ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডিজিটাল আইন অব্যাহত রাখতে সংসদে বিল উত্থাপন

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৪ জুন ২০২০

ডিজিটাল আইন অব্যাহত রাখতে সংসদে বিল উত্থাপন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ রেখে জারি করা অধ্যাদেশটি আইন হিসেবে জারি করতে সংসদে বিল তোলা হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিচার অব্যাহত রাখতে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর চলমান সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে ডিজিটাল মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম চালিয়ে নিতে আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার বিল-২০২০ সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। মামলার বিচার বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত, আপীল শুনানি, সাক্ষ্য গ্রহণ, যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় প্রদানকালে পক্ষগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার উদ্দেশে এই বিল আনা হয়েছে মর্মে উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাই থাকুক না কেন, যে কোন আদালত এই আইনের ধারা ৫ এর অধীনে জারিকৃত প্রাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে অডিও ভিডিও বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থীগণ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে যে কোন মামলার বিচার বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা রায় প্রদান করতে পারবে বলে আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে। বিলের উদ্দেশে ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে- বিদ্যমান আইনের বিধান অনুযায়ী আদালতে মামলার পক্ষগণ বা তাদের নিযুক্ত বিজ্ঞ আইনজীবীগণের এবং সাক্ষীগণের সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। সমগ্র বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ মহামারী রোধকল্পে মাসাধিককাল ধরে কতিপয় ব্যতিক্রম ব্যতীত দেশের সকল আদালত ও সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ জনসমাগম হয় এরূপ কর্মকাÐ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বিলে আরও বলা হয়- বর্তমানে আদালতসহ সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়া হলেও কোভিড-১৯ মহামারী রোধকল্পে অধিকতর জনসমাগমকে নিরুসাহিত করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের সকল আদালতে বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুবিধার্থে ভিডিও কনফারেন্সিংসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী সকলপক্ষ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিতক্রমে মামলার বিচার বিচারিক অনুসন্ধান দরখাস্ত বা আপীল শুনানি বা সাক্ষ্যগ্রহণ বা যুক্তিতর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় প্রদানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। বিলটি পাস হলে বিদ্যমান সঙ্কটে ভিডিও কনফারেন্সিংসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী সকলপক্ষ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সাক্ষীগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করে বিচারকার্য পরিচালনা করা যাবে। বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ ৬ গুণ বৃদ্ধি \ বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ ৬ গুণ বাড়িয়ে সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার উত্থাপিত বিলে আইনের আওতায় আকাশপথে পরিবহনের সময় দুর্ঘটনায় যাত্রী আহত ও ব্যাগেজ নষ্ট বা হারিয়ে গেলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে ‘আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিয়ল কনভেনশন) বিল-২০২০’ উত্থাপন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। পরে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটিকে একমাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে এই ক্ষতিপূরণ এক কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে আকাশপথে পরিবহনের সময় যাত্রীর মৃত্যু বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে ক্ষতিপূরণ ছিল ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা। গত জানুয়ারি মাসে বিলে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কনভেনশনের আলোকে নতুন আইন না হওয়ায় কোন দুর্ঘটনার জন্য বর্তমানে প্রচলিত আইনে প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ খুবই কম এবং তা আদায়ের পদ্ধতি অস্পষ্ট, সময়সাপেক্ষ ও জটিল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আকাশে চলাচলকারী যাত্রীর অধিকার সুরক্ষা ও মালামাল পরিবহন নিশ্চিত করা, যাত্রীর মৃত্যুর কারণে পরিবারের ক্ষতিপূরণ প্রায় ৬ গুণ বৃদ্ধি এবং আদায় পদ্ধতি সহজ করতে আইনটি প্রয়োজন। এছাড়া আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে বিভিন্ন রাসায়নিকের পরিমাপ নিয়ে গবেষণায় সংবিধিবদ্ধ সংস্থা তৈরির জন্য অন্য একটি আইনের খসড়া জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে। নতুন এই আইনের অধীনে গবেষণাগার হলে রাসায়নিক পরীক্ষা করতে বিদেশে যেতে হবে না, বরং অন্য দেশ এখন থেকে রাসায়নিক পরীক্ষা করাতে পারবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্ট বিল-২০২০ সংসদে তোলেন। বিলটি পরীক্ষা করে রিপোর্ট উত্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। আরও দুটি বিল উত্থাপন \ এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০২০’, এবং ‘হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০২০’ নামে দুটি বিল উত্থাপন করেছেন। বিল দুটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। কমিটিকে একমাসের মধ্যে সংসদে রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়েছে।
×