ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এন্ড্রু কিশোর আর নেই

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ৬ জুলাই ২০২০

এন্ড্রু কিশোর আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ জীবনমৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ড্র কিশোর। সোমবার সন্ধ্যা ৬ টা ৫৫ মিনিটে তিনি রাজশাহী নগরীর মহিষবাথান এলাকা বোনের বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর। পরিবার সূত্র জানায়, গত দুইদিন ধরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিলো। রবিবার বিকেলে তার অবস্থার আরো অবনতি হয়। এরপর রাজশাহীর মহিষবাথান এলাকায় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়িতে অবস্থিত হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে অচেতন অবস্থায় ছিলেন। রাজশাহীতে বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিলেন এন্ড্রু কিশোর। তার সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করছিলেন ভগ্নিপতি প্যাট্রিক বিশ্বাস। তিনিই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সন্ধ্যায় ৬৫ বছর বয়সী এন্ড্র কিশোরের মৃত্যুর খবরে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। সংবাদ কর্মীরা ছাড়ার এলাকার লোকজন তার বাড়ির সামনে ভিড় করে। ব্লাড ক্যানসার নিয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পি এন্ড্র কিশোর। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর ১১ জুন রাতে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন তিনি। পরের দিন তিনি ঢাকা থেকে রাজশাহী চলে আসেন। এর পর থেকে তিনি তার বোন ডা. শিখার বাড়িতে ছিলেন। ১১ জুন ঢাকায় ফিরে এন্ড্র কিশোর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছি; আগের তুলনায় আমার শারীরিক অবস্থা বেশ ভালো। চিকিৎসকদের পরামর্শে বিশ্রামে ছিলেন তিনি; সপ্তাহ খানেকের বেশি মিরপুরে বাসায় কাটানোর পর তিনি রাজশাহী আসেন। চেকআপের জন্য তিন মাস পর পর তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিলো। গত বছরের ৯ সেপ্টেস্বর শরীরের নানা জটিলতা নিয়ে সিঙ্গাপুর চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সবাইকে কাদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন এই গুনি শিল্পী। এর আগে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার শরীরে ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ার পর থেকেই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু। ছয়টি ধাপে তাকে মোট ২৪টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে। তার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা সহায়তা করেছিলেন। পাশাপাশি ‘গো ফান্ড মি’ নামে এক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। সহশিল্পীদের মধ্যেও অনেকে তার পাশে দাঁড়ান। গানের মানুষ এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসায় তহবিল সংগ্রহ করতে সৈয়দ আব্দুল হাদী, সাবিনা ইয়াসমীন, মিতালী মুখার্জিসহ আরো কয়েকজন শিল্পীকে নিয়ে কনসার্টেরও আয়োজন করা হয়। ১৯৭৭ সালে ‘ মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে প্লেব্যাকে যাত্রা শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর; এরপর আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেও গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গান উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের। এদিকে এন্ড্রুকিশোরের মৃত্যুতে তাৎক্ষনিক শোক জানিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা।
×