ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংক্রমণ ঠেকাতে না পারলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে- শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের আগামী এক মাসে আরও এক লাখ শনাক্ত হবে এবার পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সফল না হলে প্রকৃতির ওপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া কোন পথ থাকবে না

কী অপেক্ষা করছে সামনে ॥ করোনা

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২৩ জুন ২০২০

কী অপেক্ষা করছে সামনে ॥ করোনা

বিভাষ বাড়ৈ ॥ করোনা মোকাবেলায় নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সিঙ্গাপুরভিত্তিক এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাস আশা জাগিয়েছিল উদ্বেগে থাকা দেশের মানুষের মনে। ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এ্যান্ড ডিজাইনের গবেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, মে মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ৯৯শতাংশ ও ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে শতভাগ করোনাই বাংলাদেশ থেকে নির্মূল হবে। তবে সে পূর্বাভাস মিথ্যা প্রমাণ করে তিন মাস পরও সংক্রমণ বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। প্রতিদিন শনাক্তের হার ও মৃত্যু বাড়ছে, যা পৃথিবীর খুব কম দেশেই ঘটেছে। ন্যূনতম টেস্ট নিয়েই ইতোমধ্যে দেশের অবস্থান সর্বোচ্চ শনাক্তের দেশের তালিকায় ১৭ নম্বরে। সোমবার নতুন শনাক্ত ও নতুন মৃত্যুর তালিকা দুদিক থেকেই বাংলাদেশ চলে এসেছে চার নম্বরে। আগামী এক মাসে শনাক্ত এক লাখ ১৫ হাজারের সঙ্গে যুক্ত হবে আরও এক লাখ। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংক্রমণ দমন করা না গেলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। দেশী-বিদেশী চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা একবাক্যেই বলছেন, তিন উপায়েই ভাইরাস মোকাবেলা সম্ভব। আক্রান্তদের চিকিৎসা, এই ভাইরাসের ট্রান্সমিশন বন্ধ করা এবং যারা আক্রান্ত হননি, তাদের রক্ষা করা। কাজগুলো এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে করতে না পারায় বাংলাদেশে সংক্রমণের মাত্রা কমছে না। আগামী কয়েকদিন ‘সর্বশেষ সময়’ উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গত তিন মাসের মতো আগামীতেও করোনা মোকাবেলায় আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে কঠোর পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সফল না হলে প্রকৃতির ওপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষার সঙ্কটের কারণেই মূলত কোন ধরনের সঠিক ধারণা করা সম্ভব হচ্ছে না। এই মুহূর্তে দেশে করোনা রোগীর সঠিক সংখ্যা জানা না গেলে ভবিষ্যতের বিষয়ে ভাল ধারণা করা কখনই সম্ভব হবে না। এ কারণে যে পরিমাণন করোনা টেস্ট হচ্ছে তার ফলের ওপর ভিত্তি করেই ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করছেন দেশী- বিদেশী বিশেষজ্ঞরা। আগামী এক মাসে করোনা-চিত্রটা কেমন হতে পারে বাংলাদেশে? এমন প্রশ্নের উত্তরে গত কয়েকদিনের চিত্র ও বিশে^র অন্যান্য দেশের চিত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চিত্রের তুলনা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আক্রান্তের নিরিখে বিশ্বে এখন ১৭ নম্বরে বাংলাদেশ। অঙ্ক বলছে, এই হারে সংক্রমিত হতে থাকলে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই তালিকার আরও সামনের সারিতে চলে আসবে। সেদিক থেকে সামনে আসা বেশ শঙ্কার। যদিও এসব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, চিকিৎসা নিশ্চিত করাসহ নানা ফ্যাক্টর সংক্রমণ ঠেকানোর হাতিয়ার বড় বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু করোনার এই সময়ে সঠিক সংখ্যাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সঠিক তথ্য না থাকায় দেশী-বিদেশী নানা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাবের দিকেই তাকাতে হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে করোনায় দেশে আরও কত মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করতে পারেন? তা নিয়ে ন্যূনতম টেস্টের ওপর ভিত্তি করেই নতুন করে একটি পর্যালোচনা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। জনস্বাস্থ্যবিদদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির ওই পর্যালোচনায় দেখা যায়, সংক্রমণের চলমান উর্ধমুখী ধারা আগামী এক মাসের বেশি সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এই সময়ে আরও এক লাখ ২৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে গিয়ে সংক্রমণের মাত্রা নিম্নমুখী হতে শুরু করবে। বর্তমানে মৃত্যুহার রয়েছে ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তা বেড়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওই কমিটি প্রধান অধ্যাপক ডাঃ শাহ মনির সামনের সময়ের কথা তুলে ধরে বলেছেন, আগামী জুলাই মাসজুড়ে সংক্রমণের এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। এই সময়ে আরও এক লাখ ১৫ হাজারের মতো মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবেন। আগস্ট মাসের শুরুতে সংক্রমণ নিম্নমুখী হতে শুরু করবে। এভাবে ধাপে ধাপে সংক্রমণের মাত্রা হ্রাস পেতে থাকবে। তবে এই পূর্বাভাসের বাস্তবতা কিংবা কার্যকারিতা নির্ভর করবে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর। সরকার জোনভিত্তিক যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে পারলে এই পূর্বাভাস হয়ত মিলবে। কিন্তু আগের মতো নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতি হলে আগামীদিনের জন্য দেয়া এ পূর্বাভাস কোন কাজে আসবে না। বরং তখন আগের মতো সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটিই আরও বাড়বে। সুতরাং বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যকর লকডাউন, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘরে অবস্থান করলেই কেবল সামনের দিনগুলোর পূর্বাভাস সঠিক হবে। আর এগুলো মেনে না চললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ বেনজির আহমেদ বলছিলেন, রোগী যদি বাড়ে তাহলে যতই চেষ্টা করা হোক, সীমিত সম্পদ, সীমিত স্বাস্থ্য অবকাঠামো, সীমিত লোকবল দিয়ে সেটা ম্যানেজ করা যাবে না। তাই প্রথম কাজ রোগী যেন না বাড়ে সে ব্যবস্থা নেয়া। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমত আমারা অনেক ভুল পদক্ষেপ নিয়েছি। লকডাউনকে আমরা একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপই বানিয়ে ফেলেছি। অথচ এখানে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। সেটা হয়নি। সময় অনেক চলে গেছে। ক্ষতি অনেক হয়েছে। তবে এখনও সময় সব শেষ হয়ে যায়নি। আক্রান্তদের চিকিৎসা, এই ভাইরাসের ট্রান্সমিশন বন্ধ করা এবং যারা আক্রান্ত হননি, তাদের রক্ষা করাই হবে প্রধান কাজ। আগামী কিছুদিন সর্বশেষ সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবার পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সফল না হলে প্রকৃতির ওপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকবে না। করোনা মোকাবেলায় গত তিন মাসের অব্যাহত ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশে করোনার পিক বা সর্বোচ্চ চূড়ায় যাওয়ার বিষয়টিও এখন আর অন্য দেশের মতো নেই বলে মনে করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে বিশে^র বহু দেশ যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষকদের করা তথ্যকে ব্যবহার করছে। [জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থঐষশ৪৩৭৩২১৬০বাংলাদেশে লকডাউনের কারণে করোনাভাইরাসে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সময় পিছিয়েছে বলে ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষকরা[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থঐষশ৪৩৭৩২১৬০। ‘ইম্পেরিয়াল কলেজ কোভিড-১৯ এ্যানালাইসিস টুলস’র দেয়া তথ্যানুসারে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা থাকবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। গত ১ জুন ইম্পেরিয়াল কলেজের কোভিড-১৯ বিশ্লেষণ টুলস নতুন করে বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ আক্রান্তের সময় হিসাব করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, আগামী অক্টোবরেই দেশে করোনা মহামারী সর্বোচ্চ শিখরে উঠে যাবে। সর্বশেষ ৭ জুন ইম্পেরিয়াল কলেজের পূর্ববর্তী ভবিষ্যত বাণী থেকে করোনায় মৃত্যু এবং সংক্রমণ কম হওয়ায় নতুন করে ধারণা হচ্ছে, পূববর্তী ঘোষণা থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কম হওয়ায় এবার ধরে নেয়া হয়েছে বাংলাদেশে আগামী কয়েক মাসে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কম হবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। কিন্তু এরপর চলতি মাসের শেষে প্রতিদিন করোনায় ৮২ জনের মৃত্যু হবে। যা অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির পূর্ববর্তী ভবিষ্যত বাণী থেকে অনেক কম। এর আগে গত এপ্রিল মাসের শেষদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরর জনস্বাস্থ্যবিদদের দেয়া পূর্বাভাসেরও কার্যকারিতা পাওয়া যায়নি। তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তারা দুই ধাপে পৃথক দুটি পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। আগের পূর্বাভাস কার্যকর না হওয়ার কারণ সম্পর্কে অধ্যাপক ডাঃ শাহ মনির বলেন, তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ওই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। ২৬ মার্চ সরকারী ছুটি ঘোষণার পর সব অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের ধারণা ছিল, ছুটির পর মানুষ ঘরে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ছুটি ঘোষণার পর হাজার হাজার মানুষ গ্রামে চলে যায়। মাঝখানে গার্মেন্টস মালিকরা ছুটি বাতিল করে শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনে। আবার তাদের ফেরত পাঠানো হয়। একই সঙ্গে ঈদের আগে সীমিত পরিসরে দোকানপাট খুলে দেয়া হয়। এমনকি ঈদের ছুটিতে হাজার হাজার মানুষ ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর থেকে গ্রামে আসা-যাওয়া করে। এর পর ৩১ মার্চ থেকে ছুটি বাতিল করা হয়। ঘটনাগুলোর সবই করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি উর্ধমুখী করার জন্য দায়ী। সুতরাং আগের পূর্বাভাস ঠিক থাকার কথা নয়। এখনও বলছি, জোনভিত্তিক লকডাউন দ্রুততম সময়ে কার্যকর করা গেলে বর্তমানে যে পূর্বাভাস দিয়েছি তা মোটামুটি ঠিক থাকবে। কিন্তু কার্যকর লকডাউন, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষিত থাকা না গেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল গত ৮ মার্চ। সেই থেকে ১০৩ দিনে এই ভাইরাসে সংক্রমিতদের শনাক্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায়। প্রতিবেশী ভারতে শনাক্তকৃত আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায় ১০৯ দিনের মাথায়। দেখা গেছে, বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর প্রথম কয়েকদিন দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল এক অঙ্কের ঘরে। পরে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শনাক্তের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়তে থাকে। প্রথম শনাক্ত হওয়ার প্রায় এক মাসের মাথায় ৯ এপ্রিল একদিনে শতাধিক ব্যক্তি করোনাভাইরাস বহন করছেন বলে শনাক্ত হন। তারও এক মাসের মাথায় গত ১১ মে একদিনে শনাক্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়। এভাবে শনাক্তের মোট সংখ্যা মোট ৫০ হাজার ছাড়ায় ২ জুন। বাকি ৫০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে শেষের ১৬ দিনে। এদিকে সর্বশেষ একমাস প্রতিদিন শানাক্তের হার ছিল ২০ শতাংশের ওপর। সর্বশেষ গত সাত দিনের হিসাবেও দেখা যায়Ñ ১৬ জুন ২২ দশমিক ৪৪, ১৭ জুন ২২ দশমিক ৮৭, ১৮ জুন ২৩ দশমিক ৩৯, ১৯ জুন ২১ দশমিক শূন্য ৯, ২০ জুন ২৩ দশমিক শূন্য ৯, ২১ জুন ১৭ দশমিক ৯২ এবং সোমবার আক্রান্ত হয়েছে ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আক্রান্তের তিন মাসের মাথায় এসেও এমন আক্রান্তের হার পৃথিবীর দু/একটি ছাড়া কোন দেশে দেখা যায়নি। অথচ তিন মাসের মাথায়ও করোনা টেস্ট করাই বড় চ্যালেঞ্জ। মোট আক্রান্ত দেশের তালিকায় ১৭ নম্বরে চলে এলেও এই মুহূর্তে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে টেস্টে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭ নম্বরে। এশিয়া তো বটেই পৃথিবীতে এক্ষেত্রে অবস্থান একদম তলানিতে। টেস্টের অবস্থান্ নিয়ে বাংলাদেশ সফরত চীনা চিকিৎসকরাও ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ যেখানে প্রতি ১০ লাখ মানুষে টেস্ট করছে তিন হাজার ৪৩১ জন সেখানে তালিকায় এক নম্বরে থাকা মোনাকো করেছে চার লাখ ১২ হাজার ৮৯৭ জনের। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মোট টেস্ট হয়েছে সর্বোচ্চ দুই কোটি ৮৪ লাখ ৯২ হাজার, দ্বিতীয় রাশিয়া এক কোটি ৭২ লাখ, তৃতীয় যুক্তরাজ্য ৭৮ লাখ ৯০ হাজার, চতুর্থ ভারত ৭০ লাখ ৫০ হাজার। এ চারটির প্রতিটিতেই প্রতি ২৪ ঘণ্টায় টেস্ট হচ্ছে দেড় লাখের বেশি মানুষের। আর আক্রান্তে ১৭ নম্বরে থাকা বাংলাদেশে টেস্ট হয়েছে ছয় লাখ ৩০ হাজার ৭১৯ জন। সংক্রমণের তৃতীয় মাসে শনাক্তের হার এবং মৃত্যু দুটোই বাড়ছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত মোট এক লাখ ১৫ হাজার ৭৮৬ জন। মারা গেছেন এক হাজার পাঁচশ’ দুজন। সংক্রমণের প্রথম মাসে অর্থাৎ মার্চ মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছিল ২১৮ জন। পরের মাসে শনাক্ত হয় ১৩ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু তৃতীয় মাসে প্রায় এক লাখ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা অবশ্য এখনও দাবি করছেন, সংক্রমণ বাড়ার এই ধারা লম্বা সময় ধরে চলতে পারে, তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু এখনও অন্যান্য দেশের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে ব্যাপক সংখ্যায় বাড়ছে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুনশি বলেছেন, এখন সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা বলা কঠিন। এই তিন মাসে এখন যদি আমরা ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের চিত্র দেখি, এই তিনটি দেশেই কিন্তু সংক্রমণ উর্ধমুখী। কিন্তু অন্যান্য দেশ যেমন ইউরোপে কিন্তু এখন সংক্রমণের মাত্রা নিচের দিকে চলে এসেছে। এবং সেখানে তা তিন মাসের মধ্যেই সম্ভব হয়েছে। কিন্তু আমাদের সংক্রমণ এখন উর্ধমুখী। এই অবস্থাটা কিন্তু অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বিপরীত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক এবং খ্যাতিসম্পন্ন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেছেন, আপনা আপনি এভাবে করোনা কমবে না। করোনা সংক্রমণ কমানোর জন্য প্রয়োজন সম্পূর্ণ লকডাউন। অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য যদি আমরা সারাদেশে একটি কঠিন লকডাউন না করি তাহলে করোনা সঙ্কট বাড়তেই থাকবে। এদেশে করোনা সংক্রমণের পিক সিজন খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুধু ১৬ কোটি লোক সংক্রমিত হওয়ার পরই সংক্রমণ কমবে। তার মতে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উপেক্ষা করার পরিণাম ভয়াবহ হবে। করোনা মোকাবেলার কর্মকৌশল, পদ্ধতি এবং উপায় নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করা উচিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের, আমলাদের নয়। আমলারা সেটা শুধু মাঠে বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু এখন আমি লক্ষ্য করছি, আমলারাই করোনা মোকাবেলার সকল সিদ্ধান্ত এবং পদ্ধতি গ্রহণ করছে। এটা কখনই কাম্য হতে পারে না। ডাঃ দ্বীন মোহাম্মদ মনে করেন, আমাদের হাতের সময় দ্রুত ফুড়িয়ে যাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা যদি লকডাউন করতে না পারি তাহলে সামনে আমাদের জন্য এক ভয়ঙ্কর খারাপ সময় অপেক্ষা করছে।
×