ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পানি কিনতে ৩/৪ দিন আগে লাইন দিতে হচ্ছে

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সঙ্কট

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২৭ জুন ২০২০

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সঙ্কট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার এই মহা দুর্যোগেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকয়া পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মগবাজার, পেয়ারাবাগ এলাকায় পাঁচ দিন ধরে পানি নেই। এই এলাকায় এক গাড়ি পানি কিনতে লাইন দিতে হচ্ছে ৩ থেকে ৪ দিন আগে। তাও আবার বড় অঙ্কের বখশিশ না দিলে পানির গাড়ি বাড়ি পর্যন্ত আসতে নানা টালবাহানা করছে। অনেকে আবার পানি ও বখশিশের টাকা আগেই দিয়ে পানি কিনছেন। মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, কোন অবস্থাতেই পানির সঙ্কট তৈরি করা যাবে না। বিষয়টি ওয়াসাকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এমন কি ওয়াসার কোন কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছুটি পাবেন না। করোনা মহামারী পরিস্থিতিকালীন পানির মতো জরুরী সেবা অব্যাহত রাখার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মন্ত্রীর এই নির্দেশ পালিত হচ্ছেনা। করোনা আতঙ্কে ওয়াসায় জনবল অর্ধেকে নেমে এসেছে। যারা পানির পাম্প পরিচালনা করেন তারা আবার ঠিকই ‘ওভারটাইমের’ টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। এই টাকা মূল বেতনের কয়েক গুণ বেশি। পানি সঙ্কট নিয়ে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান জনকণ্ঠকে বলেন, নগরীতে পানির কোন সমস্যা নেই। কয়েকটি পকেট সমস্যা থাকলে থাকতে পারে। এ গুলো আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে দিচ্ছি। আমাদের হট নম্বরে অভিযোগ করলেই সমাধান করা হচ্ছে। গত তিন দিন ধরে মগবাজার এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ওয়াসার বিভিন্ন পর্যায়ের যোগাযোগ করেও পানির কোন সমাধান করা সম্ভব হয়নি। লাইনম্যান পর্যন্ত অনুরোধ করার পরও ৬৩৮/১১/ক নম্বরের বাড়িওয়ালা পানি পাননি। পরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর কাছে ফোন করে পরিস্থিতি বর্ণনা করার পর ওই বাড়িওয়ালা এক গাড়ি পানি পেয়েছেন। এ বিষয়ে ওয়াসার এমডি বললেন, এগুলো তো খুবই ছোট ছোট সমস্যা। এর জন্য মন্ত্রী পর্যন্ত যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের হট নম্বরে ১৬১৬২ ফোন করেই জানাতে পারত। তাহলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। অথচ গোটা মগবাজার, পেয়ারাবাগ, গাবতলা মধুবাগসহ গোটা এলাকার মানুষ হট নম্বরে ফোন থেকে শুরু ওয়াসার অফিসে ভিড় করেও কোন ফল পাননি। পানি সরবরাহ যে এসব এলাকায় নেই ওয়াসার এমডি জানেনই না। তাকে নাকি কেউ জানাননি। এলাকাবাসীর অভিযোগ ওয়াসার কর্মকর্তা কর্মচারী কাউকে মানুষই মনে করে না। যা খুশি তাই ব্যবহার করে। এমডি আরও বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরে পানির চাহিদা ২৩০ থেকে ২৪০ কোটি লিটার। আমরা এখন উৎপাদন করার সক্ষমতা অর্জন করেছি ২৭৫ কোটি লিটার। পানি আমাদের ‘সারপ্লাস’। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় কিছু পকেট সমস্যা রয়েছে। আবার বিদ্যুত না থাকার কারণেও পানি সরবরাহ দিতে কিছুটা সমস্যা হয়। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে নগরীতে এক শ’র ওপরের পানির পাম্প নষ্ট হয়ে আছে। ফলে পানি সমস্যা কিছু কিছু এলাকায় হচ্ছে সব এলাকায় না। মিরপুর শেওড়াপাড়া, মগবাজারের কিছু অংশ, পুরান ঢাকায় ওয়াসার নতুন পাইপ বসানো হচ্ছে। এ কারণে পুরান ঢাকাতেও পানির কিছু সমস্যা রয়েছে। পানির যে একেবারে অসুবিধা নেই তা বলা যাবে না। তবে আমাদের উৎপাদন এখন অনেক বেশি। এক প্রশ্নের জবাবে এমডি বলেন, আমরা মিরপুর এলাকার জন্য সাভারের তেঁতুলঝোড়া থেকে পানি সরবরাহ দিচ্ছি। পুরান ঢাকার পানি আসছে পদ্মা নদী থেকে। যে পরিমাণ পানি উৎপাদন করা হচ্ছে সরবরাহ ব্যবস্থা পুরনো হওয়ার কারণে পুরোপুরি সরবরাহ দেয়া যাচ্ছে না। সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে পদ্মার যশলদিয়া থেকে যে পানি ঢাকায় আনার প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে-ওই প্রকল্প থেকে মাত্র ৫ কোটি লিটার পানি ঢাকায় আসছে। উদ্বোধনের সময় বলা হয়েছিল ১৫ কোটি লিটার সরবরাহ হবে। পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্প থেকে ৪৫ কোটি লিটার পানি ঢাকায় আসবে। আসলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন একটি শুভঙ্করের ফাঁকি। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে প্রকল্পটি কাজ করা হয়েছে। এখনও প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তিন দফা কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পরেও কেরানীগঞ্জে পূর্ণাঙ্গ রিজার্ভার তৈরি হয়নি। একইভাবে সাভারের তেঁতুলঝোড়া রিজার্ভার থেকেও ৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। এখান থেকেও ১৫ কোটি লিটার পানি আসার কথা ছিল। পানির বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়ে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের পকেট ভারি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। করোনা পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর চিঠি দেয়া হয়েছে-মহামারী পরিস্থিতিতে যাতে মানুষের পানির কোন সমস্যা না হয়। মন্ত্রণালয়ের এই চিঠির কোন গুরুত্বই দেয়া হচ্ছে না। ওয়াসা চলছে এক ব্যক্তির শাসনে। তার ওপর দিয়ে মন্ত্রণালয়ের কিছু বলার নেই। এদিকে নগরীর উত্তরা, মোহাম্মদপুর, রাজাবাজার, সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, তারা বিভিন্ন সময় পানি নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ওয়াসা অফিসে গিয়েও নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ওয়াসা অফিসটা মনে হয় একটা ‘মাফিয়া’ সাম্রাজ্য। এখানে কেই ন্যায্য কথা বললে তার পানি প্রাপ্তি ঘটবে সবার পরে। অর্থাৎ তিন চার দিন পরে। তাও আবার গাড়ি প্রতি ৫শ’ এক হাজার টাকা বেশি দিতে হবে। এমন এক পরিস্থিতি হচ্ছে ওয়াসা অফিসে। বিশেষজ্ঞরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সঙ্কটকে পাইপ লাইনের ত্রুটি হিসেবে দেখছেন। কোন প্রকার বিজ্ঞানভিত্তিক পাইপলাইন স্থাপন না করে যেভাবে খুশি মাটির নিচে পাইপ দিতে পারলেই হলো। এটা কতটা কার্যকর তা দেখার কোন প্রয়োজন মনে করে না কর্তৃপক্ষ। ফলে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময় পানির সঙ্কট দেখা দেয়। নগরীর পানি ব্যবস্থাপনা ত্রুটি দূর করতে পারলে পানি সমস্যা অর্ধেকে নেমে আসবে। পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে একটি একক নেটওয়ার্কে আনার পরামর্শ দিয়েছেন পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা। পুরো শহরকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা জরুরী। কোথাও সমস্যা হলে যাতে অন্যত্র থেকে পানি সরবরাহ করা যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে আর নগরবাসী পানির সমস্যায় ভোগবেন না। নাগরিক ভোগান্তি তৈরি হয় এমন কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকারের টাকার অপচয় করাও উচিত হবে না। তাই পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করে পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন রয়েছে।
×