ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অবাধে বাইরে আসছে রোগীরা

শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ড

প্রকাশিত: ০১:২১, ২৪ জুন ২০২০

শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ড

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল \ হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরবরাহকৃত খাবার নিম্নমানের অভিযোগে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীরা অবাধে হাসপাতালের বাইরে যাতায়াত করছে। তারা বাইরের দোকানে গিয়ে ওষুধ ও খাবার ক্রয় করছেন। এতে করে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা হাসপাতালের বাইরে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হচ্ছেনা। এছাড়া হাসপাতালের খাবার অত্যন্ত নিম্নমানের। খাবার ও ওষুধ এনে দেয়ার মতো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন লোকজন কিংবা তাদের নিজস্ব কোন স্বজন কাছে না থাকায় বাধ্য হয়েই তাদের বাইরে যেতে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের এক ব্যবসায়ীর পরিবারের চার সদস্য করোনায় আক্রান্ত। গত ২১ জুন ঢাকার আইইডিসিআর থেকে করোনা পরীক্ষার পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই ওইদিন রাতে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন ওই ব্যবসায়ী, তার স্ত্রী ও পুত্র। পরিবারের অপর সদস্য একমাত্র মেয়ের করোনা পজিটিভ হলেও কোন উপসর্গ না থাকায় তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোনে ওই পরিবারের গৃহকত্রী বলেন, আমার মেয়ের কোন উপসর্গ না থাকায় তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাড়িতে অক্সিজেন সাপোর্ট পেলে আমরা তিনজনও হাসপাতালে আসতাম না। হাসপাতালে এসে আমরা চরম সমস্যায় পড়েছি। হাসপাতালের খাবার মুখে নেয়ার মতো নয়। এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধও দেয়া হচ্ছেনা। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত কোন আহার আমাদের পেটে যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও এমন কোন লোক নেই যাদের বাইরে পাঠিয়ে খাবার ও ওষুধ আনাবেন। তাই বাধ্য হয়েই ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে আমার করোনা আক্রান্ত ছেলেকে বাইরে পাঠিয়ে খাবার এবং ওষুধ আনানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, খবর পেয়ে পরবর্তীতে ডাঃ মনিষা চক্রবর্তী তাদের জন্য কিছু খাবার পাঠিয়েছেন। শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা বাকেরগঞ্জের এক রোগীর স্বজন দানিসুর রহমান জানান, তার স্বজন করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকাকালে খাবার এবং ওষুধ নিয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন। কর্তৃপক্ষের খাবার অপ্রতুল ও নিম্নমানের। প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধও হাসপাতাল থেকে দেয়া হয়না। তাই করোনা আক্রান্ত হয়েও তার স্বজনকে ওয়ার্ডের বাইরের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে খাবার ও ওষুধ কিনতে হয়েছে। শেবাচিমের সামনের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, তাদের দোকানে আসা ক্রেতাদের মধ্যে কে করোনায় আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নয়, তা তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তারা সবার কাছে পণ্য বিক্রি করেন। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত কেউ দোকানে আসলে তার সংস্পর্শে আরও অনেকে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীরা যাতে ওয়ার্ডের বাইরে যেতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা উচিত। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, এভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীরা ওয়ার্ডের বাইরের বিভিন্ন দোকানে অবাধে চলাফেরা করার মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কারণ করোনা ওয়ার্ডের অনেক রোগীর ওষুধ এবং খাবার কিনতে বিভিন্ন দোকানে যাওয়ার মাধ্যমে তারা যেসব জায়গায় যায় সেখানে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ বাকির হোসেন বলেন, করোনা ওয়ার্ডের রোগী পাহারা দেয়ার মতো আমাদের পর্যাপ্ত জনবল নেই। তাই করোনা ওয়ার্ড পাহারা দেয়ার জন্য পুলিশকে একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও তারা এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ডাক্তারদের পক্ষেও রোগীদের পাহারা দেয়া সম্ভব নয়। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, করোনা ওয়ার্ডের রোগীদের খাবার ও ওষুধ এনে দেয়ার লোক দরকার হলে তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা করবে। বাংলাদেশের কোন হাসপাতালের রোগী পুলিশ পাহারা দেয়ার নজির নেই। শেবাচিম কর্তৃপক্ষ তাদের লোক দিয়ে করোনা ওয়ার্ড পাহারা দিতে পারে। প্রয়োজনে করোনা ওয়ার্ডের গেট তালাবদ্ধ করে রাখতে পারে। হাসপাতালের রোগী পাহারা দেয়ার দায়িত্ব পুলিশের নয়।
×