগীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে বিরাট অঙ্কের টাকা আদায় করছে। অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দিতে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাগিদ দিলেও লাইসেন্স নবায়ন না করে আরও অনিয়ম করেছে বলে নানা অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে তাদের বিরুদ্ধে। এসব অনিয়মের কারণে ‘দ্য মেডিক্যাল প্র্যাকটিস এ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক এ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ রেগুলেশন অর্ডিন্যান্স-১৯৮২’ অনুযায়ী হাসপাতালটির কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলো।
×